Advertisement
E-Paper

ছটে লেটার কলকাতার, নম্বর কমল বহু জেলার

আদালতের রায় মেনে কোনও পুণ্যার্থী রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ঢোকেননি। শুধু যে সরোবর রক্ষা পেয়েছে তা-ই নয়, করোনা আবহে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পালন করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৫৮
পশ্চিম বর্ধমানের বরাকর নদে ছট পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। মাস্কও পরেননি অনেকে। ছবি: পাপন চৌধুরী

পশ্চিম বর্ধমানের বরাকর নদে ছট পালন করছেন পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। মাস্কও পরেননি অনেকে। ছবি: পাপন চৌধুরী

জোড়া বিধি মেনে চলার দায় ছিল এ বার। পরিবেশ বিধি আর করোনার স্বাস্থ্যবিধি। তাই দরকার ছিল দ্বিগুণ সচেতনতার। ছটপুজোয় দু’টি বিধিই প্রায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল কলকাতা। কিন্তু নদী ও পুকুরঘাটে ভিড় করে, বাজি ফাটিয়ে, মাইক বাজিয়ে জোড়া বিধি ভাঙল অধিকাংশ জেলা। কোনও কোনও জায়গার মুখ রক্ষা করেছে বৃষ্টি।

পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞা গত বছর মানতে পারেনি মহানগরী। ছটপুজোয় পুণ্যার্থীরা রবীন্দ্র সরোবরে ঢুকেছিলেন গেট ভেঙে। কার্যত নীরব দর্শক ছিল প্রশাসন। কিন্তু এ বার অন্য ছবি। আদালতের রায় মেনে কোনও পুণ্যার্থী রবীন্দ্র সরোবর ও সুভাষ সরোবরে ঢোকেননি। শুধু যে সরোবর রক্ষা পেয়েছে তা-ই নয়, করোনা আবহে আদালতের নিষেধাজ্ঞা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পালন করা হয়েছে।

আমজনতার সচেতনতার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে শনিবার মন্তব্য করেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “মানুষ চেয়েছেন বলেই এই সাফল্য এসেছে। মানুষ যদি না-চান, তা হলে আইন প্রণয়ন করে বা বিধিনিষেধ আরোপ করে কোনও কিছু সফল হয় না।’’ তাঁর মতে, রবীন্দ্র ও সুভাষ সরোবরের পরিবেশ এবং সার্বিক ভাবে এলাকার পরিবেশ সুস্থ রাখতে দরকার নাগরিক-সচেতনতা। তার জন্য প্রশাসন ছাড়াও পরিবেশকর্মীদেরও বাড়ি-বাড়ি গিয়ে প্রকৃতি-সচেতনতার পাঠ দেওয়া দরকার। প্রশাসনও সেই কাজ করে।

আরও পড়ুন: সরোবর বাঁচানোর মূল্য কি গঙ্গা-দূষণ?

আরও পড়ুন: বাংলা শান্তির, ছটে বার্তা মমতার

ফিরহাদ বলেন, “গত বারেও পুরো বিষয়টি মানুষের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল তাঁদের উস্কানি না-দিলে এই কাণ্ড ঘটত না। এ বারেও সেই দলের কিছু কর্মী উস্কানি শুরু করেছিল। প্রশাসন তা রুখে দিয়েছে। আইনের বিরুদ্ধে যেতে পারে, এমন কোনও কাজকে আমল দেয়নি।’’

কেএমডিএ-র এক আধিকারিকের বক্তব্য, দুই সরোবরে ছটপুজো বন্ধে প্রচারাভিযান গত বারের চেয়ে অনেক বেশি জোরদার ছিল। গত বছর রবীন্দ্র সরোবরে ছট বন্ধের জন্য প্রচারপত্র বিলি করা হলেও তার তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। কারণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডে যেখানে ছটপুজোর পুণ্যার্থীরা থাকেন, সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ বার প্রথম থেকেই প্রশাসনিক স্তরে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া শুক্রবার থেকেই দুই সরোবর এবং শহরের রাস্তায় পুলিশি তৎপরতা অনেক বাড়ানো হয়। দুই সরোবরের গেটে মাইকে পুণ্যার্থীদের আসতে বারণ করা হয়। শনিবার সকালেও দুই সরোবরের কিছু গেটে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছিল অনেকটা দূর থেকে। সরোবরের বাইরেও ছটের বাজি যাতে ফাটানো না-হয়, সে-দিকে নজর ছিল। “আদালতের নির্দেশ মেনেই দুই সরোবরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কলকাতা পুলিশ সামগ্রিক ভাবেই ভাল কাজ করেছে,’’ বলেন যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ।

কিন্তু শুক্রবার বিকেলের পরে শনিবার ভোরেও দেদার বিধি ভাঙা হয়েছে জেলায় জেলায়। ছটপুজোর রাত থেকে ভোর— বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে উত্তরবঙ্গ জুড়ে। জলপাইগুড়ির করলা পাড়ের কিংসসাহেবের ঘাটে কড়া নজরদারির জন্য বাজি না-ফাটলেও অন্যান্য ঘাটে ফেটেছে দফায় দফায়। কোচবিহারের তোর্সা ঘাট, সাগরদিঘি পাড়ে ছটের ভিড় ছিল শেষ রাত থেকেই। ফেটেছে বাজি। বেজেছে মাইক। ডিজে বাজে আলিপুরদুয়ারের পশ্চিম ইটখোলায় কালজানির পাড়ে। রায়গঞ্জের কুলিক নদীর ঘাট, বালুরঘাটের আত্রেয়ী, মালদহের ইংরেজ বাজারের মহানন্দার ঘাটেও প্রচুর ভিড় হয়।

বার্নপুরে দামোদর, আসানসোলের নুনিয়া, গাড়ুই নদী, ঝাড়খণ্ড-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় বরাকর নদের পাড়ে, অন্য প্রায় ৪৫০টি জলাশয়ে এবং দুর্গাপুরে দামোদরের বীরভানপুর বিসর্জন ঘাটে প্রচুর ভিড় হয়। অনেকেই মাস্ক পরেননি। মানা হয়নি দূরত্ব-বিধিও। তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, দুর্গাপুরে কুমারমঙ্গলম পার্কের প্রতি ঘাটে পাঁচ জনকে পুজো করতে দেওয়া হয়। দর্শক প্রবেশ ঠেকানো গিয়েছে। কিছু বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ।

খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন পুকুরে, কাঁসাইয়ের ঘাটের জমায়েতে দূরত্ব-বিধি মানা হয়নি। বাজনা নিয়ে শোভাযাত্রা হয়। ফেটেছে শব্দবাজিও। ভিড় ছিল মুর্শিদাবাদে গঙ্গার বিভিন্ন ঘাটেও। অনেক জায়গায় পুণ্যার্থীরা শোভাযাত্রা করে পুজো দিতে এসেছিলেন। বাজিও ফেটেছে। বাঁকুড়া শহর, দামোদর লাগোয়া বড়জোড়া এবং বিষ্ণুপুর শহরে ছটের ভিড়ে দূরত্ব-বিধি শিকেয় ওঠে। মাস্ক ছিল না অনেকেরই। তবে ভোরে বৃষ্টি নামায় ঠান্ডার জন্য অনেকে মাফলার,
চাদরে মুখ ঢেকেছিলেন। বৃষ্টির জন্য হাওড়ার বাউড়িয়া, চেঙ্গাইলে এবং হুগলির বিভিন্ন ঘাটে ছটপুজোর ভিড় কম হয়।

“গত বছরের ছটে কলকাতায় পুলিশকে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তাই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। তবে মানুষ যদি পরিবেশ এবং অন্যান্য বিষয়ে পুরোপুরি সচেতন হয়ে উঠতে পারেন, তা হলে হয়তো প্রশাসনের কোনও প্রয়োজনই হবে না,’’ বলেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত।

Chhat Puja Chhat Puja 2020 Environment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy