Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অ্যাসিড-ক্ষত মুছতে দিল্লিতে ছয় বঙ্গকন্যা

খাতায়-কলমে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে অবশ্য নিখরচায় চিকিৎসাই প্রাপ্য এই মেয়েদের। কিন্তু একটু জটিল অস্ত্রোপচার হলে সহজে দিন পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ওষুধের খরচ জোটাতে বা একটানা ড্রেসিংয়ের মলম জোগাড় করতেও মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে অনেকের।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৯
Share: Save:

অ্যাসিড-হানার ক্ষত তাঁরা বইছেন বছরের পর বছর। পুড়ে খাক চোখ-মুখ-গলায় মানুষের মতো আদল ফেরাতে হাসপাতালে ধর্নাও জারি রয়েছে। এমন সঙ্কটে কার্যত অসহায় এ রাজ্যের গড়পড়তা অ্যাসিড-আক্রান্ত ভুক্তভোগী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অ্যাসিড-দগ্ধদের ক্ষতিপূরণ, কর্মসংস্থানের কথা বলা থাকলেও তার রূপায়ণ কার্যত নাম-কা-ওয়াস্তে। চরম দুর্বিপাকে ‘ত্রাতা’র খোঁজে অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যে বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হচ্ছেন। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার ছ’জন অ্যাসিড-আক্রান্ত তরুণী দিল্লির করোল বাগের এক হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পরে চিকিৎসাধীন।

খাতায়-কলমে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে অবশ্য নিখরচায় চিকিৎসাই প্রাপ্য এই মেয়েদের। কিন্তু একটু জটিল অস্ত্রোপচার হলে সহজে দিন পাওয়া যায় না। তা ছাড়া ওষুধের খরচ জোটাতে বা একটানা ড্রেসিংয়ের মলম জোগাড় করতেও মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে অনেকের। শাহরুখ খানের নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে এমন বেশ কয়েক জন তরুণীর।

শাহরুখও অবশ্য ওই মেয়েদের চিকিৎসায় দিল্লির হাসপাতালের উপরেই নির্ভর করছেন। সর্বভারতীয় একটি মঞ্চের সমাজকর্মী, একদা নিজে অ্যাসিড-হানার শিকার দিল্লির সাহিন মালিক বলছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে অ্যাসিড-আক্রান্তদের নিখরচায় চিকিৎসা করা গেলেও পরিকাঠামোর সমস্যায় সংক্রমণ ঘটার অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো মুশকিল। কারণ, অ্যাসিড-আক্রান্তদের খরচ মেটানোর আইন পশ্চিমবঙ্গে নেই।’’ এ ব্যাপারে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না-হলে অ্যাসিড আক্রান্তদের নির্দিষ্ট বেসরকারি জায়গায় রেফার করা হয়। খরচও মেটানো হয়। কিন্তু সব ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া যায় না।’’ সম্প্রতি হরিয়ানা, দিল্লির মতো কিছু রাজ্যে অ্যাসিড-আক্রান্তদের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ মেটানোর আইন হয়েছে। তবে শাহরুখের সংস্থার উদ্যোগে বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ের মতো কয়েকটি রাজ্য মিলিয়ে ৬০ জন অ্যাসিড-আক্রান্তের বিভিন্ন অস্ত্রোপচার চলছে দিল্লিতে।

তাতেও অবশ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান নেই। কারণ অস্ত্রোপচার চলে দফায় দফায়। পাঁচ বছর আগে অ্যাসিড-হানার শিকার জয়নগরের মনীষা পৈলানের কথায়, ‘‘অ্যাসিড-হানার চিকিৎসা সারা জীবনই চালাতে হয়। অনেক মেয়ের ছোট সন্তান রয়েছে। এই যে ১০-১৫ দিন দিল্লিতে পড়ে আছি, সেটা ক’জনের পক্ষে সম্ভব?’’ এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারির চিকিৎসক অরিন্দম সরকারের কথায়, ‘‘অ্যাসিড-হানার পরে প্রথমে প্রায় সবাই কলকাতা বা রাজ্যে চিকিৎসা অস্ত্রোপচার করান। এর পরে নানা খুঁটিনাটি সারাতে বাইরের হাসপাতালে যান।’’

বাইরে চিকিৎসা করানোও নিম্নবিত্তদের জন্য মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা! যেমন রিষড়ার ঝুমা সাঁতরার চেন্নাইয়ে চোখ ঠিক করাতে গিয়ে শুধু ডাক্তার দেখানো আর থাকা-খাওয়াতেই খরচ হয়ে গিয়েছে লাখ টাকার কাছাকাছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের খরচ কুলোতে পারেননি। সামান্য ক্ষতিপূরণের টাকায় ধারাবাহিক চিকিৎসা-খরচের অনেকটাই মেটে না, বলছেন অ্যাসিড-আক্রান্ত মেয়েরাই।

মনীষা সদ্য দিল্লিতে ঠোঁটের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। সম্প্রতি সুতপা দাস নামে মেদিনীপুরের এক তরুণীর গলার জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। ১৫ বছর আগে অ্যাসিড-হানার পরেও কৃষ্ণনগরের মমতা সরকারের একটা চোখ বুজতে চায় না। নদিয়ার

পলাশির সাহানারা খাতুন গলা ঠিক করতে ব্যস্ত। তাঁর চুলও নতুন করে বসাতে হবে। সোদপুরের সুনীতি কর্মকারের লড়াই নতুন চোখের পাতার জন্য। সকলের প্রশ্ন একটাই, বারবার সংসার ছেড়ে দিল্লি এসে তাঁরাই বা কত দিন পড়ে থাকবেন?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Attack Acid Attack Victim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE