Advertisement
০৯ মে ২০২৪
Calcutta national medical college & hospital

প্রশ্নে প্রসূতির রহস্য-মৃত্যু

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের বিল্ডিংয়ের পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় উদ্ধার হয় আছিয়া বিবির (৩২) দেহ।

আছিয়া বিবি।

আছিয়া বিবি। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২১
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালে রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে ফের এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলে দিল শহরের এক মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতির রহস্য-মৃত্যু।

সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের বিল্ডিংয়ের পিছনে পরিত্যক্ত জায়গায় উদ্ধার হয় আছিয়া বিবির (৩২) দেহ। রবিবার দুপুর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। প্রশ্ন, সকলের চোখ এড়িয়ে ওয়ার্ড থেকে ওই প্রসূতি বেরোলেন কী করে? প্রায় কুড়ি ঘণ্টা পরে হাসপাতাল চত্বরেই দেহ মিলল। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি নিখোঁজ হওয়ার পরে যথাযথ ভাবে তাঁর সন্ধান করা হয়নি? ওয়ার্ড থেকে রোগী নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়ার পরে কি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করা হয়েছিল? এই সমস্ত প্রশ্নের জালেই সোমবার সকাল থেকে বিদ্ধ ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়েছে স্বাস্থ্য ভবন। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলে এ দিন বিক্ষোভ দেখান তরুণীর পরিজনেরা। পরে বেনিয়াপুকুর থানা-সহ লালাবাজার থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।

২৬ অক্টোবর সন্দেশখালির বাসিন্দা আছিয়া ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি হন। পরের দিন, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর সিজ়ার মারফত কন্যা-সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তাঁর জামাইবাবু ইউনিস আলি মোল্লার অভিযোগ, ‘‘রবিবার দুপুর থেকে ওঁকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার অনুরোধ করায় আমাদের বলা হয়েছিল, রোগীকে নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। নিজেরাই খুঁজে নিন!’’

এর পরে ওই দিন রাতে বেনিয়াপুকুর থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন আছিয়ার পরিজনেরা। তাঁর আর এক আত্মীয় মিজানুর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘বিল্ডিংয়ের পিছনে ফাঁকা জায়গায় নর্দমার পাশে মাসিকে উপুড় হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মাথা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। হাত দু’টি পিছনে ছিল। হাত ও গলার কাছে ক্ষতচিহ্ন দেখে মনে হয়েছে, ইঁদুর বা বিড়ালে দেহ খুবলেছে।’’ পুলিশ ঘটনাস্থল রেলিং দিয়ে ঘিরেছে। লালবাজারের হোমিসাইড শাখা, ফরেন্সিক বিভাগ ঘটনাস্থল পরীক্ষা করে।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, উঁচু থেকে পড়ে, পাঁজর ও মেরুদণ্ড ভেঙে মৃত্যু হয়েছে আছিয়ার। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, যে জায়গায় দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেটি তিনটি বিল্ডিংয়ের পিছন দিক। আবর্জনায় ভরা ওই জায়গায় কেউ যান না। তবে নীচে পড়লে যে আওয়াজ হওয়ার কথা, তা কেউ শোনেননি বলেও তদন্তকারীরা জেনেছেন। দাবি, আছিয়ার হাত বাঁধা ছিল না। তাঁরা আরও জেনেছেন, ওয়ার্ডে আছিয়ার সঙ্গে তাঁর বোন ছিলেন। রবিবার দেড়টা নাগাদ তিনি জামা-কাপড় ধুতে যান। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে তদন্তকারীরা জেনেছেন, এর কয়েক মিনিট পরেই আছিয়া ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে ডান পাশে সিঁড়ির দিকে না গিয়ে বাঁ পাশের শৌচাগারের দিকে গিয়েছিলেন।

তদন্তে পুলিশ দেখেছে ওই শৌচাগারের একটি জানলায় ফাঁক রয়েছে। অনুমান, তা গলেই কার্ণিশে চলে যান আছিয়া। এক পুলিশকর্তা জানান, তাঁর দেহে কিছু এমন কিছু ময়লা লেগেছিল, যা কার্ণিশেও ছিল। আবার সেখানে কেউ নেমেছিলেন, তারও প্রমাণ মিলেছে। যদিও তরুণীর পরিজনের অভিযোগ, হাসপাতালের নজরদারি ঠিকঠাক থাকলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো যেত। কী কারণে এমন ঘটনা, তা ভাবাচ্ছে সকলকেই।

ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রী রোগ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সোমজিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রসবের পরে বিভিন্ন রকমের মানসিক সমস্যা হতে পারে। তবে ৭০-৭৫ শতাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ‘পোস্ট-পার্টাম ব্লুজ’। অর্থাৎ সামান্য মানসিক অবসাদ, কিছু ভাল না-লাগা। সদ্যোজাতকে নিয়ে চিন্তায় নিজের দিকে দেখার সময় থাকছে না। সাধারণত প্রসবের সপ্তাহ দুয়েক পরে এই সমস্যা হয়। তবে কারও দু’দিনের মধ্যেও মারাত্মক হতে পারে। এই সময় পরিবারের সমর্থন খুব জরুরি।’’

আছিয়ার সাত বছরের মেয়ে আর পাঁচ বছরের ছেলে রয়েছে। এটি তৃতীয় সন্তান। শ্বশুর মনসুর আলি মীর বলেন, ‘‘কেন এমন ঘটল, তা বুঝতে পারছি না। বাচ্চাগুলি মা ছাড়া থাকবে কী করে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE