এমন আসন থেকেই ছিটকে পড়ে সমৃদ্ধি। ফাইল চিত্র।
আরও কয়েকটি শিশুর সঙ্গে পাঁচ বছরের মেয়েটিও উঠেছিল জয়রাইডে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি যে, সেই জয়রাইড-ই শেষ পর্যন্ত এমন আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠবে! এর আগেও একাধিক বার জয়রাইডে দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেই তালিকাতেই নতুন সংযোজন খিদিরপুরের ভূকৈলাস মেলার মাঠ। শুক্রবার সন্ধ্যায় মেলার ‘ময়ূরপঙ্খী’ রাইড থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হল পাঁচ বছরের সমৃদ্ধি মিশ্র। আপাতত হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। ঘটনার পরেই ওই মেলার সমস্ত জয়রাইড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। মেয়েটির পরিবারের তরফে জয়রাইড সংস্থার বিরুদ্ধে দক্ষিণ বন্দর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ৩৩৮ ও ১১৪ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবা-মায়ের সঙ্গে খিদিরপুরে মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছিল পাঁচ বছরের সমৃদ্ধি। তার বাবা রাজেন্দ্র মিশ্র ও মা বিন্দু মিশ্র তিলজলা এলাকার চৌবাগার বাসিন্দা। ভূকৈলাস মাঠে শিবরাত্রি উপলক্ষে প্রতি বছর যে মেলা হয়, সেখানেই পরিবারের সকলের সঙ্গে শুক্রবার সন্ধ্যায় গিয়েছিল সমৃদ্ধি। পরিবারের অন্য শিশুদের সঙ্গে সে-ও উঠেছিল ‘ময়ূরপঙ্খী’ রাইডে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানান, ওই রাইডের একদম পিছনের দিকে বসেছিল সমৃদ্ধি। এমনিতে ওই রাইডে সামনে ধরার জন্য শুধুমাত্র একটি হাতল আছে। কিন্তু দু’পাশে এমন কোনও হাতল নেই, যাতে শরীর আটকে থাকতে পারে। ময়ূরপঙ্খীটি যখন পুরোদমে দুলছে, তখনই সেখান থেকে ছিটকে পড়ে যায় সমৃদ্ধি। সঙ্গে সঙ্গে চার দিকে হুলস্থূল পড়ে যায়। মাথায় গুরুতর চোট পাওয়া সমৃদ্ধিকে প্রথমে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। পরে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই আপাতত তার চিকিৎসা চলছে। সমৃদ্ধির মামা বিষ্ণু মিশ্র বলেন, ‘‘বেড়াতে এসে এ রকম ঘটনা ঘটে গেল! এখন হাসপাতালেই সবাই বসে আছি।’’
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই রাইডে সমৃদ্ধির সঙ্গে পরিবারের বড় কেউ ছিলেন না। শুধু বাচ্চারা মিলেই রাইডে উঠেছিল। পাঁচ বছরের একটি বাচ্চাকে কী ভাবে অভিভাবক ছাড়া ওই রাইডে উঠতে দেওয়া হল, সে প্রশ্নও উঠেছে। উদ্যোক্তাদের নজরদারির অভাব নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শনিবার এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘তিন বছরের বেশি হলেই ওরা ওই রাইডে উঠতে দেয়। এতে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কেন?’’
প্রসঙ্গত, ওই মেলার আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে ভূকৈলাস দেবোত্তর স্টেট ট্রাস্টি। অভিভাবক ছাড়াই ওই রাইডে বাচ্চাদের উঠতে দেওয়া প্রসঙ্গে ট্রাস্টির সদস্য প্রশান্ত ঘোষাল বলেন, ‘‘এটা আমাদের ভুল হয়েছে। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক থাকব।’’ ভূকৈলাস দেবোত্তর এস্টেটের ম্যানেজিং সেবায়েত সত্যবিভাস ঘোষাল বলেন, ‘‘জয়রাইডের তরফে যে ফিটনেস সার্টিফিকেট আমাদের দেওয়া হয়েছিল, তা যাচাই করে দেখা হয়নি। এটা আমাদের বড় ভুল। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী বছর থেকে এই ধরনের জয়রাইড ব্যবহারের জন্য নামী বিশেষজ্ঞ কমিটির থেকে অনুমতি নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy