E-Paper

উৎসবমুখী স্রোতের কাছে হার মানল শীতল বড়দিন

পারদ-পতন উৎসবের আমেজকে যে কয়েক গুণ বাড়িয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, বাড়তি উৎসাহ নিয়ে কুয়াশা গায়ে মেখে আমজনতার বড় অংশ এ দিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানা, ময়দান এবং গঙ্গার ধারে ঘুরে ভিড় জমিয়েছেন পার্ক স্ট্রিটে।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৭
বড়দিনে উপচে পড়া ভিড় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। বৃহস্পতিবার।

বড়দিনে উপচে পড়া ভিড় আলিপুর চিড়িয়াখানায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

সন্ধ্যা গড়ানো আলো ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাতে তখন পা ফেলার জো নেই প্রায়। মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে ভিড় তখন ফুটপাত ও রাস্তা ছাপিয়ে চলেছে। হাল ফ্যাশনের পোশাক পরা সেই ভিড় ফুটপাতে নামতেই এক দল কমবয়সি থমকে গেলেন। এক পাশে সরে গিয়ে সোয়েটারের বোতাম-চেন আটকাতে আটকাতে বলতে শোনা গেল, ‘‘বাইরে তো রীতিমতো কনকন করছে রে! মেট্রোর ভিতরে বোঝাই যাচ্ছিল না যে, এত ঠান্ডা। মনে আছে, গত বছর এই দিনে সোয়েটার হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়েছিল!’’

বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখনও পর্যন্ত মরসুমের শীতলতম দিন। আলিপুর হাওয়া অফিস অবশ্য এই আভাস আগেই দিয়েছিল। গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ২৬ ডিগ্রির ঘরে! এ বার শহরের তাপমাত্রার এই পারদ-পতন উৎসবের আমেজকে যে কয়েক গুণ বাড়িয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, বাড়তি উৎসাহ নিয়ে কুয়াশা গায়ে মেখে আমজনতার বড় অংশ এ দিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, চিড়িয়াখানা, ময়দান এবং গঙ্গার ধারে ঘুরে ভিড় জমিয়েছেন পার্ক স্ট্রিটে।

দিনে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে তেমন ভিড় না থাকলেও সন্ধ্যার পরে কার্যত ‘ওয়াকিং স্ট্রিট’-এ পরিণত হয় ওই এলাকা। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ যান চলাচল বন্ধ করে দিতে হয় পার্ক স্ট্রিটে। গোটা পথের দখল নেন কমবয়সিরা। ভিড়ের চাপ পড়ে সংলগ্ন ক্যামাক স্ট্রিটেও। পানশালা ও রেস্তরাঁগুলির বাইরে ছিল দীর্ঘ লাইন। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পেরিয়েও পার্ক স্ট্রিটের ভিড়ের বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। লাল-সাদা সান্তা টুপি পরে বাগদত্তাকে নিয়ে হাঁটছিলেন অংশুমান নিয়োগী। বললেন, ‘‘প্রতি বার এখানে আসি। তবে, অন্যান্য বার হাঁটতে হাঁটতে ঘামতে হয়। এ বার সেটা হচ্ছে না। বরং ঠান্ডা হাওয়ায় শিরশির করছে। বড়দিনে কলকাতায় এমন ঠান্ডা অনেক বছর পড়েনি।’’

চিরাচরিত রীতি মেনেই এ দিন ভিড় টেনেছে চিড়িয়াখানা ও ভিক্টোরিয়া। সকালে চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের সামনে শুধুই কালো মাথা। ভিড় যাতে রাস্তায় না আসে এবং গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকে, তার জন্য দু’পাশে ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও এলাকায় যান চলাচল শ্লথ হয়ে যায়। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, বুধবারের ভিড়কেও ছাপিয়ে গিয়েছে এ দিনের ভিড়।

শহরের আর এক দ্রষ্টব্য ভিক্টোরিয়াতেও ছিল একই ছবি। দুপুরের দিকে ময়দানের দিকের টিকিট কাউন্টারের লাইন প্রায় কয়েকশো মিটার ছাড়িয়ে বিড়লা তারামণ্ডলের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সেই ভিড়ে বান্ধবীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন কলেজপড়ুয়া ঐশ্বর্য সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম, ভিক্টোরিয়া ঘুরে কয়েকটি ভাল ছবি তুলে পার্ক স্ট্রিটের দিকে যাব। কিন্তু টিকিটের লাইনই এগোচ্ছে না। যা ভিড়, তাতে মনেও হয় না, শান্তিতে নিজের কয়েকটি ছবিও তোলা যাবে!’’ ভিক্টোরিয়ার ভিড় সামলাতে সামনের রাস্তায় ছিল অতিরিক্ত পুলিশি বন্দোবস্ত। কোনও গাড়ি কয়েক মিনিটের জন্য থামলেই পুলিশ তেড়ে গিয়ে ধমক দিয়ে আসছিল। ব্যতিক্রম ছিল না প্রিন্সেপ ঘাট বা ক্যাথিড্রাল চার্চ এলাকাও।

প্রিন্সেপ ঘাটে এবং ময়দানে এ দিন ছিল পিকনিকের মেজাজ। সারা দিনের ঘোরাঘুরির পরে খানিক অবসর যাপনে এই দুই স্থানকে বেছে নিয়েছিলেন অনেকেই। কেউ একটু জিরিয়েই সঙ্গে আনা ব্যাট-বল নিয়ে নেমে পড়েন, কেউ ঘাসে বসে নিছক আড্ডায় মেতে ওঠেন। ময়দানে পরিবার নিয়ে বসে থাকতে দেখা গেল ব্যারাকপুরের ছ’জনের একটি পরিবারকে। খাওয়াদাওয়া করতে করতেই তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘সকাল থেকে পর পর চলছে। ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানা— কিছুই বাদ দিইনি। এ বার বাড়ি ফিরব।’’

যদিও বছর শেষের উৎসবকে ঘিরে পথের যন্ত্রণা বেড়েছে বলে অভিযোগ। বিকেলের পর থেকে পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন প্রতিটি রাস্তায় ছিল গাড়ির লম্বা লাইন। সন্ধ্যা পর্যন্ত ময়দান, পার্ক স্ট্রিট সংলগ্ন রাস্তায় চাকা কিছুটা গড়ালেও আটটার পরে গাড়ি চলাচল আরও শ্লথ হয়ে যায়। গোটা শহরেই শুরু হয় পথের বিধি ভাঙার ঘটনা। কোথাও বাইকে একাধিক জনকে বসিয়ে বেপরোয়া দৌড়, কোথাও আবার বিনা হেলমেটে সওয়ার চালক ও আরোহী।

এ দিকে, বুধবার আইন ভাঙায় ৭৭ জনকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোয় ৭৩ জন, বেপরোয়া ভাবে বাইক চালানোয় ৭৭ জন এবং বিনা হেলমেটে বাইক চালানোয় ৮৭ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার। একই পরিস্থিতি ছিল বড়দিনেও। এক কর্তার দাবি, ‘‘উৎসব মানে কোনও ভাবেই পথের আইন ভাঙার ছাড়পত্র নয়। আইন ভাঙায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Winter Festival

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy