Advertisement
E-Paper

বাইপাসে নগ্ন যুবক, চমকে উঠল পুলিশ

পুলিশের কাছে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি দাবি করেন, সায়েন্স সিটির কাছে একটি রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তিনি। পুরো বিল না মেটাতে পারায় হোটেলের কর্মীরা তাঁর জামাকাপড় খুলে নিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ই এম বাইপাসে ডিউটি করার সময়ে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কলকাতা পুলিশের এক সার্জেন্ট! তিনি দেখেছিলেন, উদ্‌ভ্রান্তের মতো নগ্ন অবস্থায় হেঁটে আসছেন
এক ব্যক্তি!

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধ্যায় এমন দৃশ্য দেখেই ওই ট্র্যাফিক সার্জেন্ট নিজের মোটরবাইকে থাকা একটি কাপড় দিয়ে শরীরে জড়িয়ে নিতে বলেন। তার পরে মোটরবাইকে চাপিয়ে প্রগতি ময়দান থানায় নিয়ে যান তাঁকে। পুলিশ সূত্রে জানা য়েছে, ওই ব্যক্তি বেলেঘাটার বাসিন্দা।

পুলিশের কাছে বছর পঁয়তাল্লিশের ওই ব্যক্তি দাবি করেন, সায়েন্স সিটির কাছে একটি রেস্তরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন তিনি। পুরো বিল না মেটাতে পারায় হোটেলের কর্মীরা তাঁর জামাকাপড় খুলে নিয়েছেন। সপ্তাহান্তের চিনেপাড়ায় এমন ঘটনা শুনে থানা থেকে পুলিশ দৌড়য় ওই রেস্তরাঁয়। কয়েক জন কর্মীকে নিয়ে আসা হয় থানায়। কিন্তু পুলিশের কাছে তাঁদের পাল্টা দাবি, ওই ব্যক্তি মদ খেয়ে বিল দেননি। উল্টে নিজেই জামাকাপড় খুলে ফেলেছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধারের সময়ে ওই ব্যক্তির মুখ থেকে মদের গন্ধও পাওয়া গিয়েছে ।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তিকে ফের জি়জ্ঞাসাবাদ করতেই তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। বা়ড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে শুধু ‘বেলেঘাটা’ বলছিলেন। এর পরেই প্রগতি ময়দান থেকে বেলেঘাটা থানায় যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, দিন কয়েক আগে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি উধাও হয়ে গিয়েছেন। সেই ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে এঁর চেহারার মিল আছে। এর পরে ওই ব্যক্তির পাড়ার লোক এবং আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তি দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। ক’দিন আগে মাকে ঘরে তালাবন্ধ করে উধাও হয়ে যান। পাড়ার লোকের কাছ থেকে খবর পেয়ে বেলেঘাটা থানা ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি মারা যান। এ দিন তাঁর দেহ মেয়ে-জামাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু খোঁজ মিলছিল না ছেলের।

রেস্তরাঁর কর্মীদের দাবি, বিকেলে সেখানে হাজির হন ওই ব্যক্তি।
প্রায় দেড় হাজার টাকার মদ খান। কর্মীরা বিল দিলে তিনি জানান, তাঁর কাছে টাকা নেই। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তার পরেই তিনি নিজের পোশাক খুলে দিয়ে বেরিয়ে যান বলে দাবি রেস্তরাঁ-কর্মীদের। তাঁদের আরও দাবি, ঘটনার আকস্মিকতায় হকচকিয়ে গিয়ে বাধা দিতে পারেননি তাঁরা। রেস্তরাঁর সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। বরং রেস্তরাঁ কর্মীদের সমর্থনেই কিছু মানুষ গলা মিলিয়েছেন।

পুলিশের বক্তব্য, কিছু রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে ছোটখাটো দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এমন কাণ্ড শোনা যায়নি। এক পুলিশ অফিসার বলছেন, ‘‘প্রথমে শুনে চমকে উঠেছিলাম। ভাবছিলাম, কলকাতা এতটাও বর্বর হতে পারে! কিন্তু ওই লোকটির সঙ্গে কথা বলতে বুঝি, কোথাও সমস্যা রয়েছে।’’ এই আচরণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মনোবিদ ও চিকিৎসকেরা। কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’-র অধিকর্তা ও মনোরোগ চিকিৎসক প্রদীপ সাহার মতে, মাকে বন্ধ
করে রেখে চলে যাওয়ার বিষয়টি থেকেই স্পষ্ট যে ওই যুবকের বড় মানসিক সমস্যা রয়েছে। তবে ঠিকমতো চিকিৎসা না হওয়ায় অসুস্থতা ক্রমশ বেড়েছে। সেখান থেকেই তাঁর চাহিদা পূরণের বিষয়টি তৈরি হয়েছে। হয়তো মায়ের থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়ায় মাকে শাস্তি দিতেই ঘরে বন্ধ করে রেখে চলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রদীপবাবু এ-ও বলছেন, ‘‘মানসিক রোগী মানেই তাঁর চেতনা পুরোপুরি চলে গিয়েছে, তা কিন্তু নয়। আর তাই যখন তাঁর কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে, তখন তিনি নিজের পোশাকটাই দামি মনে করে খুলে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন।’’

Abuse Harassment Restaurants ই এম বাইপাস রেস্তরাঁ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy