ঘটনার সাড়ে চোদ্দো বছর বাদে সে ধরা পড়েছে। এত কাল পরিচয় ভাঁড়িয়ে দিব্যি লুকিয়ে ছিল দেশেই। কিন্তু আমেরিকান সেন্টারের সামনে জঙ্গি হামলায় অন্যতম অভিযুক্ত সেই হাসান ইমাম ওরফে হাসনু এখন জানাচ্ছে, নেহাত কপাল জোরেই এখনও বেঁচে রয়েছে সে।
তদন্তকারীদের হাসনু জানিয়েছে, হানাদারির দু’দিন পরে হাজারিবাগ ডেরা ছেড়ে সে নালন্দায় নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। নচেৎ হাজারিবাগের আস্তানায় দিল্লি পুলিশের অভিযানে খতম-তালিকায় তারও নাম উঠত। যেমন উঠেছিল তার দুই সঙ্গী জাহিদ ও সেলিমের। ‘মারা না-পড়লেও ধরা তো পড়তামই,’ গোয়েন্দাদের বলেছে হাসনু। তার ঠিকানা আপাতত প্রেসিডেন্সি জেল।
১ অক্টোবর বিহারের ঔরঙ্গাবাদে হাসনুকে পাকড়াও করে গুজরাত পুলিশ। ৩ অক্টোবর রাতে তাকে কলকাতায় আনা হয়। ফেরার অভিযুক্তটির বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশ আগেই চার্জশিট পেশ করেছিল। নভেম্বরের শেষে নতুন করে চার্জশিট পেশ হয়েছে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে। হাসনুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আগে আনা হয়েছিল, নতুন চার্জশিটে সেগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। চার্জশিটের আগে শনাক্তকরণের জন্য হাসনুকে টিআই প্যারেডেও দাঁড় করানো হয়। তিলজলা লেনের কয়েক জন বাসিন্দা সেখানে তাকে শনাক্ত করেছেন। হামলাকারীরা ঘাঁটি গেড়েছিল তিলজলা লেনেই।
২০০২-এর ২২ জানুয়ারি কাকভোরে আমেরিকান সেন্টারের সামনে ওই হানাদারিতে ৬ জন পুলিশকর্মী নিহত ও ১৮ জন আহত হন। লাল-কালো একটি চলন্ত মোটরবাইকে চালকের পিছনে বসা আততায়ী এ-কে ফর্টি সেভেন রাইফেল থেকে গুলিবৃষ্টি করে চম্পট দেয়। তদন্তে জানা গিয়েছে, হাসনুই হাজারিবাগ থেকে মোটরবাইকটি চালিয়ে এনে তিলজলার ডেরায় পৌঁছে দিয়েছিল ঘটনার পাঁচ দিন আগে, মানে ১৭ জানুয়ারি।
চার্জশিটের দাবি: জেরায় হাসান জানিয়েছে, দু’হাত ফেরতা চোরাই ওই মোটরবাইক প্রথম কেনা হয়েছিল কলকাতাতেই। কাজ সেরে হাসান হাজারিবাগের মূল ডেরায় ফিরে যায়। আর ২২ তারিখে কলকাতায় হামলা চালিয়ে সেখানে গিয়ে জড়ো হয় অন্য তিন চক্রী— জাহিদ, সেলিম ও সাদাকাত। ২৪ তারিখ হাসান নালন্দার বাড়িতে চলে যায়। সাদাকাতও হাজারিবাগ ছাড়ে। দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল ২৬ জানুয়ারি হাজারিবাগে অভিযান চালালে জাহিদ-সেলিমের প্রাণ যায়।
প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি হাসনুর বিচার এখন কোথায় হবে, তা নিয়ে গোয়েন্দারা সংশয়ে। আমেরিকান সেন্টার মামলার বিচার করেছিল ১১ নম্বর সিটি সেশনস কোর্ট। নিরাপত্তার কারণে প্রেসিডেন্সি জেলে বিশেষ আদালত বসে, যা ২০০৫-এ রায় ঘোষণা করে। কিন্তু সেই কোর্টের অস্তিত্বই এখন নেই। অন্য দিকে ঘাতক সাদাকাত ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে মুম্বই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও তার বিচার এখনও শুরু হয়নি। তাকে কলকাতায় আনাই যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy