Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Firhad Hakim

আমার বয়স হয়েছে, বাচ্চা ছেলেরা আসবে, সমাজের মাথা হবে, ফিরহাদ-কথায় অভিমান না বিদায়বার্তা

দু’দিন আগেই দলের ভিতরের চাপে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছিল মেয়র ফিরহাদকে। মাসের শুরুতে কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বাড়িয়েছিল পুরসভা। শুক্রবার তা প্রত্যাহার করে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়।

image of Firhd Hakim

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মুখে অবসরের সুর? ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ২০:৩৭
Share: Save:

কলকাতার রাস্তায় পার্কিং ফি বৃদ্ধির ঘোষণা করেও তা প্রত্যাহার করার পর ৪৮ ঘণ্টা কেটেছে কি কাটেনি, শহরের মেয়রের গলায় ধরা পড়ল ইঙ্গিতবাহী সুর। দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় এক অনুষ্ঠানে তাঁর নিজের ‘বয়স হয়ে যাওয়া’ এবং ‘বাচ্চা ছেলেদের’ হাতে ভবিষ্যতের প্রসঙ্গ তুলে ফিরহাদ হাকিম উঠিয়ে দিলেন কিছু প্রশ্ন। এটি কি তাঁর সরে যাওয়ার ইঙ্গিত? না কি তাঁর দলের উপর, দলের নবীন নেতৃত্বের উপর অভিমানের বহিঃপ্রকাশ?

রবিবার চেতলায় নিজের ওয়ার্ডে এক স্বাস্থ্যশিবিরে হাজির হয়েছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র। সেখানে নিজের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘‘২৫ বছর ধরে আমি কাউন্সিলর, আপনাদের সেবা করেছি। আমার বয়স হয়ে গিয়েছে। মানুষ আসবে, মানুষ যাবে, উন্নয়ন থাকবে। আজকের বাচ্চা ছেলেরা সমাজের মাথা হবে, সমাজের উন্নয়ন করবে।’’ তাঁর এমন বক্তৃতার পরেই প্রশ্ন উঠছে, কেন হঠাৎ এমন এক সময়েই এ সব কথা বলতে গেলেন ফিরহাদ?

দু’দিন আগেই দলের ভিতরকার চাপে নিজের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছিল মেয়র ফিরহাদকে। এ মাসের শুরুতে কলকাতা শহরের রাস্তায় পার্কিং ফি বাড়িয়েছিল পুরসভা। গত শুক্রবার হঠাৎই সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি না নিয়ে এই ফি বাড়ানো হয়েছে। ফিরহাদ এর প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বললে পার্কিং ফি বাড়ানোর নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেব। তবে এটা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে প্রকাশ্যে না বলে দলের ভিতরে বললেও হত!’’ শুক্রবার সন্ধ্যাতেই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যদিও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনেক আগেই টুইট করে তৃণমূল নেতৃত্ব কলকাতা পুরসভাকে পার্কিং ফি প্রত্যাহারের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে দেয়। গোটা ব্যাপারটি ফিরহাদের জন্য সম্মানজনক হয়নি, এমনটাই মনে করছে দলে তাঁর ঘনিষ্ঠমহল।

অভিমানবশতই কি শুক্রবারের বিতর্কের পর শনিবার আর কলকাতা পুরসভায় যাননি মেয়র? এমন প্রশ্নও উঠেছে। ওই দিন নিজের ৮২ নম্বর ওয়ার্ডে চেতলার রাখী সঙ্ঘে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সেখানে তাঁকে পার্কিং ফি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল কি না প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। কোনও জবাব না দিয়েই শিবির ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু শেষমেশ সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন বদল করায় কথা বলতে সম্মত হন ফিরহাদ।

ফিরহাদের বয়স এখন প্রায় ৬৪। এই বয়সে রাজনীতি থেকে অবসরের ঘটনা সাধারণত এ দেশে দেখা যায় না। দেশের প্রধানমন্ত্রীর বয়স ৭৩। মুখ্যমন্ত্রী ৭০-এর দিকে এগোচ্ছেন। এ হেন দেশে ৬৪-র ফিরহাদের মুখে ‘আমার বয়স হয়ে গিয়েছে’ শুনে অনেকেরই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। বরং সাম্প্রতিক ঘটনাবলির সঙ্গে ‘ছোট ছেলেদের’ জায়গা ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার সম্পর্ক দেখছেন অনেকেই।

২০০০ সালে প্রথম বার কাউন্সিলর হওয়ার পর তৃণমূলের রাজনীতিতে আর ফিরে তাকাতে হয়নি ফিরহাদকে। ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে কাউন্সিলর হন। ২০০৫ সালে আবার কাউন্সিলর। ২০০৯ সালে আলিপুরের বিধায়ক পদ ছেড়ে লোকসভা ভোটে লড়ে কৃষ্ণনগরের সাংসদ হন অধুনা প্রয়াত অভিনেতা তাপস পাল। ওই বছরই নভেম্বর মাসে তাঁর ছেড়ে যাওয়া বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে জেতেন ফিরহাদ। ২০১০ সালে ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জেতার পর কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ করা হয়েছিল তাঁকে। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে আলিপুর বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসে কারণে বিলুপ্ত হয়। নবগঠিত কলকাতা বন্দর আসনে প্রার্থী হন তিনি। সেই আসন থেকে পর পর তিনবার জিতেছেন ফিরহাদ। সেই ২০১১ সাল থেকেই রাজ্য মন্ত্রিসভার তাঁর স্থান পাকা। ২০১১ সালে মন্ত্রী হওয়ার পর কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন ফিরহাদ। পুর ও নগরোন্নয়ন তো বটেই, নানা সময়ে পরিবহণ, আবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরও সামলেছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে শোভন চট্টোপাধ্যায় কলকাতার মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দিলে, সেই সংকটজনক মুহূর্তে তৃণমূল নেত্রী ভরসা করেন ফিরহাদেই। ওই সময় তড়িঘড়ি বিধানসভায় বিল এনে আইন বদল করে ‘ববি’-কেই কলকাতার মেয়র করেন মমতা।

২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূল নেতৃত্ব ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি কার্যকর করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরহাদকে মন্ত্রী, মেয়র কোনও পদ ছাড়তে হয়নি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কলকাতা পুরসভার ভোটে বিরাট জয় পায় তৃণমূল। ফের মেয়র হন ফিরহাদই। যে সময় তৃণমূলে পর্যবেক্ষক পদ ছিল, সেই সময় হাওড়া, হুগলি, বীরভূমের মতো জেলা সংগঠনের দেখভালের দায়িত্ব তাঁকেই দিয়েছিলেন মমতা। এ বছর নতুন করে ওই তিন জেলা সংগঠনের দায়িত্ব ফিরহাদকেই দিয়েছেন দলনেত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Firhad Hakim TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE