Advertisement
E-Paper

স্নাইপার হাতে পেল লালবাজার

ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাস ও তার উপর ভিত্তি করে তৈরি ছবি ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’-এর দৌলতে স্নাইপার রাইফেলের কথা জেনে যায় আমজনতা।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৫

কলকাতা পুলিশের হাতে এখন ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’-এর সেই বন্দুক!

দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যা করতে ফরাসি জঙ্গি সংগঠন ভাড়া করল এক ইংরেজ পেশাদার খুনিকে। যে সব সময়েই ছদ্মনাম বলত ‘জ্যাকল’। পরিকল্পনা রূপায়ণে সে একটি বিশেষ বন্দুক তৈরি করাল। স্নাইপার রাইফেল। ক্রাচে ভর দেওয়া খঞ্জ বৃদ্ধ সেজে খুনি উঠে গেল প্রেসিডেন্টের অনুষ্ঠানস্থল লাগোয়া একটি বাড়ির উপরে। যেখান থেকে প্রেসিডেন্ট তার লক্ষ্যের মধ্যে।

ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের উপন্যাস ও তার উপর ভিত্তি করে তৈরি ছবি ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকল’-এর দৌলতে স্নাইপার রাইফেলের কথা জেনে যায় আমজনতা। ১৯৭৩-এর ওই ছবির পরে ৪৪ বছর পার। স্নাইপার রাইফেলকে জঙ্গি হামলা মোকাবিলায় অন্যতম অপরিহার্য বলে এখন ধরা হয়। তবু কলকাতা পুলিশের হাতে এত দিন একটাও ওই রাইফেল ছিল না।

লালবাজার সূত্রে খবর, শহরের কম্যান্ডো বাহিনীর হাতে সম্প্রতি এসেছে জার্মানিতে তৈরি ১০টি স্নাইপার। সেগুলি হেকলার অ্যান্ড কক-এর পিএসজি ওয়ান এ ওয়ান গোত্রের সেমি-অটোম্যাটিক আগ্নেয়াস্ত্র।

জ্যাকল তার ক্রাচে স্নাইপার রাইফেল টুকরো টুকরো করে লুকিয়ে রেখে ফের জোড়া দিতে পারত। বাস্তবে কলকাতা পুলিশের হাতে আসা স্নাইপারও টুকরো করে আবার জোড়া দেওয়া যায়। তবে জ্যাকলের বন্দুক ছিল .২২ এমএম বোরের। আর এই স্নাইপারের গুলি ৭.৬২ এমএম। ৮০০ মিটার দূরে থাকা লক্ষ্যকে নির্ভুল নিশানায় পেড়ে ফেলতে পারে। ম্যাগাজিনে গুলি ধরে ২০টি।

পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, ‘‘১০টি স্নাইপার রাইফেলের চারটি এখন কম্যান্ডোদের কাছে। বাকি ছ’টি লালবাজারের কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারে।’’ তিনি জানান, কলকাতার চার কম্যান্ডোকে বাদুতে ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড (এনএসজি)-এর হাবে স্নাইপার রাইফেল চালানোর ২১ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই ওই চার জন ও আরও ১০ কম্যান্ডোকে মানেসরে এনএসজি-র সদর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৯০ অথবা ৪২ দিনের প্রশিক্ষণে পাঠানো হবে। ওই অফিসারের দাবি, ‘‘স্নাইপার রাইফেল আসায় আমরা জঙ্গি হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে আরও একটু এগোলাম।’’

মুম্বইয়ে ২৬/১১-র জঙ্গি হামলায় নরিম্যান হাউস দখলমুক্ত করতে এনএসজি কম্যান্ডোরা যখন ঢুকেছিলেন, তাঁদের সহায়তা দিতে আশপাশের বহুতলে স্নাইপার তাক করে লুকিয়েছিলেন ভারতীয় নৌবাহিনীর মার্কোস বা মেরিন কম্যান্ডোরা। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘জঙ্গিরা কয়েক জনকে পণবন্দি করে রেখেছে, এমন অবস্থায় স্নাইপার কার্যকর।’’

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে তৈরি স্টিভেন স্পিলবার্গের ছবি ‘সেভিং প্রাইভেট রায়ান’-এ ন্যাটা মার্কিন স্নাইপার, প্রাইভেট ড্যানিয়েল জ্যাকসনের গুলিতে পর্যুদস্ত হয় জার্মানরা। আবার ‘আখরি রাস্তা’ ছবিতে ডেভিড (অমিতাভ বচ্চন) প্রতিশোধ নিতে ডক্টর বর্মাকে স্নাইপার থেকে গুলি ছুড়েই খতম করেছিলেন।

২০১৫-র ২৭ জুলাই পঞ্জাবের গুরদাসপুরের দীননগরে সন্দেহভাজন লস্কর-ই-তইবার জঙ্গিদের হামলায় সাত জন নিহত হন। তিন জঙ্গিও মারা যায়। গুরদাসপুরে সে দিন স্নাইপার নামানো হয়েছিল। ওই প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যকে বলেছিল, ‘এই জাতীয় উগ্রপন্থী আক্রমণ মোকাবিলায় স্নাইপার নামালে অনেক সুবিধা পাওয়া যাবে।’ অথচ কলকাতা পুলিশ ২০১২ থেকে ছ’টি স্নাইপার রাইফেল চাইলেও তখন কিছু পাওয়া যায়নি।

তা হলে কী ভাবে চলছিল? লালবাজারের এক অফিসার বলছেন, ‘‘জোড়াতালি দিয়ে আমরা একে ৪৭, ইনস্যাসে টেলিস্কোপ লাগিয়ে কাজ চালাচ্ছিলাম। তবে ওই সব বন্দুকে টেলিস্কোপ লাগিয়েও নিশানা নিখুঁত হয় না। পাল্লাও অনেক কম, মাত্র ৩০০-৩৫০ মিটার।’’

Sniper gun Lalbazar Kolkata Police লালবাজার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy