কয়েক বছর ধরে কিডনির অসুখে ভুগছেন। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বছর পঁয়ত্রিশের বধূকে গর্ভপাতকরানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু তিনি রাজি হননি। অগত্যা ডায়ালিসিস থেকে শুরু করে চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় বিশেষ সতর্কতার মধ্যেই কাটে ন’মাস। বুধবার মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালে সুস্থ পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই বধূ।
হাবড়ার বাসিন্দা সারথি মণ্ডলের ১০ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। প্রথম সন্তান জন্মানোর বছর দুয়েক পরে সারথির কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। তখন থেকেই মানিকতলার ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। ডাক্তারেরা জানাচ্ছেন, ওই তরুণী ‘ক্রনিক কিডনি ডিজ়িজ়’-এর ‘টাইপ-৫’এ আক্রান্ত বলে পরীক্ষায় ধরা পড়ে। অর্থাৎ, তিনি কিডনির অসুখের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। দ্বিতীয় বার গর্ভবতী হওয়ার পরে চিকিৎসকেরা গর্ভপাতের পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কিডনির অসুখে আক্রান্তেরা সাধারণত গর্ভধারণ করতে পারে না। কারণ, ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকায় ডিম্বাশয় থেকে ‘ওভুলেশন’ (ডিম্বোস্ফোটন) ঠিক মতো হয় না। তার পরেও স্বাভাবিক গর্ভধারণ করলেও, গর্ভপাতের মারাত্মক আশঙ্কা থাকে। পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই সময় থাকতেই গর্ভপাতের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বদলে টেস্ট-টিউব বেবি বা সারোগেসির কথা বলা হয়। কিন্তু নিজের ও গর্ভস্থ শিশুর ঝুঁকি জেনেও সারথি গর্ভপাতে রাজি হননি। শেষ দু’বছর ধরে সপ্তাহে তিন দিন প্রায় চার ঘণ্টা করে ডায়ালিসিস চলত তাঁর। তা পরিবর্তন করেন চিকিৎসকেরা। শেষ ন’মাস ধরে দৈনিক দু’ঘণ্টা ডায়ালিসিস করা হত সারথির। ওইহাসপাতালের নেফ্রোলজিস্ট পিয়ালী সরকার জানাচ্ছেন, ডায়ালিসিসে শরীর থেকে জল বার করা হয়। তাতে প্লাসেন্টা নষ্টের সম্ভাবনা থাকে। তাই কম মাত্রায় ডায়ালিসিস দিয়ে তরুণীর শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক রাখা হয়েছিল।
পাশাপাশি, সারথির যাতে রক্তাল্পতা তৈরি না হয়, গর্ভস্থ শিশুর হাড় যাতে ঠিক মতো তৈরি হয়, সে দিকেও রাখা হয়েছিল কড়া নজর। পিয়ালী বলেন, ‘‘খুবইবিরল ঘটনা হলেও, এটি যে অসম্ভবও নয়, সেটা দেখা গেল। এতেঅন্য কিডনি রোগীদেরও মনোবল বাড়বে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)