E-Paper

জন্মগত বধিরতার সঙ্গে লড়ে জীবনে সফল হওয়ার গল্প শোনালেন ওঁরা

এক চরম হতাশা তখন ঘিরে ধরেছে ওই দম্পতিকে। সব কিছু শেষ ধরে নেওয়ার সে এক নিরুপায় অবস্থা। কিন্তু ওই কঠিন পরিস্থিতিতেই সহায় হয় ব্যান্ডেলের সেই প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:১১

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সাড়ে তিন বছরের মেয়ে কথা বলে না। কোনও আওয়াজও শোনা যায় না তার মুখে। ডাক্তারের চেম্বার ও বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে নাজেহাল দম্পতি শেষে বুঝতে পারেন, মেয়ের মুখে আওয়াজ শোনা যাবে কী, সে যে নিজেই কিছু শুনতে পায় না। খোঁজখবর করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় ব্যান্ডেলের একটি সংস্থার। কিন্তু স্বামীর ফরাক্কায় চাকরি। কী করে এত দূর থেকে সেখানে থেরাপি চালানো যাবে? মেয়েকে নিয়ে ভাড়ার ঘরে ব্যান্ডেলেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মা। মেয়ের থেরাপি শুরু হয়। এর মধ্যেই একটি ছেলে হয় সেই দম্পতির। কিন্তু সে-ও বধির! ধরা পড়ে, দিদির মতো সে-ও কথা বলতে পারছে না, কানে শুনতে না পাওয়ায়!

এক চরম হতাশা তখন ঘিরে ধরেছে ওই দম্পতিকে। সব কিছু শেষ ধরে নেওয়ার সে এক নিরুপায় অবস্থা। কিন্তু ওই কঠিন পরিস্থিতিতেই সহায় হয় ব্যান্ডেলের সেই প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র। ফরাক্কার চাকরি ছেড়ে স্ত্রীর সঙ্গে ব্যান্ডেলেই থাকতে শুরু করেন স্বামী। শুরু হয় দুই সন্তানকে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া। ভাগ্যিস, তাঁরা লড়াই ছাড়েননি। রিয়া নামের সেই মেয়ে এখন একটি বহুজাতিক তেল সংস্থার চাকুরে। তাঁর ভাই বাবু রাজ্য সরকারের কর্মী। পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগ দিয়েছেন কাজে। রবিবার প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনাচক্রে নিজেদের গল্প শুনিয়ে ভাই-বোন বললেন, ‘‘অনেকেই মিশতে চান না আমাদের মতো ছেলে-মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু আমরা আলাদা নই। সময়ে সমস্যা ধরতে পারলে থেরাপিতে জীবনের মূল স্রোতে ফেরা সম্ভব। আমরা পেরেছি। অনেকেই পারছেন।’’

একই ভাবে এই যুদ্ধ জেতার গল্প শোনালেন জন্ম থেকে চলা বধিরতাকে হারিয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাওয়া ব্রজকিশোর মণ্ডল, টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেসে ‘ডিজ়এবিলিটি স্টাডিজ় অ্যান্ড অ্যাকশন’-এ গবেষণারত স্নেহা দাশগুপ্ত, আন্তর্জাতিক স্তরের টেবিল টেনিস খেলোয়াড় তথা সিভিল সার্ভিসে যুক্তদের টেবিল টেনিস কোচ তনুজ মুখোপাধ্যায়েরা। ছিলেন প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্রের পড়ুয়া, ডাউন সিনড্রোম, অটিজ়মের মতো প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করে আবৃত্তি পরিবেশন করা অনন্যা মুখোপাধ্যায়, সৌম্যদীপ রায়েরা। আলোচনাচক্রে ছিলেন ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস-এর চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস, ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল-সহ বিশিষ্টেরা।

আলোচনা চালিয়ে নিয়ে যান দুই সঞ্চালক, সুপ্রিয় কুমার এবং সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর নন্দিনী সেন। ওই আলোচনার বিষয় রাখা হয়েছিল, ‘দয়া বা করুণা নয়, অধিকারের পথে যেতে হবে’। নন্দিনী বলেন, ‘‘এই ছেলেমেয়েদের ঘটনাগুলো মনে করিয়ে দেয়, সময়ে চিহ্নিত করা গেলে প্রতিবন্ধকতা পার করে জীবনে সাফল্য আনা সম্ভব। এ ব্যাপারে যত সচেতনতা তৈরি হবে, তত এক জন স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষের দূরত্ব কমবে।’’ আলোচনার মধ্যে চেয়ারপার্সন তুলিকা বলেন, ‘‘যে কাজ গত পঞ্চাশ বছরে প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র করেছে, তার সংগ্রহশালা তৈরি হলে আগামী দিনে এ নিয়ে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরা উপকৃত হবেন।’’

এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়নি। এই প্রতিষ্ঠানের কাজ আসলে একটা আন্দোলন। কিছু মানুষকে সমাজ বাতিল করে দেয়। সেই মানুষদেরই মূল স্রোতে ফেরানোর আন্দোলন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

deafness Physically Impaired Life Struggle Society

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy