বাতিস্তম্ভে বাঁধা রয়েছেন জখম যুবক। মঙ্গলবার, অমরপল্লিতে। নিজস্ব চিত্র
বাতিস্তম্ভে দু’হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। দু’টি পা-ও দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। চুরির অপবাদে মার খেতে খেতে আর মাথা সোজা রাখতে পারছেন না রক্তাক্ত যুবক। প্রকাশ্য রাস্তায় বর্বরতার এমন নির্লজ্জ প্রদর্শনেও যুবককে উদ্ধারে কেউ এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ। দমদমের অমরপল্লির ওই ঘটনার পরে পাঁচ দিন ধরে ওই যুবকের খোঁজ মিলছে না! অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, অমরপল্লি পুকুরের কাছে অভিযুক্ত রঞ্জন ওরফে বিশ্ব দাসের আলো এবং মাইকের দোকান রয়েছে। রঞ্জনের কাছে কাজ করতেন মধ্যমগ্রামের দোলতলার বাসিন্দা পিন্টু মণ্ডল। মঙ্গলবার পিন্টুর দাদা লাল্টু বলেন, ‘‘রঞ্জনের কাছে কাজের টাকা পেত ভাই। শুক্রবার সকালে ওই টাকা নিতে গেলে ভাইয়ের সঙ্গে মালিকের কথা কাটাকাটি হয়। এর পরে ভাই ব্যবসার টাকা চুরি করেছে এই অভিযোগে বাতিস্তম্ভে বেঁধে মারধর শুরু হয়।’’ শনিবার ছেলে না ফেরায় পিন্টুর খোঁজে দমদমে পৌঁছন মা লতিকা মণ্ডল এবং তাঁর দুই ছেলে। তখনই মারধরের কথা জানতে পারেন তাঁরা। পিন্টুর ভাই সিন্টু বলেন, ‘‘স্থানীয়েরা ভাইকে মারধরের ছবি মোবাইলে তুলে রেখেছিলেন। তা থেকেই ঘটনার কথা জানতে পারি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রথমে নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের হয় থানায়। মঙ্গলবার পরিবারের তরফে মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
ঘটনাস্থল থেকে ফাঁড়ির দূরত্ব খুব বেশি না হলেও প্রকাশ্যে এক যুবককে যে এ ভাবে মারধর করা হচ্ছে তা সে দিন জানতেই পারেনি পুলিশ। ঘটনাস্থল লাগোয়া প্রায় প্রতিটি বাড়ির বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দুপুরে এলোপাথাড়ি মারধরের পরে সে রাতে পুকুরে চুবিয়ে এনে ফের পিন্টুকে মারধর করা হয়। শনিবারও রঞ্জনের বাড়ি থেকে পিন্টুর চিৎকারের আওয়াজ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন কয়েক জন বাসিন্দা। এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘গোটা পাড়ায় এত মানুষ কেউ বাধা দিল না! ছেলেটাকে কী মার মারল।’’ প্রকাশ্যে এক যুবককে মারধর করতে দেখেও কেন কেউ থানায় খবর দিলেন না তাতে হতবাক পুলিশ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
মুখ না খোলার কারণ ব্যাখ্যায় স্থানীয় এক মহিলার বক্তব্য, ‘‘বিশ্ব পাড়ার ত্রাস! ওর ভয়ে লোকে মুখ খোলেনি।’’ এ দিন নিখোঁজ যুবকের খোঁজে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশের দাবি, অভিযুক্ত এবং তার পরিবারের সদস্যেরা এলাকা ছাড়া। আক্রান্ত যুবকের মা বলেন, ‘‘আমার ছেলে চুরি করলে প্রশাসন শাস্তি দেবে। বিশ্ব কে? আমার সন্দেহ, ছেলেকে মেরে দেহ গুম করে দিয়েছে। না হলে পালিয়ে বেড়াবে কেন?’’
স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর অমিত পোদ্দার বলেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে বলেছি, দোষীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy