Advertisement
E-Paper

‘বার বার উস্কানিমূলক মন্তব্য’! রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের কল্যাণের, কোন কথায় আপত্তি

কল্যাণ জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। হেয়ার স্ট্রিট থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ১৭:৪৯
(বাঁ দিকে) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগ তুলেছেন তিনি। কোথায় কখন এই ধরনের মন্তব্য করেছেন, তা-ও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দিয়েছেন। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস)-র সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছেন কল্যাণ। গত কয়েক দিনে রাজভবনের সঙ্গে কল্যাণের বিবাদ চরমে পৌঁছেছে। মঙ্গলবারই তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করেছে রাজভবন। বিরূপ মন্তব্যের জেরে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে। তার পরের দিনই পাল্টা থানায় গেলেন কল্যাণ।

কল্যাণ জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। ১৫ নভেম্বর রাজভবনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে তিনি বলেছেন, ‘‘নির্বাচন প্রক্রিয়াকে হিংসা ও দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। হিংসা আর দুর্নীতিকে সমূলে উৎপাটিত করতে না-পারলে এই রাজ্য সত্যিকারের মর্যাদা ফিরে পাবে না। সুষ্ঠু অবাধ ভোটও হবে না। পশ্চিমবঙ্গে বুলেট নয়, ব্যালটে ভোট হওয়া দরকার। এটা অত্যন্ত জরুরি।’’ কল্যাণের বক্তব্য, ‘‘এই ধরনের মন্তব্য করে ইচ্ছাকৃত ভাবে রাজ্যের ভোটপ্রক্রিয়ায় নাক গলাতে চাইছেন রাজ্যপাল। তা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’’

এর পর গত ১৭ নভেম্বর একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া রাজ্যপালের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ অভিযোগপত্রে তুলে ধরেছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ। সেখানে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে মানুষের রক্তে হোলি খেলার ঐতিহ্য রয়েছে। আমি হিংসামুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তুলতে চাই, বিশেষত ভোটের সময়।’’ এই মন্তব্যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে হিন্দুর ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তুলেছেন কল্যাণ। দাবি, হোলি বা দোলপূর্ণিমার উৎসবকে অপমান করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে উস্কানি দেওয়া হয়েছে এই মন্তব্যের মাধ্যমে।

গত ৮ অক্টোবর সংবাদমাধ্যমে দেওয়া রাজ্যপালের একটি বিবৃতিও তুলে ধরেছেন কল্যাণ। সেখানে রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী পুলিশই আইনশৃঙ্খলার গলা টিপে দিচ্ছে। পুলিশের একটি অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত, রাজনীতি দ্বারা চালিত। তারা অপরাধী।’’ কল্যাণের দাবি, রাজ্যপালের এই অভিযোগ ভুয়ো, সাজানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পুলিশের সম্মানহানি করা হয়েছে এই মন্তব্যে।

এ ছাড়া, ২০২৪ সালের ২ জুলাই রাজ্যপালের করা একটি মন্তব্যও তুলে ধরেছেন কল্যাণ। রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘শাসক নিজেই যখন নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে, তখন হিংসা চরমে পৌঁছোয়। পশ্চিমবঙ্গে রোজ খুনোখুনি হচ্ছে। এটা হওয়া উচিত নয়।’’ এই বক্তব্যকে ‘ভিত্তিহীন’ এবং ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন কল্যাণ। অভিযোগ, ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করতে পরিকল্পিত ভাবে এই মন্তব্য রাজ্যপাল করেছেন এবং তা সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মন্তব্যগুলির ইউটিউব লিঙ্কও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে দিয়েছেন তিনি।

রাজ্যপালের পাশাপাশি রাজভবনের উপসচিব সুমন পালের ভূমিকাও পুলিশকে খতিয়ে দেখার জন্য কল্যাণ অনুরোধ করেছেন। জানিয়েছেন, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৭৩ (১) ধারা এবং ১৭৩ (২) ধারায় পদক্ষেপ করা যাবে।

রাজভবনের সঙ্গে কল্যাণের বিবাদের সূত্রপাত শনিবার। ওই দিন ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনকে (এসআইআর) সমর্থন জানিয়ে রাজ্যপাল বিবৃতি দেন। তার পরই কল্যাণ দাবি করেন, বিজেপির অপরাধীদের রাজভবনে আশ্রয় দিয়েছেন রাজ্যপাল। তৃণমূলের কর্মীদের আঘাত করার জন্য রাজভবনে রাখা হয়েছে বোমা এবং বন্দুক। এই মন্তব্যের বিরোধিতা করে রবিবার সকালে বিবৃতি জারি করে রাজভবন। সোমবার উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় ফিরে রাজ্যপাল পুলিশের আধিকারিক, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্য, বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল এবং একটি স্নিফার ডগ-সহ নিরাপত্তাবাহিনীর একটি দলকে দিয়ে রাজভবন চত্বরে চিরুনি তল্লাশি চালান। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরও পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তল্লাশি শেষে রাজ্যপাল জানান, রাজভবনে আপত্তিকর বা সন্দেহজনক কিছুই মেলেনি। তাই অবিলম্বে কল্যাণ প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করুন। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পাল্টা পদক্ষেপ করলেন কল্যাণও।

Kalyan Banerjee Governor CV Ananda Bose Hare Street Police Station
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy