Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্ত মুছল বই, দুই বাংলা যেন একাকার

সিলেটের হবিগঞ্জের রুমা মোদক, টরন্টোর মৌসুমি কাদের, মেলবোর্নের জান্নাতুল ফিরদৌসরা আসতে পারেননি কলকাতা বইমেলায়। আসা হল না নিউ ইয়র্কের কুলদা রায় বা ঢাকার অলাত হোসেনেরও। তবে ত্রিপুরার জিরানিয়া থেকে ঈপ্সিতা পাল বা আমেরিকার আইওয়া থেকে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির।

বইমেলায় বাংলাদেশের স্টলের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

বইমেলায় বাংলাদেশের স্টলের সামনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৮
Share: Save:

সিলেটের হবিগঞ্জের রুমা মোদক, টরন্টোর মৌসুমি কাদের, মেলবোর্নের জান্নাতুল ফিরদৌসরা আসতে পারেননি কলকাতা বইমেলায়। আসা হল না নিউ ইয়র্কের কুলদা রায় বা ঢাকার অলাত হোসেনেরও। তবে ত্রিপুরার জিরানিয়া থেকে ঈপ্সিতা পাল বা আমেরিকার আইওয়া থেকে সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় হাজির।

সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে থেকেও জড়িয়ে রয়েছেন ভারত-বাংলাদেশ, দু’দেশের এই সাহিত্যপাগলরা। কেউ বিজ্ঞানী, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ বা সমাজতত্ত্বের শিক্ষক। গত কয়েক মাসে ফেসবুক মেসেঞ্জারে বা গ্রুপ চ্যাটে নাগাড়ে যোগাযোগ রেখে দুই বাংলাকেই মলাট-বন্দি করেছেন তাঁরা। কলকাতায় বসে এক সঙ্গে লেগে থেকে পথ বাতলেছেন লেখক অমর মিত্রও। দু’খণ্ডে ৮৫ জন নামী-অনামী লেখকের গল্প জুড়ে তৈরি হয়েছে ‘গুরুচণ্ডালী’-র ‘গল্পপাঠ’। সঙ্গে অভিনব প্রাপ্তি লেখকদের টাটকা সাক্ষাৎকার।

গল্পে গল্পে দেশ-বিদেশের বাঙালির সীমান্তের খোপগুলো এ ভাবেই গুলিয়ে গিয়েছে বইমেলার মাঠে। এ পার বাংলার অভিযান পাবলিশার্স-এর মাহরুফ হোসেনের সঙ্গে শনিবার গল্প জমল ঢাকাইয়া বন্ধুদের। তাদের নতুন বই ইমদাদুল হক মিলনের ‘কালো ঘোড়া’। ‘বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ গল্প’তেও নতুন তিনটি গল্প যোগ করেছে ‘অভিযান’। সম্পাদনায় কানাডাবাসী বাংলাদেশি লেখক সাদ কামালি। ভূমেন্দ্র গুহ সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের চারটি উপন্যাসের প্রামাণ্য সংকলনটি নতুন করে বের করেছে বাংলাদেশের ‘বেঙ্গল পাবলিশার্স’। ‘নয়া উদ্যোগ’-এর স্টলে এ বইমেলাতেই তার সঙ্গে প্রথম দেখা কলকাতার। অখণ্ড বাংলার জাঁদরেল সম্পাদকদের কথা উঠে এসেছে তাপস ভৌমিক সম্পাদিত ‘বাংলা পত্রপত্রিকা: সম্পাদক ও সম্পাদনা’ (কোরক)-এ।

দেখুন ভিডিও

দুই বাংলার এই মিলনমেলায় তবে কি একেবারেই উধাও দেশভাগের ক্ষত? গাঙচিল-এর ‘দেশভাগ ও একাত্তরের স্মৃতি’-তে উঠে এসেছে খুলনা-বাগেরহাটের দেশহারাদের কথা। অধীর বিশ্বাসের সম্পাদনায় দুই বাংলার বর্ডার-বিষয়ক সংকলনটিও সীমান্ত নিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতার দলিল।

এ কালে নিত্য দিন সোশ্যাল মিডিয়ার খিটিমিটি-খুনসুটিতে অবশ্য অনেকটাই কাছে এসেছে দুই বাংলা। এ বার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন-এর দিকে পিঠ করেই বইমেলার এক নম্বর ‘সেল্‌ফি স্পট’। মণ্ডপে অবিকল ও-পারের দিনাজপুরের ১৮ শতকের কান্ত জিউয়ের মন্দিরটির পোড়ামাটির আদল। ভিতরে সরকারি-বেসরকারি ৩১টি স্টলে চাহিদার তুঙ্গে সেই হুমায়ুন আহমেদ। দু’দশকের ‘কলকাতা বইমেলা-বিশারদ’ মদিনা প্রকাশনী-র মোর্তাজা বশিরুদ্দিন খান চেনা-অচেনা ক্রেতাকে দেখেই চা খাইয়ে মেহমানদারিতে মরিয়া। ভবানীপুরের বন্দনা চক্রবর্তী অবশ্য খানিক নিরাশই হলেন ঢাকার কুট্টি গাড়োয়ানদের জোক্‌স-এর কোনও বই না-পেয়ে।

এই সব আশা-নিরাশার ফাঁকেই নবমী পার করে যেন দশমীতে পড়ল বইমেলা। সাহিত্য উৎসবের শেষ দিনে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শ্রীজাত থেকে চেতন ভগতের তারকা-সমাবেশ। আজ, রবিবার মেলার শেষ দিনটি আবার ‘বাংলাদেশ দিবস’। জনবিস্ফোরণে মেলার শেষ মুহূর্ত অবধি চেটেপুটে খেতে তৈরি কলকাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Book Fair Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE