দীপঙ্কর দাস
যুবক বলেন, ‘‘বাবা ও মা-ই ছিল আমার সব চেয়ে বড় বন্ধু। প্রতি বছর পুজোয় মোটর ভ্যানো বা টোটো ভাড়া করে আমরা তিন জন ঠাকুর দেখতে যেতাম। পুজোর চারদিন মা নানা রকম রান্না করত।’’
জোর করে কান্না চাপেন তিনি। আবার বলেন, ‘‘আমার জীবনে আর কোনও পুজো নেই। কারণ, আমার ঠাকুর দেখার বন্ধুরাই নেই। ঠাকুরই আমার বন্ধুদের কেড়ে নিয়েছেন। কাকা বেশ কয়েক বার আমাকে বাড়িতে যেতে বলেছে। আমি যাইনি।’’
দীপঙ্কর দাস। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন, ১৩ মে কাকদ্বীপের বুধাখালির বাড়ি থেকে তাঁর বাবা-মা, সিপিএম নেতা দেবপ্রসাদ দাস ও স্ত্রী ঊষারানির আধপোড়া দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘটনার পর থেকে দীপঙ্কর কলকাতায়। এ বছরই কাকদ্বীপ কলেজ থেকে ইতিহাসে স্নাতক হয়েছেন তিনি।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি ‘কেটারিং’এ কাজ করতাম। রাত ১২টা নাগাদ সাইকেলে বাড়ির সামনে এসে দেখি, দাউ দাউ করে জ্বলছে আমাদের বাড়ি। আর বাবা-মা জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে। আশপাশের বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করি। পুকুর থেকে জল নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। আগুন নিভলেও বাবা-মা আমার চলে গেল। আমি এখন বন্ধুহীন। পুজোর সময় বাড়ি থেকেই বেরবো না।’’
দেবপ্রসাদদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারা সিপিএমের কর্মী বলে পরিচিত। মাথা নিচু করে দীপঙ্কর বলেন, ‘‘যারা আমাদের বাড়িতে আসত, মায়ের হাতে তৈরি খাবার খেত, তারাই আমার বাবা-মাকে পুড়িয়ে মারল? ভাবলেই শরীর কাঁপতে থাকে।’’
দীপঙ্করের কাকা শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘ভাইপো আমার ছেলের মতো। ওই ঘটনার পর আমারও কাজে মন বসে না। এখন পানের বরজে কাজ করি। ভাইপোকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ফোন করি। কয়েক দিন আগে বললাম, পুজো এসেছে।
নতুন জামা নিয়ে তোর কাছে যাব। উত্তরে ছেলে বলে, আমার জীবনে আর কোনও পুজো নেই কাকা। তোমাকে আসতে হবে না।’’ বছর দশেক আগে দীপঙ্করের দিদি প্রিয়াঙ্কার বিয়ে হয়েছে, থাকেন কাকদ্বীপেই। দীপঙ্কর জানালেন, দিদিও তাঁকে পুজোর সময় যেতে বলেছিলেন। তবে তিনি যাবেন না।
কলকাতায় দীপঙ্করের থাকা-খাওয়ার খরচ কোথা থেকে আসছে? সব্যসাচীবাবু বলেন, ‘‘অনেকে সাহায্য করছেন। তবে তাঁরা নিজেদের নাম জানাতে নারাজ। দীপঙ্কর ল’ এন্ট্রান্সের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক সময় আমার সঙ্গে কোর্টেও যাচ্ছে। আমরা সকলে ওর ইচ্ছেপূরণের চেষ্টা করছি।’’
আর দীপঙ্কর বলছেন, ‘‘আমার বন্ধুদের ফিরে পাব না কোনও দিন। তবে আইনের পথে লড়াই করে বিচার হয়তো পেতে পারি। তাই আমার এখন একটাই পুজো— এন্ট্রাসে পাশ করে আইন নিয়ে পড়াশোনা করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy