জলপ্রপাতের গর্জন শুনতে শুনতে বন্ধুর হোয়াট্সঅ্যাপে পাড়ার পুজোর ছবি দেখতে চান? শহুরে ক্লান্তি ভুলে নীল সমুদ্রের ধারে হেঁটে যাওয়া বা ভিড় থেকে পালিয়ে পাহাড়ি কোনও পরিবারের বারোমাস্যা শুনতে চান? বেরিয়ে পড়ুন। এই পুজোয় ছুটি কাটুক শহর থেকে দূরে।
প্রতি বছরের মতো এ বারও শহরের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার লক্ষ্য সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপদ, নিশ্চিন্ত ছুটির মজা পৌঁছে দেওয়া। তবে একটু স্বাদ বদলে। বাঙালির প্রিয় ‘দী-পু-দা’-র (দীঘা-পুরী-দার্জিলিং) বাইরে অন্য কোনওখানে। সরকারি চাকুরেদের ১১ দিনের ছুটির উপহার তো রয়েইছে। আগে থেকে প্ল্যান থাকলে বেসরকারি সংস্থাতেও দিন কয়েকের ছুটি বাগানো সমস্যার হবে না বলেই মনে করছেন ভ্রমণ সংস্থার কর্মকর্তারা। চেনা জায়গার বদলে এ বার ‘অফবিট’ গন্তব্যেই বাঙালির আস্থা জোগাতে উদ্যোগী তাঁরা।
ভ্রমণ সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, সমুদ্রকেই না হয় চেটেপুটে নিক বাঙালি। তবে এ বার আর দীঘা, পুরী, মন্দারমণি নয়— পায়ে লাগুক আন্দামানের সৈকতের বালি। দীর্ঘদিন ধরে বাঙালিকে আন্দামান চেনাচ্ছে লোকনাথ ট্রাভেল্স। সংস্থার তরফে কৃষ্ণ সাহা জানান, এ বার ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে প্রথমেই রয়েছে হ্যাভলক, নীলদ্বীপ। হাজার বছর আগে জেগে ওঠা প্রবাল দ্বীপের সৌন্দর্য, একটা সৈকত দিয়ে যুক্ত হওয়া দু’টি দ্বীপের মধ্যে ছুটি কাটানোর আমেজই আলাদা বলে মনে করছেন তাঁরা। কৃষ্ণবাবু বললেন, ‘‘আন্দামানে বার বার আসতে আম বাঙালির পকেট সায় দেবে না। কিন্তু হ্যাভলক দ্বীপের নীলচে-সবুজ সমুদ্রের সঙ্গে এক রাত কাটিয়ে নীলদ্বীপের সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত না দেখা মানে জীবনের একটা অংশকে ফাঁকি দেওয়া।’’ তাই দিন দশেকের ছুটি পেলে আন্দামান পাড়ি দেওয়ারই আমন্ত্রণ জানাচ্ছে এই সংস্থা।
আন্দামানের পরেই লিস্টে থাকুক দক্ষিণ ভারত। এ বার পুজো অক্টোবরের শুরুতেই। বর্ষার রেশ তখনও গাছের পাতায়-শিকড়ে টইটম্বুর। আর এই সময়টাই দক্ষিণ ভারত ঘোরার পক্ষে আদর্শ বলে জানাচ্ছেন দেশ দুনিয়া ট্রাভেল্স-এর নন্দিনী সেন। তবে গতানুগতিক মন্দির নয়, এ বার না হয় চোখ জুড়োক জলপ্রপাতের সৌন্দর্যেই। তাই যোগ (কর্ণাটক), আথিরাপল্লি (কেরল), শিবসমুদ্রম (গোয়া), কুঞ্চিকাল (কর্ণাটক), কুরথালাম (তামিলনাড়ু) —এই জলপ্রপাতগুলিই হোক ছুটির ঠিকানা। নন্দিনী জানালেন, শিবসমুদ্রম হোক বা আথিরাপল্লি— বর্ষার শেষে সৌন্দর্যের চরমে ওঠে এই সমস্ত পাহাড়ি জলপ্রপাত। নিরিবিলিতে প্রকৃতিকে অনুভব করতে চাইলে সাধ্যের মধ্যেই পুজোর দিনগুলি দক্ষিণের জলপ্রপাতের কাছে কাটাতে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
কিন্তু পুজোর বাজারে পকেট বেসামাল? অতিরিক্ত ছুটি চাইতে গেলে কোথাও বা ‘বস’-এর চোখ রাঙানি। কিন্তু তা বলে কী পুজোয় পরিবার-বন্ধু মিলে ভিড় ঠেলা সেই ম্যাডক্সই শেষ গন্তব্য? মোটেও না। হাতে রয়েছে উত্তরবঙ্গ। তবে স্বাদ বদল এখানেও। ট্যুরিস্ট লজে বা রিসর্টে নয়— ছুটি কাটুক পাহাড়িয়া পরিবারের সঙ্গে, এক বাড়িতে, একই খাবারের টেবিলে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে মিশে যাক দক্ষিণের শহরের রোজনামচা।
দার্জিলিং হোক বা কালিম্পং, কার্শিয়াং— পর্যটকদের কাছে এখন আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে ‘হোম-স্টে’। হোটেল নয়, গেস্ট হাউস নয়, বড় রিসর্টও নয়, এ ক্ষেত্রে থাকার ব্যবস্থা পাহাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িতে। বাড়ির কোনও ঘরে যাঁরা পর্যটকের থাকার বন্দোবস্ত করেন। খাওয়া, আরাম, নিরিবিলির সঙ্গে উপরি পাওনা নির্ভেজাল আতিথেয়তা। হেল্প টুরিজম সংস্থার পক্ষ থেকে অসিত বিশ্বাস জানালেন, নিছক ঘোরা নয়, এলাকার মানুষের সঙ্গে সাংস্কৃতিক পরিচয় ঘটানোও ওই বিশেষ পর্যটনের লক্ষ্য। পাহাড়ি পরিবারের সঙ্গে বসে চা খেতে খেতে তাঁদের সুখ-দুঃখ, অভাব অভিযোগের কথা শোনা, নিজের কথা শোনানো— এ সবই পর্যটনের পরিধিকে আরও ব্যাপ্ত করছে। গতানুগতিক পর্যটনের বাইরে এই হোম-স্টে বিষয়টি ৃজনপ্রিয় করতে উদ্যোগী তাঁরা। প্রতিদিন থাকার খরচ মাথাপিছু ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
অসিতবাবু বললেন, ‘‘শুধু সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনই নয়, কোনও পর্যটক যখন ওঁদের বাড়ির বা কোনও গাছের বা ফুল পাখি পরিবেশের প্রশংসা করেন তখন ব্যবসার টানেই হোক না কেন, ওঁদের মধ্যে সচেতনতা জাগে। নিজেদের পরিবেশ, সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে ইন্ধনের কাজ করে।’’ তাই পায়ের তলায় সরষে আর হাতে দিন পাঁচেকের ছুটি— এতেই হোক কেল্লাফতে! ভিড়, থেকে দূরে কাটুক যত্নে জমানো ছুটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy