মাতৃত্ব মানে কি শুধুই নাড়ির টান?
তা কিছুটা হতে পারে। তবে, কখনওই সেটুকু সব নয়! বরং জন্মদাত্রী হওয়া ছাড়াও মনের মাঝারে ইচ্ছে হয়ে থাকা সন্তানকে নিয়ে বাঁচা মায়েরাও খাটো নয় কিছুতে। মা মানেই তা কোনও নারীত্বের সীমারেখায় বেঁধে ফেলার মননটিও এক ধরনের আজগুবি ভুল ভাবা যেতে পারে। এই মাতৃত্বের নানা মাত্রা নিয়ে সোমবার বিকেলে কাটাছেঁড়া হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ প্রেক্ষাগৃহে। প্রেসিডেন্সির ফিল্ম সোসাইটি এবং বাংলা বিভাগের উদ্যোগে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘ডিয়ার মা’ ছবির প্রযোজক, অভিনেতা, কলাকুশলীদের কয়েক জনের সঙ্গে আড্ডায় মাতলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপিকা দেবারতি জানা।
ছবির সূত্র ধরে অনিরুদ্ধ বলছিলেন, “এক জন পুরুষের মধ্যেও কিন্তু মাতৃসত্তা থাকতে পারে। যেমন, আমাদের ছবিতে সফল কর্পোরেট কর্ত্রী বৃন্দা, মানে জয়া আহসানই মা হতে, সন্তান ধারণ করতে কিছুটা নিমরাজি থাকে। বরং, বৃন্দার স্বামী অর্ক (চন্দন রায় সান্যাল) সন্তানের জন্য পাগল। কিন্তু দত্তক কন্যা ঝিমলির প্রতি ভালবাসা বৃন্দার ভিতরের ঘুমিয়ে থাকা মাকে টেনে বার করে আনে।” তবে মাতৃত্বের এই উদ্বোধন বা উদ্যাপনেও মেয়েদের নিয়ে গতে বাঁধা নির্মাণ এড়িয়ে চলেছে ‘ডিয়ার মা’।
অনিরুদ্ধের কথায়, “এ ছবিতে আমি প্রধানত শিরোজ় বা বীরাঙ্গনা নায়িকাদের নিয়ে মেতেছি। ঝিমলির জন্মদাত্রী মায়ের চরিত্রে পদ্মাপ্রিয়া বা দত্তক মা জয়ারা মাতৃত্বের কাছে ফিরলেও নারীসত্তাকে অস্বীকার করেন না। মাতৃত্ব তাঁদের ভিতরের সহমর্মিতা আরও শানিত করে।”
ছবির প্রযোজক ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, পরিচালক অনিরুদ্ধ, জয়া, ছবিটিতে আপাত হৃদয়হীন পুলিশ অফিসার শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এবং আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অনুভা ফতেপুরা, সম্পাদক অর্ঘ্যকমল মিত্র— সকলে দেখা গেল একটি বিষয়ে একমত। এ ছবিতে তাঁরা সেটাই করেছেন, যেটুকু ভিতর থেকে বিশ্বাস করতে পেরেছেন। শাশ্বত জানান, প্রথম বার চিত্রনাট্য পড়ে তাঁর মনে হয়েছিল, ব্যাপারটা যেন ঠিক জমছে না। পার্টটা করতে তেমন ভালই লাগছে না। অনিরুদ্ধ তখন ফের স্ক্রিপ্টে তাঁর সহযোগী শাক্যজিৎ ভট্টাচার্যকে নিয়ে বসেন। বিস্তর আলাপ, কাটাছেঁড়ায় কাহিনি বা আখ্যানের উত্তরণও ঘটে।
জয়া এবং অনুভাও বলছিলেন, টোনিদার (অনিরুদ্ধ) সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ার উপযোগিতার কথা। কী ভাবে ওয়ার্কশপ তাঁকে সাহায্য করে, নিজের এবং অন্য চরিত্রগুলিকে বুঝতে। টোনির কাজের গণতান্ত্রিক ধাঁচের কথা বলছিলেন অর্ঘ্যকমলও। পরিচালক অকপট হলে সম্পাদনার কাজটা সহজ হয়। আর অনিরুদ্ধ ওরফে টোনি বললেন, “সব কিছুর জন্যই যে গল্পটা বলছি, আমাকে তাতে বিশ্বাস রাখতে হয়েছে। সেই বিশ্বাসের জোরেই সিনেমাটোগ্রাফার অভীকমুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক অর্ঘ্যকমলের কাছে কী দরকার, স্পষ্ট ভাবে চাইতে পেরেছি।” প্রেক্ষাগৃহে সাড়া ফেলা ‘ডিয়ার মা’-এর হয়ে ওঠার সৃষ্টিশীল সফরটির যেন এ সব কথাতেই উন্মোচন ঘটল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)