E-Paper

বইমেলার প্রাঙ্গণে এ বার ‘অভয়া চত্বর ত্রিকোণ পার্ক’

অন‍্যান্য বার মেলা প্রাঙ্গণের রিং রোড ঘেঁষা ওই অংশটিতে বিশাল শৌচাগার থাকে। বইমেলার মাঠের ডেকরেটরদের সরঞ্জামও ডাঁই করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৩
বইমেলার ‘অভয়া চত্বর ত্রিকোণ পার্কে’ বইপ্রেমীরা। সোমবার।

বইমেলার ‘অভয়া চত্বর ত্রিকোণ পার্কে’ বইপ্রেমীরা। সোমবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

পৃথিবীর শেষ সীমা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে! বইমেলার শেষ কোথায়, মোটামুটি পরিষ্কার। ন’নম্বর গেটের গা ঘেঁষে থাকা লিটল ম‍্যাগাজ়িন প‍্যাভিলিয়নের সীমানা শুরু হলেই পুরনো পাপীরা বইমেলার ‘প্রান্তিকতম স্টেশনে পৌঁছেছি’ বলে ধরে নেন! এখানেই ঘটেছে বিপত্তি! লিটল ম‍্যাগাজ়িন তল্লাটে না-ঢুকেই যাঁরা অন‍্যত্র সরে যাচ্ছেন, তাঁরা জানতেই পারছেন না যে, ওই মঞ্চের পিছনে আরও এক ঝাঁক স্টল রয়েছে।

অন‍্যান্য বার মেলা প্রাঙ্গণের রিং রোড ঘেঁষা ওই অংশটিতে বিশাল শৌচাগার থাকে। বইমেলার মাঠের ডেকরেটরদের সরঞ্জামও ডাঁই করা হয়। এ বার সেখানে বেশ কয়েকটি স্টল বসানো হয়েছে। শৌচালয় অন‍্যত্র সরেছে। আয়োজক সংস্থা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের কর্তারা জানাচ্ছেন, বইমেলার এক নম্বর গেটের কাছে স্টলের ভিড় কমানোর দরকার ছিল। সেখান থেকে ফুড কোর্টের পাশ দিয়ে হেঁটে অবাধ চলাচলের জায়গা রাখতেই কিছু স্টল লিটল ম‍্যাগাজ়িন মঞ্চের পিছনে সরানো হয়েছে। রবি ও সোম দু’দিন বইমেলায় সরস্বতী পার্বণের আমেজে বসে আক্ষেপ করছিলেন মেলার মাঠের প্রান্তিক স্টেশনের অবস্থানকারীরা। একটি নবীন প্রকাশনা লা স্ত্রাদার সুমিতা সামন্ত বললেন, “চেনাজানা কয়েক জন পাঠক অনেক খুঁজে এ দিকটায় পৌঁছলেও ঘুরতে ঘুরতে চলে আসা ফ্লাইং ক্রেতা বেশ কম!”

তবে, অবস্থানগত এই প্রতিকূলতা সামলাতে একটি রাস্তা এই স্টল প্রতিনিধিরা নিজেরাই বার করেছেন। ছ’নম্বর গেট ধরে ঢুকে সিধে রিং রোডে পৌঁছে বাঁ দিকে গেলেই বাঁ হাতে চোখে পড়ছে প্রান্তিক স্টলগুলি। দেখে মনে হয়, ৫৭৬ নম্বর স্টল থেকে ৬৩৪ নম্বর স্টলের পরিসর জুড়ে যেন একটি ত্রিভুজ। লিরিক‍্যাল প্রকাশনার সামরান হুদা এই ত্রিভুজকে মজা করে ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ বলে ডাকছিলেন। ওই চত্বরের স্টল-মালিকেরা এলাকাটির নাম ঠিক করেছেন, ‘অভয়া চত্বর ত্রিকোণ পার্ক’। বইমেলার মাঠে দেশ-বিদেশের বিখ‍্যাত সাহিত‍্যিক, সাংস্কৃতিক ব‍্যক্তিদের নামে সরণি বা গেট বরাবরই দেখা যায়। তা বলে, অভয়া নামের পার্ক সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে অভাবনীয়! কিন্তু পাঠককুলকে জায়গাটি চেনাতে অভয়া নামটি ব‍্যবহার করেই সমাজমাধ‍্যমে প্রচার হচ্ছে। রাবণ, পার্চমেন্ট, খোয়াবনামা, সৃষ্টিসুখ‍, ভিরাসত, তবুও প্রয়াসের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা ওই চত্বরেই রয়েছে।

বইমেলার মাঠে প্রতিবাদী কণ্ঠ বা বিতর্কের গন্ধ নিয়ে এ বার শুরু থেকেই ঘাবড়ে উদ‍্যোক্তারা। মুক্তমঞ্চ বন্ধ হয়েছে। আরটিআই প্রচার পুস্তিকার স্টলের (৪৬৪) তরফে প্রেস কর্নারে একটি আলোচনাসভা করতে চেয়েও তাঁরা সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ। কিন্তু আর জি কর-কাণ্ডের ছায়া বইমেলার মাঠেও প্রলম্বিত। এক নম্বর গেটের এপিডিআর-এর মুখপত্র অধিকারের স্টলে আর জি করের ঘটনায় সুবিচারের দাবির আওয়াজ উঠছে। এসএফআই-এর ছাত্রসংগ্রাম, ডিওয়াইএফ-এর যুবশক্তির স্টলেও বড় হরফের স্লোগান ‘তিলোত্তমা ভয় নাই’। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ টি-শার্টও বিকোচ্ছে। লিটল ম‍্যাগাজ়িনের ১৩৪ নম্বর টেবিলে রায়া দেবনাথ মেমোরিয়াল সোসাইটির ‘আই রাইজ’-এর স্টলেও আর জি কর নিয়ে পোস্টার। অহল‍্যা, অনীক-এর টেবিলেও বার্তা ‘আর নয় অভয়া’! মেলার মাঠ থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখতে চাইলেও রাজনীতির বার্তা তাই ঊহ‍্য থাকছে না।

তবে গিল্ড-কর্তা সুধাংশুশেখর দে জানান, এখনও পর্যন্ত দশ লক্ষের মতো লোক এসেছেন।
তবে, রিং রোডে চিত্রশিল্পী বা হস্তশিল্পের পসারিদের বসতে না দিতে বদ্ধপরিকর গিল্ডকর্তারা। ত্রিদিব চট্টোপাধ‍্যায় বললেন, “অভিযোগ, কিছু মাঠকর্মীর সঙ্গে যোগসাজশে অসদুপায়ে বসার জায়গা পান কোনও পসারি। তা ছাড়া, অত গাদাগাদিতে আগুনের শঙ্কাও বাড়ে। ওটা এ বার হতে দেব না।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Book Fair 2025

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy