Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সাম্বিয়া-কাণ্ড

প্রজাতন্ত্র দিবসের মহড়ায় বাড়তি সতর্ক লালবাজার

এক বছর আগে মহড়ারত বায়ুসেনা অফিসারকে গাড়িচাপা দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়কের ছেলে। তা নিয়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে।

রেড রোডে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

রেড রোডে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১০
Share: Save:

এক বছর আগে মহড়ারত বায়ুসেনা অফিসারকে গাড়িচাপা দিয়েছিলেন প্রাক্তন বিধায়কের ছেলে। তা নিয়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছিল পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে। এ বার তাই প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়ায় ‘অতি-সাবধানী’ লালবাজার।

পুলিশ সূত্রে খবর, মহড়ার দিনগুলিতে ভোর থেকেই রেড রোডের সব ক’টি মুখে থাকছে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা। সকাল ৬টায় মহড়া শুরু হলেও রেড রোডে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তার দু’ঘণ্টা আগে থেকেই। নিরাপত্তার তত্ত্বাবধানে রাস্তায় নামছেন পাঁচ জন ডেপুটি কমিশনার। সব মিলিয়ে গোটা রেড রোড তল্লাটে মোতায়েন থাকছেন প্রায় তিনশো পুলিশকর্মী। যার প্রায় নব্বই শতাংশই সশস্ত্র। থাকছে পুলিশের কম্যান্ডোও। সোমবার মহড়ার প্রথম দিন থেকেই চালু করা হয়েছে নয়া এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে আরও দশ বার মহড়া হবে। সব ক’দিনই একই ধরনের নিরাপত্তা থাকবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

কী রকম সেই ব্যবস্থা?

পুলিশ জানিয়েছে, রাস্তার মুখগুলিতে প্রথমে গার্ডরেল, দ্বিতীয় ধাপে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ‘সিজার ব্যারিকেড’ এবং শেষ ধাপে পুলিশের গাড়ি আড়াআড়ি ভাবে রাখা হচ্ছে। এর নামই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিনটি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বিভাগীয় ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) ছাড়া সশস্ত্র পুলিশের দু’জন করে ডিসি থাকছেন। থাকছেন ডিসি (কমব্যাট) এবং ট্রাফিকের এক ডিসিও। প্রতি সেক্টরের দায়িত্বে থাকছেন এক জন সহকারী কমিশনারও। তিনটি সেক্টরকে তিরিশটি পয়েন্টে ভাগ করা হয়েছে। এক-একটি পয়েন্টের দায়িত্ব সামলাতে রয়েছেন সাব-ইনস্পেক্টর বা সার্জেন্ট পদের অফিসারেরা। তাঁদের অধীনে থাকছেন ইনস্যাস রাইফেল ও কার্বাইনধারী পুলিশকর্মীরা।

গত বছর ১৩ জানুয়ারি রে়ড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলার সময়ে প্রাক্তন বিধায়ক এবং শাসক দলের নেতা মহম্মদ সোহরাবের ছেলে সাম্বিয়া সোহরাব বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালিয়ে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে চাপা দেন। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মারা যান তিনি। ঘটনার পরে গ্রেফতার হন সাম্বিয়া-সহ চার জন। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়ায় এমন ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েন লালবাজারের শীর্ষকর্তারা।

সোমবার ভোরে অবশ্য রেড রোডে গিয়ে দেখা গেল চারপাশে গিজগিজ করছে সশস্ত্র পুলিশ। ব্যারিকেডের সামনে তৎপর হয়ে দাঁড়িয়ে পুলিশকর্মীরা। খিদিরপুর রোড, হসপিটাল রো়ড, রাজভবনের দিক থেকে যে গাড়িগুলি রেড রোডের দিকে আসছিল, রাস্তা বন্ধ থাকায় সেগুলিকে গন্তব্যে পৌঁছতে বিকল্প রাস্তা বুঝিয়ে দিচ্ছিল পুলিশ। ওই এলাকায় ডিউটিরত এক পুলিশ অফিসার বললেন, ‘‘গত বছরও তো পথ আগলানো ছিল। সাম্বিয়া সব উড়িয়ে দিয়েই ঢুকে পড়েছিল। এ বার অবশ্য গার্ডরেলের বদলে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা রয়েছে। তবু সাবধানের তো মার নেই!’’ এ দিন ভোর থেকে রেড রোড এলাকা খতিয়ে দেখেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (৬) সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

লালবাজার সূত্রের মতে, সাম্বিয়া কাণ্ড মাথায় রেখেই এ বার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হয়েছে। সমন্বয় বেড়েছে সেনা ও পুলিশের। লালবাজারের এক কর্তা এ দিন দাবি করেন, ‘‘নিরাপত্তা নিয়ে এ বার সেনাও যথেষ্ট তৎপর। ওরা নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত কথাও বলছে।’’ সেনার তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, মহড়ায় প্রতি বছর যা কাজ, সেটুকুই করা হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশই পালন করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE