কোথাও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা। কোথাও বা অতি-সক্রিয়তা। সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনায় বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বার্নপুরে পুরসভার এক ঠিকাদার খুনের ঘটনায় তিন বছর পরেও কেউ গ্রেফতার না-হওয়ায় এ বার তারা দুরমুশ করল সিআইডি-কে।
হাইকোর্টের প্রশ্ন: প্রকাশ্যে এক জন খুন হয়ে গেলেন। সিআইডি তার তদন্তে নামল। অথচ ঘটনার তিন বছর পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না। কেন? এমনকী কোনও সূত্রও বার করতে পারল না। কেন?
হীরাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা আসানসোল পুর নিগমের মেয়র বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অর্পণ মুখোপাধ্যায় (৫০) খুন হন ২০১২ সালের ১০ মে। তদন্তভার পেয়েও সিআইডি তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে রয়েছে কী ভাবে? বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। তাঁর মন্তব্য, ‘‘এর পরে তদন্তকারীদের উপরে আস্থা থাকবে কী ভাবে?’’
পুলিশ জানায়, ভোরে বেড়াতে বেরিয়ে বার্নপুর স্টেডিয়ামের কাছে গুলিবিদ্ধ হন অর্পণবাবু। তাঁর ছেলে অর্কদেব খুনের যথাযথ তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার খুনের তদন্তভার তুলে দেয় সিআইডি-র হাতে। বিচারপতি এ দিন সরকার পক্ষের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, ‘‘কাউকে এখনও গ্রেফতার করা গেল না কেন? কেনই বা কোনও সূত্র পর্যন্ত বার করা গেল না?’’ সদুত্তর মেলেনি।
অর্কদেবের আইনজীবী উদয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, গত বছর সিআইডি নিম্ন আদালতে জানিয়ে দেয়, তারা কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এমনকী কে বা কারা অর্পণবাবুকে খুন করল, সেই ব্যাপারে কোনও সূত্রও তারা বার করতে পারেনি। সেই জন্য তারা আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করছে বলে নিম্ন আদালতে জানায় সিআইডি। সেই রিপোর্টের পরেই পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এবং ওই হত্যাকাণ্ডের সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।
ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, ‘‘সিআইডি চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়ে বলল, তারা অপারগ! ব্যস!!’’ সিআইডি তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট হিসেবে কী দাখিল করেছে, সেপ্টেম্বরের মধ্যে তা আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছিল, অর্পণবাবু ইস্কো ও আসানসোল পুরসভার ঠিকাদার ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে চেপে বার্নপুর স্টেডিয়ামের সামনে পৌঁছন ভোর সওয়া ৫টায়। মোটরসাইকেলটি স্টেডিয়ামের কাছে রাখার কিছু ক্ষণের মধ্যেই আততায়ীরা অর্পণবাবুকে লক্ষ করে খুব কাছ থেকে পরপর গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন ওই ঠিকাদার। কয়েক জন পথচারী তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
হীরাপুর থানা প্রথমে তদন্ত শুরু করে। তারা জানায়, খুনের প্রত্যক্ষদর্শী কেউ ছিল না। ঘটনাস্থলে পাঁচটি খালি কার্তুজ মিলেছে। আসানসোল কমিশনারেটের প্রাক্তন প্রধান অজয়কুমার নন্দ দাবি করেন, অর্পণবাবুর শত্রু কেউ ছিল না। তবে তিনি কিছু দিন আগে প্রোমোটারি শুরু করেছিলেন। কে বা কারা তাঁকে খুন করেছিল, ওই পুলিশকর্তা তা জানাতে পারেননি। তবে তাঁর দাবি, ওই খুনের পিছনে কোনও রাজনীতি নেই।
কিন্তু সিপিএমের স্থানীয় নেতৃত্ব তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ তুলে ১২ ঘণ্টার বার্নপুর বন্ধের ডাক দেন। হীরাপুর থানা অবরোধ করেন সিপিএমের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক। তাঁদের অভিযোগ, প্রদীপ তা এবং কমল গায়েনের পরে অর্পণবাবুকে খুন করেছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই।
পুলিশ কাউকে ধরতে না-পারায় অর্কদেবের হয়ে মামলা করেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সেই সময় সিআইডি তদন্তভার পায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy