শিক্ষণীয়: বেহালার ওই স্কুলে বসেছে ‘খুদে পার্লামেন্ট’। ছবি: রণজিৎ নন্দী
চলছে মন্ত্রিসভার বৈঠক। একে একে নির্দেশ আসছিল পরিবেশমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তরফে। প্রধানমন্ত্রীর খাতায় সে সব পরপর লেখাও হয়ে যাচ্ছিল। যা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে তত ক্ষণে তৎপর শ্রোতারা।
এই মন্ত্রিসভার নির্দেশেই গত কয়েক বছর ধরে বেহালার নতুনহাট এলাকার একটি স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে সচেতনতার বার্তা। পড়ুয়াদের হাত ধরে তা পৌঁছে যাচ্ছে তাদের আশপাশের পরিবেশেও। এ ভাবে সচেতনতা প্রচারের দায়িত্ব পেয়ে বেজায় খুশি ‘ভোলানাথ হালদার স্মৃতি গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড ফ্রি প্রাইমারি স্কুলের’ পড়ুয়ারা।
কী ভাবে চলে এই মন্ত্রিসভা? নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পড়ুয়াদের থেকেই সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত করা হয় বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীকে। যেমন, এ বছর প্রধানমন্ত্রী কোয়েল ভট্টাচার্য, পরিবেশমন্ত্রী চতুর্থ শ্রেণির শুভশ্রী মল্লিক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফসানা খাতুন। একে বলে ‘খুদে পার্লামেন্ট’। সপ্তাহে এক দিন মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়। তাদের দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশ খাতায় লিখে রাখেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সেই খাতা তুলে দেওয়া হয় প্রধান শিক্ষিকার হাতে। এর পরে সেই নির্দেশ পালনের পালা।
যেমন, এ সপ্তাহের জন্য পরিবেশমন্ত্রীর নির্দেশ, মিড-ডে মিলের রান্নাঘরের ঝুল ও আবর্জনা সাফাই করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, খাওয়ার আগে সবাই সাবান দিয়ে ঠিক মতো হাত ধুচ্ছে কি না, সে দিকেও নজর রাখতে হবে। এ নিয়ে স্কুল সংলগ্ন এলাকায় আরও এক বার সচেতনতার প্রচার চালাতে হবে।
এই খুদে পার্লামেন্ট গত কয়েক বছরে পড়ুয়াদের অনেকটাই যে বদলে দিয়েছে তা মানছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বর্ণালী সেনগুপ্ত। কী ভাবে? ‘‘নিজেই শুনে নিন পড়ুয়াদের থেকে,’’ —বললেন প্রধান শিক্ষিকা। পরিবেশমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, ‘‘বইয়ে পড়েছি জল নষ্ট করতে নেই। তাই যে জলে হাত ধুই, সেটাই গাছে দিই আমরা। এমনকি, চাল ধোয়ার জলও গাছে দিয়ে থাকি, শৌচালয়ে ব্যবহার করি।’’ বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য বিশাল জলাধার করা হয়েছে স্কুলে।
শুধু নিজেরা শিখেই থেমে থাকে না পড়ুয়ারা। বর্ণালীদেবী বলেন, ‘‘ওরা প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস, রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের পাশাপাশি ২২ মার্চ ‘বিশ্ব জল দিবস’, ১৯ নভেম্বর ‘বিশ্ব শৌচালয় দিবস’ এবং ১৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব হাত ধোওয়া দিবস’ পালন করে। ওই দিনগুলিতে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সচেতনতার প্রচার চালায় ওরা।’’ পড়ুয়ারা বলল, ‘‘সাবান দিয়ে হাত যে ধুতে হয়, অনেকেই তা জানেল না। ‘বিশ্ব হাত ধোওয়া দিবসে’ বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেটাই শিখিয়েছিলাম। শৌচাগার ব্যবহার না করলে কী ভাবে দ্রুত রোগ ছড়ায়, তা শিখিয়েছি ‘বিশ্ব শৌচালয় দিবসে’।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ওদের কথা মেনেই গত পুজোয় জামাকাপড়ের সঙ্গে একটা ওয়াটার ফিল্টারও কিনে এনেছি।’’
ছোট্ট এই স্কুলের প্রয়াসকে স্বীকৃতি দিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০১৮ সালে মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের কাছ থেকে স্বচ্ছ বিদ্যালয়ের পুরস্কার পেয়েছে এই স্কুল। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকে মিলেছে যামিনী রায় পুরস্কারও।
তবে এত কিছুর পরেও পড়ুয়াদের বড় আক্ষেপ, স্কুলে যদি বাগান করার আরও জায়গা মিলত! তা হলে সেখানে আনাজ এবং ওষধির গাছ লাগানো যেত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy