Advertisement
E-Paper

ইউসুফ রোগা হয়েছে, মোবাইলে চোখ কৃষ্ণবাটীর

গ্রামের প্রায় সব মোড়েই জমেছে ছোট-ছোট জটলা। মোবাইলের স্ক্রিনে ছবির দিকে ঝুঁকে কেউ বলছেন, ‘‘বেশ রোগা হয়ে গিয়েছে।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘এত দিন কোথায়, কী করছিল, কে জানে!’’

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৩
ভেঙে পড়েছে শিমুলিয়ার মাদ্রাসা। — নিজস্ব চিত্র

ভেঙে পড়েছে শিমুলিয়ার মাদ্রাসা। — নিজস্ব চিত্র

গ্রামের প্রায় সব মোড়েই জমেছে ছোট-ছোট জটলা। মোবাইলের স্ক্রিনে ছবির দিকে ঝুঁকে কেউ বলছেন, ‘‘বেশ রোগা হয়ে গিয়েছে।’’ কেউ আবার বলছেন, ‘‘এত দিন কোথায়, কী করছিল, কে জানে!’’

মোবাইলে ইন্টারনেট ও টেলিভিশনের দৌলতে বর্ধমানের মঙ্গলকোটের কৃষ্ণবাটী গ্রামে সোমবার সকালেই বাসিন্দারা জেনে গিয়েছিলেন, প্রায় দু’বছর ফেরার থাকার পরে ধরা পড়েছে তাঁদের গ্রামের ইউসুফ শেখ। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত ইউসুফকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। ধরা পড়েছে আর এক অভিযুক্ত, মঙ্গলকোটেরই কুলসুনো গ্রামের আবুল কালাম। অসমের কাছাড়ের গুমড়া থেকে জাল নোটের একটি মামলায় ধরা পড়া জামাতুল মুজাহিদিন ( জেএমবি) জঙ্গি জবিরুল ইসলামকে জেরা করেই খোঁজ মিলেছে ইউসুফদের।

কৃষ্ণবাটী গ্রামের ইউসুফ পাশের শিমুলিয়া গ্রামে মেয়েদের একটি মাদ্রাসা চালাত। ২০১৪-র ২ অক্টোবর খাগড়াগড় বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা এই মাদ্রাসার খোঁজ পান। তাঁদের দাবি, জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো সেখানে। ঘটনার পরে মাদ্রাসার একটি ঘরে পুলিশ-ক্যাম্প বসানো হয়। সেই ঘরটি বাদে (ক্যাম্প এখনও চালু রয়েছে) মাদ্রাসার বাকি অংশ এখন ভগ্নপ্রায়। পড়ে গিয়েছে টিনের চালও।

কৃষ্ণবাটী গ্রামে হাইস্কুলের পাশেই দোতলা বাড়ি ইউসুফের। এ দিন সেখানে গিয়ে পরিবারের কারও দেখা মেলেনি। পড়শিরা জানান, ইউসুফের এক ভাই টেট পাশ করেছেন। সেই সংক্রান্ত কাজে কাটোয়া গিয়েছেন। আর এক ভাই চাষের কাজে বেরিয়েছেন। পাশেই মাটির দোতলা বাড়িতে থাকেন ইউসুফের বাবা-মা মহম্মদ হাফিজ ও মউসোনা বিবি। সেই বাড়ির দরজা-জানলা বন্ধ। তবে উঠোনে শুকোচ্ছিল জামাকাপড়।

পড়শিরা জানান, বৃদ্ধ দম্পতি কোথায় গিয়েছেন তা তাঁদের জানা নেই। তবে তাঁরা অসুস্থ। বড় ছেলে ইউসুফ নিখোঁজ থাকায় মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। শেখ কালুম, শেখ দিরাম, রফিক শেখরা দাবি করেন, ‘‘ইউসুফ খুব শান্তশিষ্ট, ধর্মপ্রাণ ছিল। সে কোনও খারাপ কাজে যুক্ত, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়!’’

বিস্ফোরণের পরেই স্ত্রী আয়েষাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়ে ইউসুফ। যার জমিতে মাদ্রাসাটি তৈরি হয়েছিল, সেই বুরহান শেখও উধাও হয়। আয়েষা বা বুরহান এখনও বেপাত্তা। ওই মাদ্রাসাতেই কাজ করত কুলসুনো গ্রামের কালাম। বিস্ফোরণের পরে সে-ও পালিয়েছিল। তার মা হাবিবা বিবি এ দিন বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কোথায় ছিল বলতে পারব না। কোনও খবরও শুনিনি।’’ একই দাবি বুরহানের পরিবারেরও।

ইউসুফের ধরা পড়ার খবরে মঙ্গলকোটে যদি কৌতূহল থাকে, জঙ্গি জবিরুল ধরা পড়ায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অসমের গুমড়ায়। জেএমবি-র জঙ্গি ওই এলাকাকে ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছিল কি না, নাশকতার কোনও ছক তার ছিল কি না, স্থানীয় কারা-কারা তার নেটওয়ার্কে জড়িত—এমনই সব প্রশ্ন ভাসছে কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিতে। কাছাড়ের পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহ জানান, কী মতলবে জবিরুল সেখানে ঘরভাড়া নিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

(সহ-প্রতিবেদন: উত্তম সাহা)

khagragarh case YUsuf
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy