ছাত্র আন্দোলনে তাঁর ‘জীবন বিপন্ন’ বলে পুলিশ ডেকে ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে নিরাপদে বেরিয়ে এসেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সেই থেকে এখনও অফিসমুখো হননি। সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারের মতো অন্য কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য যাচ্ছেন। কিন্তু ‘উপযুক্ত নিরাপত্তা’ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন না বলে রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানিয়েছেন অভিজিৎবাবু। রাজভবন তা পাঠিয়ে দিয়েছে নবান্নে।
সরকারি সূত্র বলছে, রাজভবনে আর্জি জানিয়েই থেমে যাননি অভিজিৎবাবু। উচ্চশিক্ষা দফতরেও একই আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখান থেকেও খুব একটা সদর্থক জবাব না মেলায় শেষ পর্যন্ত এ দিন নবান্নের দ্বারস্থ হন উপাচার্য। বুধবার স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে মিনিট দশেক কথা হয়। সূত্রের খবর, রাজ্যপালের কাছে তিনি যে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়েছেন, তা নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করছে, মূলত সেটা খোঁজ নিতেই নবান্নে গিয়েছিলেন অভিজিৎবাবু। কিন্তু সেখানেও তাঁর আর্জি কার্যত মান্যতা পায়নি বলেই নবান্ন সূত্রের খবর।
এ দিন নবান্ন থেকে বেরিয়ে অভিজিৎবাবু সরাসরি চলে যান হাইকোর্টে। সেখানে নিজেই দাবি করেন, নিরাপত্তার কথা বলতেই এ দিন প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “নিরাপত্তার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর সরাসরি সিদ্ধান্ত নেয় না। পুলিশ যদি মনে করে তারা নিরাপত্তা দিতে পারে।” আর লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেছেন, “উপাচার্য চাইলে নিরাপত্তা তো দিতেই হবে। হাইকোর্টও জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পুলিশ ক্যাম্প থাকবে। উপাচার্য কাজে যোগ দিতে গেলে যদি বাধা পান, তা হলে সেখানকার পুলিশই তাঁকে সাহ্যয্য করবে।”
আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকলেও তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে, এমন কথা তাঁরা বলছেন না। বরং বিষয়টি হাইকোর্টে চলে যাওয়ার পরে ছাত্ররা কিছুটা রক্ষণাত্মক থাকার পক্ষপাতী। সেই কারণে তারা লালবাজার অভিযানও স্থগিত রেখেছেন। প্রশাসনিক মহলেরও একাংশের মতে, ছাত্ররা তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারলে উপাচার্যই বা তাঁর কর্মস্থলে যেতে পারবেন না কেন? অহেতুক আশঙ্কা সরিয়ে রেখে উপাচার্যেরও নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করেন প্রশাসনিক কর্তাদের ওই অংশ।
একই মত উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীরও। পুলিশি পাহারায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া যে শোভন নয়, তা মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী। বরং ছাত্রছাত্রীদের মন জয় করেই প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “পড়ুয়ারা যদি ছাত্রোচিত আচরণ করে তা হলে পুলিশের দরকার কী? রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ ও কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন শুরু করার জন্য প্রশাসন ও ছাত্র উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। গোলমাল না হলে পুলিশ কেন যাবে?” কিন্তু উপাচার্য তো নিরাপত্তা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান? শিক্ষামন্ত্রী বলেন,“এ ব্যাপারে সরকার কোনও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শুনিনি। রাজ্যপাল আগেই বলেছিলেন, এখন আদালতের রায়ের পর ছাত্রদেরও স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে এগিয়ে আসতে হবে।”