একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের চারতলা থেকে পড়ে জখম হলেন দুই শ্রমিক। প্রতীকী ছবি।
উপযুক্ত সুরক্ষা-সরঞ্জাম নিয়ে কেন নির্মীয়মাণ বহুতলে কাজ করা জরুরি, একাধিক দুর্ঘটনার পরে বার বার সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কিন্তু সে সবের পরেও যে সচেতনতা আদৌ ফেরেনি, বৃহস্পতিবার ট্যাংরার একটি ঘটনায় আবারও তা প্রমাণ হল। এ দিন ট্যাংরার শীল লেনে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের চারতলা থেকে পড়ে জখম হলেন দুই শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে এক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হলেও অপর জন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরেই ওই বহুতলের উল্টো দিকে আর একটি বহুতলেও দেখা গেল, কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই রঙের কাজ করছেন দুই শ্রমিক। তাঁদের মাথায় না আছে হেলমেট, না আছে কোমরে দড়ি। এমনকি, তাঁরা যে উচ্চতায় কাজ করছিলেন, তার নীচে কোনও জালও বিছানো ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিনের ঘটনায় যে দুই শ্রমিক আহত হয়েছেন, তাঁদের নাম হিমাংশু বেরা ও সুকুমার মণ্ডল। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, নির্মীয়মাণ বহুতলটির চারতলার উপরে সিঁড়ির ল্যান্ডিংয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করতে গিয়ে ঘটে ওই দুর্ঘটনা। প্রথমে সুকুমার কোনও ভাবে বেসামাল হয়ে পড়েন। তিনি নীচে পড়ার সময়ে তাঁকে বাঁচাতে যান হিমাংশু। সেই সময়ে দু’জনে টাল সামলাতে না পেরে একসঙ্গে নীচে পড়ে যান। গুরুতর জখম অবস্থায় হিমাংশুকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুকুমারকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ন্যূনতম সুরক্ষা ছাড়া কেন ওই দুই শ্রমিক বহুতলটির উপরে কাজ করছিলেন, কেনই বা সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার লোকজন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি—ঘটনার পরে বড় হয়ে উঠছে সেই সব প্রশ্নই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের সামনে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ শোনেন তাঁরা। আশপাশের লোকজন সঙ্গে সঙ্গে এসে দেখেন, দু’জন শ্রমিক ওই বহুতলের নীচে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাঁদেরই এক জন কোনও রকমে জানান, চারতলা থেকে পড়ার সময়ে ওই বহুতলের পাশে থাকা একটি কাঁঠাল গাছের ডালে তাঁরা আটকে যান। এর পরে সেখান থেকে মাটিতে পড়েন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘সরাসরি মাটিতে না পড়ে গাছের ডালে আটকে গিয়ে ওই দু’জন নীচে পড়ায় গতি কমে গিয়েছিল। সেই কারণে কারও আঘাত গুরুতর হয়নি। তা না হলে আরও বড় অঘটন ঘটত।’’
স্বভাবতই ঘটনার পরে এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, যে ঠিকাদার সংস্থা ওই বহুতলে কাজের দায়িত্ব পেয়েছে, তাদের কাছে সুরক্ষার যাবতীয় উপকরণ আছে কি না, সেটা কলকাতা পুরসভা কেন যাচাই করবে না? কেন বার বার একই ঘটনা ঘটবে?
এই বিষয়ে পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘কোনও কাজ শুরুর অনুমোদন দেওয়ার সময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে সুরক্ষার সব রকম উপকরণ আছে কি না, তা যাচাই করা হয়। কিন্তু প্রতিদিনের কাজের আগে সেই সব নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা কি সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করা সম্ভব?’’এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ওই বহুতলেনির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার অফিসওতালাবন্ধ। গোটা ঘটনা সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy