Advertisement
E-Paper

কপিলকৃষ্ণের দেহ আসতেই ডুকরে কান্না

ভিড়টা সমস্ত দিন অপেক্ষা করছিল ‘বড়বাবু’র জন্য। তাঁকে আনা হল বিশাল গাড়ির কনভয় নিয়ে। সারা দিন পেটে খিদে-তেষ্টা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়টা তখন আর চোখের জল সামলাতে পারল না। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মরদেহ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন অগণিত ভক্ত, সাধারণ মানুষ। সোমবার কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে মারা গিয়েছেন কপিল। একে তো তিনি সাংসদ। তার উপরে মতুয়া বাড়ির বড়ছেলে বলে কথা।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৯
সাংসদকে শ্রদ্ধার্ঘ্য তৃণমূল নেতৃত্বের। —নিজস্ব চিত্র।

সাংসদকে শ্রদ্ধার্ঘ্য তৃণমূল নেতৃত্বের। —নিজস্ব চিত্র।

ভিড়টা সমস্ত দিন অপেক্ষা করছিল ‘বড়বাবু’র জন্য।

তাঁকে আনা হল বিশাল গাড়ির কনভয় নিয়ে। সারা দিন পেটে খিদে-তেষ্টা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ভিড়টা তখন আর চোখের জল সামলাতে পারল না। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূল সাংসদ কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মরদেহ দেখে ডুকরে কেঁদে উঠলেন অগণিত ভক্ত, সাধারণ মানুষ।

সোমবার কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে মারা গিয়েছেন কপিল। একে তো তিনি সাংসদ। তার উপরে মতুয়া বাড়ির বড়ছেলে বলে কথা। হাজার খানেক পুলিশ, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স এ দিন দুপুরের পর থেকে ঘিরে ফেলে গোটা ঠাকুরবাড়ি। বাড়ির আশপাশে গার্ড রেল, বাঁশ লাগিয়ে ভিড় নিয়ন্ত্রণের আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল, পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী, এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সিভি মুরলিধরণ আসেন ঠাকুরবাড়িতে।

কপিলবাবুর মা তথা মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণিদেবীকে অবশ্য রাত পর্যন্ত বড়ছেলের মৃত্যুসংবাদ দেওয়া হয়নি। পঁচানব্বই বছরের বৃদ্ধাকে এ দিন আগলে রেখেছিলেন বাড়ির লোকজন। আর ছিলেন রবি হালদার নামে এক ঘনিষ্ঠ মতুয়া ভক্ত। রবিবাবু জানান, রাত ৮টার পরে বড়মাকে জানানো হয়, বড়বাবুর (এই নামেই মতুয়াদের মধ্যে পরিচিত ছিলেন কপিল) শরীরটা বেশ খারাপ। হয় তো কিছু আন্দাজ করেছিল মায়ের মন। সারা দিন থেকে থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। কপিলবাবুর ভাই মঞ্জুলকৃষ্ণ দেহ আনার পরে নিজে ঘরে গিয়ে খবর দেন মাকে। পরিবার সূত্রে জানানো হয়, সেই খবর শুনেই অসুস্থ বোধ করতে থাকেন বড়মা। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানান, বড়মার স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিত্‌সক পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনিই সব দেখাশোনা করবেন।


প্রয়াত কপিলকৃষ্ণের মরদেহে মাল্যদান করছেন এক বৃদ্ধা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বিধান মণ্ডল নামে এক মতুয়া ভক্ত দুপুর থেকেই অপেক্ষা করছিলেন ঠাকুরবাড়িতে। তিনি বললেন, “এক বার বড়বাবুর সঙ্গে মহারাষ্ট্রে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন উনি। যাওয়ার পথে সকলকে সমান ভাগ দিয়ে খাওয়া-দাওয়া সারেন।” বললেন, “দেখা হলেই জানতে চাইতেন, কেমন আছি। সে সব দিন আর রইল না।” বলতে বলতে কান্না ভেঙে পড়লেন বৃদ্ধ। গাইঘাটার রাজাপুর কলোনি থেকে এসেছিলেন বাবুরাম বিশ্বাস। কপিলবাবু সম্পর্কে বললেন, “ছোট থেকে ওঁকে চিনি। সকলের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতেন।”

মতুয়াদের একটি সূত্র জানাল, গত ২৭ সেপ্টেম্বর মতুয়াদের নিয়ে শেষ বৈঠক করেছিলেন কপিলবাবু। তার পর থেকে শরীর খারাপ হতে শুরু করে। ভর্তি হন হাসপাতালে। তাঁর স্ত্রী মমতাবালা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “সোমবার সকালেও সুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে খাওয়া-দাওয়া, স্নান সারেন। তারপর কী যে হয়ে গেল!”

ঠাকুরবাড়িতে হরিচাঁদ মন্দিরের সামনে নাটমন্দিরে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করা হয়েছিল। সেখানেই অন্তিমশয্যার আয়োজন করা হয়। প্রয়াত সাংসদের দেহ এনে রাখা হয় সেখানে। তৃণমূলের পতাকায় মোড়া ছিল দেহ। বুকের উপরে মতুয়াদের ধর্মীয় বই রাখা ছিল। সেখানেই সকলে মাল্যদান করেন। কপিলবাবুর শেষকৃত্য কবে হবে, তা পারিবারিক ভাবে পরে জানানো হবে। সোমবার রাতভর দেহের সামনে প্রার্থনা সঙ্গীত হবে বলে পরিবার সূত্রের খবর।


দেহের সামনে বসে ভক্তেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

এ দিন কলকাতা থেকে মরদেহের সঙ্গে এসেছিলেন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকেরা। তাঁরা মঙ্গলবার পর্যন্ত ঠাকুরবাড়িতেই থেকে যাবেন বলে জানালেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। মুকুলবাবুকে এক সময়ে দেখা গেল, মঞ্জুলবাবুর বড় ছেলে সুব্রতর সঙ্গে মতুয়া মহাসঙ্ঘের কার্যালয়ের দোতলার একটি ঘরে একান্তে কথা বলছেন।

মঞ্জুল বলেন, “এ আমাদের বংশের বড় দুঃখজনক ঘটনা। মতুয়াদেরও বড় দুঃখের দিন। তবে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদের আশীর্বাদ নিয়ে আমাকেই এখন সব সামলাতে হবে।”

matua kapilkrishna thakur tmc mp simanta moitra latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy