চুরমার: দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। রবিবার, বিদ্যাসাগর সেতুতে। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে দাঁড়িয়েছিল দশ চাকার একটি ট্রেলার। হাওড়া থেকে কলকাতার দিকে আসার সময়ে রবিবার ভোরে সেই ট্রেলারের পিছনে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে গেল একটি গাড়ি। পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় গাড়িচালক বাপি ভুঁইয়ার (৪০) মৃত্যু হয়েছে। তাঁর বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায়। আহত হয়েছেন গাড়ির চার আরোহী। এঁদের মধ্যে এক জন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ সূত্রের খবর, এগরা স্কুলের কিছু সমস্যা নিয়ে সেখানকার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যেরা মোট চার জন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়েছিলেন। ভোর পাঁচটা বেজে দশ মিনিট নাগাদ হাওড়ার টোল প্লাজ়া পেরিয়ে বিদ্যাসাগর সেতুর মাঝামাঝি আসতেই ট্রেলারের পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গাড়ির সামনেই চালকের আসনের পাশে বসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের রাসন নেহরু বিদ্যাপীঠের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিরুপম ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘সাঁতরাগাছি পেরোনোর পরে চোখটা লেগে এসেছিল। হঠাৎ বিকট আওয়াজ ও ঝাঁকুনি। চোখ খুলতেই দেখি, আমাদের গাড়িটি ট্রেলারের উপরে উঠে গিয়েছে। সিট বেল্ট পরা থাকায় বেঁচে গেলাম। জানলার কাচ ভেঙে কোনও রকমে গাড়ি থেকে বেরোই।’’ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির আর এক সদস্য দীপককুমার পয়রা গাড়ির একেবারে পিছনে বসেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘চোখটা তখন ঘুমে জড়িয়ে এসেছিল। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনিতে হুম়ড়ি খেয়ে সামনে গিয়ে পড়ি। মাথা ফেটে গিয়েছে। হাতেও চোট লেগেছে।’’ দুর্ঘটনার খবর পেয়েই এগরা থেকে এ দিন এসএসকেএম হাসপাতালে এসে পৌঁছন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিবেকানন্দ পয়রা। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের স্কুলেক সাংসদ তহবিলের প্রায় বারো লক্ষ টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। সাংসদ সন্ধ্যা রায়কে বারবার জানিয়েও কাজ হয়নি। নবান্নেও চিঠি পাঠিয়েছিলাম। তাতেও কাজ না হওয়ায় স্কুলের উন্নয়নের জন্যই এ দিন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষক মিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। কোনও অ্যাপয়ন্টমেন্ট ছিল না আমাদের। মুখ্যমন্ত্রী রবিবার সকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেন বলেই ওঁরা যাচ্ছিলেন।’’
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সেতুর উপরে দায়িত্বে থাকা বিদ্যাসাগর ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছয়। গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়ির জানলা ও পিছনের অংশ কেটে চালক ও বাকি তিন জন আহতকে বার করে এসএসকেএমে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চালককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। পুলিশের অনুমান, চালকও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তার জেরেই ঘটেছে এই দুর্ঘটনা। তবে এ কথা মানতে নারাজ ওই গাড়িতে থাকা আরোহীরা। নিরুপমবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমাদের গাড়িটি সেতুর উপরে ডান দিক ঘেঁষে যাচ্ছিল। ট্রেলারটি ও ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটল। ট্রেলারটি যে ও ভাবে সেতুর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে, তা জানাতে পুলিশের তরফে গার্ডরেল বা অন্য কোনও সঙ্কেত দেওয়া উচিত ছিল। পুলিশ সতর্ক থাকলে এ রকম দুর্ঘটনা এড়়ানো যেত।’’
যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ট্রেলারটি বিকল হয়ে গিয়েছিল। দুর্ঘটনা ঘটনার সময়ে ওই ট্রেলারের চালক বা খালাসি কাউকে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পরে ট্রেলার ও দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি হেস্টিংস থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ট্রেলারের চালকের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy