Advertisement
E-Paper

বাস উল্টে মৃত দুই

বাসের দরজার দিকটা কাত হয়ে পড়ে রাস্তায়। যাত্রীরা তালগোল পাকিয়ে একে অন্যের উপরে পড়েন। সবার নীচে ছিলেন গণেশ গঙ্গোপাধ্যায় (২৮) ও জাহিন্দর সিংহ (৪৭) নামে দুই যাত্রী। তাঁরা দু’জনেই গুরুতর চোট পান।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০১:৩৪
মর্মান্তিক: উল্টে যাওয়া মিনিবাস থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে আটকে পড়া যাত্রীদের। শুক্রবার, হাওড়া ব্রিজে। —নিজস্ব চিত্র।

মর্মান্তিক: উল্টে যাওয়া মিনিবাস থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে আটকে পড়া যাত্রীদের। শুক্রবার, হাওড়া ব্রিজে। —নিজস্ব চিত্র।

স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হয়েছেন। তাই পথে পথে জ্বলজ্বল করছে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ লেখা সরকারি সাবধানবাণী। তবু, সচেতনতা যে এখনও সেই তিমিরেই, শুক্রবার ফের তা প্রমাণ করে দিল একটি দুর্ঘটনা এবং তার জেরে দু’জনের মৃত্যু।

বেলা তখন ১১টা। হাওড়ার মালিপাঁচঘরা থেকে আসছিল শিয়ালদহমুখী একটি মিনিবাস। হাওড়া ব্রিজ থেকে নামার সময়ে আর একটি বাসকে টপকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে সেটি। সামনে এসে পড়ে এক মোটরবাইক। তাকে বাঁচাতে গিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারার উপক্রম হয়। তখন উল্টো দিকে ঘোরাতে গিয়ে উল্টেই যায় গোটা বাস।

বাসের দরজার দিকটা কাত হয়ে পড়ে রাস্তায়। যাত্রীরা তালগোল পাকিয়ে একে অন্যের উপরে পড়েন। সবার নীচে ছিলেন গণেশ গঙ্গোপাধ্যায় (২৮) ও জাহিন্দর সিংহ (৪৭) নামে দুই যাত্রী। তাঁরা দু’জনেই গুরুতর চোট পান। জখম যাত্রীদের কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা ওই দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকিরা ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। এঁদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।

পুলিশ জানায়, দিনের ব্যস্ত সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটায় সেতুর উপরে যানজট তৈরি হয়। বাসে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধারের কাজে পথচারী ও অন্য গাড়ির চালকেরাই প্রথমে এগিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরাও। পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্সে রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। মিনিট পনেরোর মধ্যেই অবশ্য পুরো এলাকা স্বাভাবিক হয়ে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে আটক করে পুলিশ।

প্রতি দিনের মতো এ দিন সকালেও বড়বাজারের অফিসে যাচ্ছিলেন সালকিয়ার দীপককুমার জায়সবাল। ওই মিনিবাসেই ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনায় পিঠে চোট পেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড়ে ঠাসা বাসে বসার জায়গা পাইনি। মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাসটা জোরে ব্রেক কষল। তার পরে হুড়মুড়িয়ে একে অপরের ঘাড়ে পড়লাম।’’ ওই বাসের আর এক যাত্রী হীরালাল মল্লিকের হাত ভেঙে গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্লাস্টার হাতে বাড়ি ফেরার সময়ে হীরালালবাবু বলেন, ‘‘বাসের পিছনের দিকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমার ঘাড়ের উপরে কয়েক জন পড়লেন। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ভাবতে পারিনি, প্রাণে বেঁচে যাব।’’

শুক্রবার সকাল। আউটডোরে রোগীদের ভিড়। হাওড়া ব্রিজে বাস উল্টে যাওয়ার ঘটনায় আহতদের নিয়ে আসা হচ্ছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তখন ভিড়, রক্ত আর আতঙ্ক।
তার মধ্যেই বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে যায় বছর ছয়েকের রেজানা খাতুন। অস্থি বিভাগের আউটডোরে রেজানার বাবা চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। দুই বোন এবং মায়ের সঙ্গে রেজানাও এসেছিল।
ভিড় আর ঠেলাঠেলিতে হঠাৎ হারিয়ে যায় সে। বাবা-মা হাসপাতালে উপস্থিত কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশের সহযোগিতায় ইমার্জেন্সির সামনে রেজানাকে খুঁজে পায় পরিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

এ দিনের দুর্ঘটনার মৃত গণেশবাবুর মৃতদেহ পুলিশ তাঁর ভাই অর্জুন গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে দেহ তুলে দেয়। অর্জুনবাবু বলেন, ‘‘দাদা আর আমি রোজ একসঙ্গেই অফিসে যাই। শুক্রবার কাজ ছিল বলে আমি আগে চলে আসি। দাদা বলেছিল, দুপুরে একসঙ্গে টিফিন করব। দাদার সঙ্গে যে এ ভাবে দেখা হবে, ভাবতে পারিনি।’’

বাসের খালাসি বাপি হাতে চোট পেয়েছেন। মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন তিনিও। তবে দুর্ঘটনা নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘বাস কী ভাবে উল্টে গেল, বুঝতে পারছি না। কিছুই মনে পড়ছে না।’’ বাসের চালক পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দায় কার, হবে তদন্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া সেতুর উপরে উল্টে যাওয়া মিনিবাসটি আদৌ রাস্তায় চলার উপযুক্ত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এ ব্যাপারে রাজ্য পরিবহণ দফতরেরও সাহায্য নেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের রাস্তায় প্রতি দিন যে সব বাস-মিনিবাস চলে, সেগুলির একটা বড় অংশই রাস্তায় চলার অযোগ্য। কারও রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি দীর্ঘ দিন, কারও চাকার গ্রিপই নেই, কোনও গাড়ির ব্রেক আবার ঠিক মতো কাজ করে না।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দিন বাস গ্যারাজ থেকে বেরোনোর সময়ে তার গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করার কথা। শুক্রবার হাওড়া সেতুতে উল্টে যাওয়া মিনিবাসটির ক্ষেত্রে ওই সব নিয়ম মানা হয়েছিল কি না, তা-ও দেখা হবে। এ ব্যাপারে যিনি সব থেকে বেশি তথ্য দিতে পারতেন, মিনিবাসের সেই চালক ঘটনার পর থেকে পলাতক। কন্ডাক্টরও অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। একটু সুস্থ হলেই তাঁকে জেরা করবে পুলিশ।

Accident Howrah Bridge হাওড়া ব্রিজ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy