Advertisement
E-Paper

ভরসা-ভয়ের দোলাচলে ভূস্বর্গ ভ্রমণ

পুজোর বাকি আর মাত্র মাস তিনেক। পুজো মানেই ছুটি, যে ছুটির মেজাজে সুড়সুড় করে ওঠে বাঙালির পায়ের তলার সর্ষেদানারা। আর ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিদের স্বপ্নের পর্যটনকেন্দ্রগুলির তালিকায় প্রথম সারিতেই আছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০৩:২২

পুজোর বাকি আর মাত্র মাস তিনেক। পুজো মানেই ছুটি, যে ছুটির মেজাজে সুড়সুড় করে ওঠে বাঙালির পায়ের তলার সর্ষেদানারা। আর ভ্রমণপ্রিয় বাঙালিদের স্বপ্নের পর্যটনকেন্দ্রগুলির তালিকায় প্রথম সারিতেই আছে ভূস্বর্গ কাশ্মীর।

তবে একটানা সংঘর্ষ আর অশান্তির জেরে পর্যটক টানার ক্ষেত্রে কি একটু পিছিয়ে পড়ছে উপত্যকা? কী বলছে এ বছরের পুজো-পর্যটনের পরিসংখ্যান?

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার জেরে কাশ্মীরের পরিস্থিতি যে স্বাভাবিক নয়, তা মেনে নিচ্ছেন কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের অধিকর্তারাও। তবে একই সঙ্গে তাঁরা নিশ্চিত, এই উত্তাপের কোনও আঁচ পর্যটনে পড়বে না। ধর্মতলার অফিসে বসে জম্মু-কাশ্মীর পর্যটন বিভাগের আঞ্চলিক প্রধান ওয়ানি আব্দুল এমনটাই দাবি করলেন। জানালেন, কাশ্মীরের গণ্ডগোল তো নতুন নয়। নয়ের দশক থেকেই নানা রকম আঘাতে ক্ষতবিক্ষত উপত্যকা। কিন্তু সব কিছুর পরেও জম্মু ও কাশ্মীরের অর্থনীতি মূলত দাঁড়িয়ে আছে এই পর্যটনের উপরেই। আর এটা খুব ভাল করে জানেন কাশ্মীরের মানুষও। তাই যতই অশান্তি হোক, পর্যটকদের নিরাপত্তাকে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় সেখানে।

এ বছরের সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসেও কাশ্মীরে বেড়াতে যাওয়ার খোঁজখবর চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। এবং প্রতি বারের মতোই বহু পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম অবস্থা তাঁদের। চলতি মাসের অমরনাথ যাত্রাতেও রয়েছেন বহু বাঙালি। তবে গত সপ্তাহের সেনা অভিযানে হিজবুল কমান্ডার বুরহানের মৃত্যুর ঘটনায় নিরাপত্তার গেরোয় জম্মুতে আটকে পড়েছেন বেশ কিছু তীর্থযাত্রী। তবে যাঁরা পহেলগাম পৌঁছে গিয়েছিলেন, তাঁদের অমরনাথ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘‘কাশ্মীরে গিয়ে যা-ই বিপদ আসুক, অসুবিধা হোক, সাহায্যের জন্য পাশে দাঁড়ান কিন্তু সেই স্থানীয় মানুষই,’’ হাসিমুখে বললেন ওয়ানি।

তবে এই ভরসায় পর্যটকদের নিয়ে যেতে মোটেই রাজি নয় কলকাতার অন্যতম বড় ভ্রমণ আয়োজক সংস্থাটি। সংস্থার মুখপাত্র আশিস বিশ্বাস সাফ বলে দিলেন, ‘‘শুধু পুজো নয়, এই বছর কোনও সময়েই কাশ্মীর ভ্রমণের আয়োজন করছি না আমরা।’’ এই রাজনৈতিক অশান্তির মধ্যে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই ঝুঁকি নিতে রাজি নন তাঁরা। অভিজ্ঞতা থেকে জানালেন, গত বছরেও কাশ্মীর ভ্রমণের আয়োজন করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু বন্‌ধ-হরতাল-কার্ফুতে বিধ্বস্ত কাশ্মীরে ঘোরার আনন্দের চেয়ে বিপদের আশঙ্কাতেই বেশি ভুগেছেন পর্যটকেরা। আর এখন তো পরিস্থিতি আরও খারাপ। তাই তাঁদের ভ্রমণের তালিকা থেকে এ বছরের মতো একেবারেই বাদ পড়েছে ভূস্বর্গ।

এই যুক্তির সঙ্গে অবশ্য সম্পূর্ণ একমত নয় শহরের অন্য ভ্রমণ আয়োজক সংস্থাগুলি। জওহরলাল নেহরু রোডের একটি সংস্থার তরফে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, পুজোর বুকিং এ বছরের মতো প্রায় শেষ। আর সেই তালিকায় কাশ্মীর ভ্রমণের চাহিদা কিন্তু মোটেই কম নয়। বাঙালিরা তো বটেই, বাংলাদেশের একটা বড় দলও তাঁদের সংস্থার তরফে কাশ্মীর ঘুরতে যাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক অশান্তিতে একটু উদ্বিগ্ন সকলেই। সংস্থার দফতরে ঘনঘন ফোন আসছে পরিস্থিতি জানতে চেয়ে। যদিও এখনও কোনও বুকিং বাতিল হয়নি বলেই জানালেন তিনি। গত সপ্তাহে তাঁর সংস্থার বেশ কিছু পর্যটক ছিলেন কাশ্মীরে। সমস্যা বাড়ার পরেই তাঁদের দ্রুত কলকাতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে সংস্থার তরফে।

অন্য একটি সংস্থার মুখপাত্র আশিস রাজের পর্যবেক্ষণ, গত দু’বছর কাশ্মীর ভ্রমণে একটু ভাটা পড়লেও, এ বছর কিন্তু ফের বেড়েছে চাহিদা। সাম্প্রতিক অশান্তির প্রভাব এখনও পড়েনি তাতে। তবে অক্টোবর পর্যন্ত পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তার উপরে নির্ভর করছে তাঁদের অবস্থান। দীর্ঘ ১৩ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আশিস জানাচ্ছেন, অশান্তি যা-ই হোক, চট করে সরাসরি বিপদ আসে না পর্যটকদের উপরে। কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় সমস্যার জন্য হয়তো ব্যাহত হয় ঘোরার আনন্দ, তবে তা তো যে কোনও জায়গাতেই হতে পারে।

‘ট্র্যাভেল এজেন্টস ফেডারেশন ইন্ডিয়া’র পূর্বাঞ্চলীয় শাখার চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবি জানাচ্ছেন, কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য কিছু বুকিং ইতিমধ্যেই করা হয়ে গিয়েছে। তবে যাঁরা বুক করবেন বলে ভাবছিলেন, তাঁরা কিন্তু পিছিয়ে আসছেন। কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য। কেউ আবার পরিকল্পনা বদলে ভ্রমণের মুখ ঘোরাচ্ছেন হিমাচল প্রদেশ বা লাদাখের দিকে।

আশঙ্কার আবহ ছায়া ফেলেছে বাঙালি পর্যটকদের উৎসাহেও। যেমন সুভাষগ্রামের বাসিন্দা বিশ্বকল্যাণ চৌধুরী জানালেন, তাঁরা ১৮ জনের একটি দল এ বছর পুজোয় কাশ্মীর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ট্রেন, হোটেল, গাড়ি— সব বুকিংই করা হয়ে গিয়েছে প্রায়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই কয়েক জন আপত্তি জানাচ্ছেন কাশ্মীর ভ্রমণে। তবু এখনই পরিকল্পনা বাতিল করেননি তাঁরা। তবে এই পরিস্থিতি যদি অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে, তা হলে কাশ্মীরের স্বপ্ন মুছে হয়তো পাড়ি জমাবেন হিমাচল প্রদেশেই।

সব মিলিয়ে এখনও পরিষ্কার নয়, এ বছর পুজোয় কত বাঙালির ভিড়ে মজবে উপত্যকা। তবে হুজুগপ্রিয় বাঙালির উৎসাহ আর আশঙ্কা— দু’টোই প্রায় সমান উত্তেজনায় ফোটে। সেই দৌড়ে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে উৎসাহই।

kashmir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy