পরীক্ষার মাধ্যমে কলকাতা পুরসভায় অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে নিয়োগের কাজ প্রায় শেষ লগ্নে। হঠাৎই আটকে দেওয়া হলো পুরো নিয়োগ পর্ব। সরিয়ে দেওয়া হলো পুরসভার চিফ পার্সোনেল ম্যানেজারকে। শনিবার পুর প্রশাসনের এমনই এক সার্কুলারে তোলপাড় পুরমহল। অভিযোগ, নিয়োগে ৯০ শতাংশেরও বেশি পদ সংরক্ষিত রাখায় জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থীরা আবেদনের সুযোগ পাননি। পার্সোনেল দফতরের চিফ ম্যানেজারের তত্ত্বাবধানেই এমন হয়েছে বলে মনে করছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। ওই অফিসার নিজেও সংরক্ষিত শ্রেণির অফিসার। এমন সিদ্ধান্তের মাসুল হিসেবে চিফ ম্যানেজার বিজয় বিশ্বাসকে ওই পদ থেকে সরিয়ে লাইসেন্স দফতরের চিফ ম্যানেজারকে ওই পদে বসানো হল।
পুরসভা সূত্রে খবর, ২০১৬ সালের শেষ দিকে পুরসভায় ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় দু’দফায় মোট ৯৫ জন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করা হবে। প্রথমে ১৫ জন এবং পরে ৮০ জন। প্রথম ১৫ জনের মধ্যে সবক’টি পদই সংরক্ষিত বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ৮০টির মধ্যে ৭০টি সংরক্ষিত এবং বাকি ১০টি জেনারেল। পুরসভার পার্সোনেল দফতরের এমন নির্দেশ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ে পুরমহলে। ইঞ্জিনিয়ারদের একটি গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে পুর আমলাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এমনকী একাধিক ডিজি যাঁদের ছেলে বা মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছেন, তাঁরাও বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন।
পুরসভার এক আধিকারিক রবিবার জানান, এমনিতেই কলকাতা পুরসভায় স্থায়ী পদে নিয়োগ প্রায় বন্ধই রয়েছে। এ বার এক সঙ্গে এতগুলো নিয়োগের সিদ্ধান্তে চাকরিপ্রার্থী অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞাপনে জানিয়ে দেওয়া হয় প্রায় সব পদই সংরক্ষিত। অনগ্রশ্রেণির জন্য। তাতে পুরসভার ভিতরে বাইরে ক্ষোভের আঁচ পড়ে। ব্যাপারটা মেয়রের কানেও আসে। এর পরই শুক্রবার মেয়র পারিষদের বৈঠকে বিশেষ এজেন্ডা হিসেবে ওই প্রসঙ্গ তোলা হয়। সব পদ কেন সংরক্ষিত করা হবে, এই প্রশ্ন উঠতেই পার্সোনেল দফতর যুক্তি দেখায়, ১৯৯০ থেকে পুরসভায় যে ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে তাতে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য সংরক্ষণের সূত্র মানা হয়নি। অনেক নিয়োগে ‘ব্যাক লগ’ থেকে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের অনগ্রসর দফতরের পাঠানো এক নির্দেশিকার বলেই এ বার নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সংখ্যা বেশি রাখা হয়েছে।
যদিও চিফ ম্যানেজারের যুক্তি ঠিক নয় বলে জানান মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। শোভনবাবু বলেন, ‘‘১৯৯০-র একটি নির্দেশিকা দেখিয়ে তিনি যা করছেন তা ঠিক নয়। নানা কাজেই বাগড়া দিচ্ছেন ওই অফিসার। তাই তাঁকে সরানো হল।’’ সংরক্ষণের শর্তকে কলকাতা পুরসভাও মান্যতা দিতে বাধ্য বলে জানান মেয়র। তাঁর বক্তব্য, ‘‘২৭ বছরের সংরক্ষণ শর্ত না মানা হলে তার দায় কি বর্তমান বোর্ডকে নিতে হবে? একটি নিয়োগেই সব পদ সংরক্ষিত করার কোনও কারণ নেই। ধাপে ধাপে তা করা যেতে পারত।’’ আপাতত ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি দেখার জন্য দুই মেয়র পারিষদ-সহ ৬ জনের একটি কমিটি গড়া হয়েছে বলে জানান মেয়র। কমিটির চেয়ারম্যান দেবাশিস কুমার এবং ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে দেবব্রত মজুমদারকে। পুরসভার অর্থ, আইন, অডিট দফতরের কর্তারা-সহ বাজার দফতরের এক আধিকারিক রয়েছেন।
এ দিকে, পুরসভার পার্সোনেল দফতরের বক্তব্য, বিজ্ঞাপন দেওয়া থেকে তাঁরা যা করেছেন সবই পুরবোর্ডের অনুমতি নিয়েই। তা হলে তাঁদের বলির পাঁঠা হতে হল কেন? কোনও জবাব দিতে চাননি পুর আমলাদের কেউ। পুরকর্তাদের আশঙ্কা প্রথম দফায় যে ১৫ জন ইঞ্জিনিয়ার নেওয়ার পদ্ধতি প্রায় শেষ, তাঁদের কী হবে? অনেকের আবার পার্সোনালিটি টেস্টও হয়ে গিয়েছে। আবার যাঁরা বিজ্ঞাপনে সংরক্ষিত পদ দেখে আবেদন করার সুযোগই পাননি, তাঁরা মামলায় যেতে পারেন বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। সব মিলিয়ে পুরো নিয়োগ পর্বে ক্রমশই জটিলতা বাড়ছে বলে ধারণা আমলাদেরও।