প্রতীকী ছবি।
নিরীহ একটি কুকুরকে নৃশংস ভাবে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে এবং ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল মাস দুয়েক আগে। সেই খবর কাগজে প্রকাশিত হওয়ার পরে ঘটনাটির তদন্তের দাবি জানিয়ে বারাসত থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। খবর পেয়ে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা পশুপ্রেমী সংস্থা ‘পিপল ফর অ্যানিম্যালস’-এর প্রতিষ্ঠাতা মেনকা গাঁধী। ওই ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বারাসত আদালতে সেই মামলা এখন চলছে। এ বার অভিযুক্তদের ‘দৃষ্টান্তমূলক’ শাস্তির দাবিতে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন পশুপ্রেমীরা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা পশুদের এ ভাবে নির্যাতন করে, তারা মানুষের উপরেও একই রকম আঘাত হানতে পারে। বারাসতের ঘটনায় অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হওয়ায় আমি খুশি। আমি চাই, পশু নির্যাতনের ব্যাপারে পুলিশ সব সময়ে সতর্ক থেকে এমন কিছু হলেই গ্রেফতার করুক।’’ মেনকার সংযোজন, ‘‘সারা বিশ্বেই পশুদের উপরে অত্যাচার ঘোরতর অন্যায় বলে মানা হয়। এ দেশেও পশু নির্যাতন নিয়ে কঠোর হোক পুলিশ।’’
কী ঘটেছিল?
গত বছরের ২৪ নভেম্বর বারাসতের নতুনপুকুরে একটি পথকুকুর ‘পাগল’ হয়ে গিয়ে কয়েক জনকে কামড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সে কথা শুনেই ক্ষিপ্ত কিছু যুবক কুকুরটিকে আটকে বাঁশ ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকে। ওই ঘটনার ভিডিয়ো ইন্টারনেটে ‘ভাইরাল’ হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, কুকুরটি নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়ার পরেও ইট দিয়ে তার মাথা থেঁতলে দেওয়া হচ্ছে। এর পরে মারা যায় কুকুরটি। কিন্তু তাতেও দমেনি ওই যুবকেরা। মৃত সারমেয়টিকে তার পরেও বাঁশ দিয়ে ক্রমাগত পেটানো হয়। ভিডিয়োয় আরও দেখা যায়, এক জন মহিলা ও এক যুবক চিৎকার করে কুকুরটিকে মারার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিবাদী ওই যুবককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কাগজে এই খবরটি পড়ে সল্টলেকের বাসিন্দা জুঁই চক্রবর্তী গত ১৬ ডিসেম্বর বারাসত থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরে ২৩ জানুয়ারি নতুনপুকুরের সুকান্তনগরের বাসিন্দা স্বরূপ দাস, বিশ্বনাথ পান্ডে এবং পাপ্পু সরকার নামে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বারাসত পুলিশ জেলার সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইনে (প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস অ্যাক্ট, ১৯৬০) মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’
আইন বলছে, ওই ধারায় দু’হাজার টাকা জরিমানা ছাড়াও চার বছরের জেল হতে পারে। তাই জামিন হলেও পুলিশ সুপারের দফতর থেকে বিভিন্ন জায়গায় দরবার করে চলেছেন জুঁই ও শুভদীপ বসু নামে আরও এক জন। জুঁই বলেন, ‘‘খাবার ও বাসস্থানের জন্য এই অসহায় প্রাণীরা আমাদের উপরেই নির্ভরশীল। সেই দায়িত্ব পালনের বদলে এমন নৃশংস আচরণ ভাবা যায় না। তাই দৃষ্টান্তমূলক সাজা চাই, যাতে এমন অপরাধ করার আগে দুষ্কৃতীরা সাত বার ভাবে।’’
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে খাদ্যসঙ্কট চরম আকার নিয়েছিল। লকডাউনে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল বহু দোকানপাট। ফলে, শুধু পথকুকুরেরাই নয়, বেড়াল ও হনুমানের মতো প্রাণীরাও খাবারের অভাবে কাটিয়েছে দিনের পর দিন। দেগঙ্গায় বাড়ির ফ্রিজ খুলে খাবার খেতে দেখা গিয়েছিল এক দল হনুমানকে। খাবার না পেয়ে কিছু কুকুর, হনুমান ক্ষিপ্ত হয়ে মানুষকে আক্রমণ করে কামড়ে, আঁচড়েও দিয়েছিল। এই ধরনের কিছু ঘটলে প্রাণীদের উল্টে আঘাত না করে পুলিশ-প্রশাসন কিংবা বন দফতরকে জানানোটাই দস্তুর।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বন আধিকারিক নিরঞ্জিতা মিত্র বললেন, ‘‘লকডাউনে মানুষকে আক্রমণ করা ক্ষিপ্ত হনুমানকে আমরা উদ্ধার করেছি। তবে কুকুরের বিষয়টি বন দফতর দেখে না।’’ এ ক্ষেত্রে ‘পাগল’ হয়ে উঠলেও কুকুরের বিষয়টি যারা ‘দেখে’, সেই পুলিশ বা স্থানীয় পুরসভাকে না জানিয়ে সারমেয়টিকে এ ভাবে হত্যা করা হল কেন, সেই প্রশ্নই তুলেছেন পশুপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy