Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Coromandel Express accident

পিজিতে মৃত্যু করমণ্ডল দুর্ঘটনায় আহত যুবকের

গত আট দিন ধরে এসএসকেএমের আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা শুভেন্দু। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পিজিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে।

An image of the youth

শুভেন্দু বেজ। —ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ০৭:২৯
Share: Save:

ভয়াবহ সেই রাতে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় ছিলেন দুই ভাই। পরিজনদের আশা ছিল, ছোট ছেলের মতো হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে বড় ছেলেও। শারীরিক অবস্থার সাময়িক উন্নতিতে সেই আশা কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের বাড়িতে আর ফেরা হল না বছর একুশের শুভেন্দু বেজের। শনিবার রাতে এসএসকেএমে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। তাঁর মৃত্যুতে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৯৩।

গত আট দিন ধরে এসএসকেএমের আইটিইউ-তে চিকিৎসাধীন ছিলেন ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের আলমপুর গ্রামের বাসিন্দা শুভেন্দু। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পিজিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল তাঁকে। পরিজনদের অভিযোগ, দুর্ঘটনায় ওই যুবক মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট পেলেও বালেশ্বরে প্রথমে তেমন কোনও চিকিৎসাই পাননি তিনি। পরে এন আর এসে এনে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানেও যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরিজনেরা। শুভেন্দুর কাকা শ্রীকান্ত বেজ বলেন, ‘‘এন আর এসে চিকিৎসায় অনেক গাফিলতি ছিল। আমরা কোথাও কোনও অভিযোগ এখনও জানাইনি। তবে আইনি পদক্ষেপ করার চিন্তাভাবনা করেছি।’’

গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা, পেশায় খেতমজুর বাদল বেজের বড় ছেলে শুভেন্দু মাধ্যমিক পাশ করার পরে সংসারের হাল ধরতে জরির কাজ শেখেন। গ্রামবাসীদের থেকে জেনে মাস সাতেক আগে প্রথমে চেন্নাইয়ে গিয়ে জরি শিল্পের কাজে যোগ দেন। পরে তাঁর ভাই পঙ্কজও চেন্নাইয়ে গিয়ে সেই কাজে যোগ দেন। মাসকয়েক আগে দু’জনে বাড়ি ফেরেন। কাজে যোগ দিতে ২ জুন ওঠেন করমণ্ডল এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায়। শ্রীকান্ত জানান, প্রথমে টিভি দেখে তাঁরা দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। এর পরে পঙ্কজ ফোন করে জানান, ‘‘কামরা উল্টে গিয়েছে। চোখে, পায়ে খুব লেগেছে। দাদাকে (শুভেন্দু) খুঁজে পাচ্ছি না।’’ এই খবর পেয়েই বালেশ্বর পৌঁছে যান বাদল ও অন্য পরিজনেরা। ফকিরমোহন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পঙ্কজের খোঁজ মেলে। কিন্তু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না শুভেন্দুকে। শেষে ওই হাসপাতালের একতলায় শয্যার নীচে পড়ে থাকতে দেখা যায় ওই যুবককে।

শ্রীকান্ত বলেন, ‘‘আমরা বলার পরে চিকিৎসা শুরু হয়। সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, মাথায়-বুকে চোট রয়েছে। ওই হাসপাতাল থেকে রেফার করে দেওয়া হয়।’’ প্রথমে গোপীবল্লভপুরের হাসপাতালে, পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয় শুভেন্দুকে। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় এর পরে এসএসকেএম বা এন আর এসে পাঠানোর কথা বলা হয়। অভিযোগ, পিজিতে আসার পথে অ্যাম্বুল্যান্সের চালক এন আর এসে নিয়ে চলে যান। শ্রীকান্তের কথায়, ‘‘সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছিল। আর সামর্থ্য ছিল না। এন আর এসে ভর্তি নিলেও চিকিৎসা শুরু হয় তিন দিন পরে।’’ সিটি স্ক্যানে দেখা যায়, শুভেন্দুর বুকে রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। কিছুটা রক্ত বার করা হয়। কিন্তু অবস্থা ক্রমশ সঙ্কটজনক হওয়ায় ১০ জুন তাঁকে পিজিতে পাঠানো হয়। এন আর এস কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা কোনও অভিযোগ পাননি। প্রয়োজন মতো সবই করা হয়েছিল।

অন্য দিকে, দুর্ঘটনায় বাঁ চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন পঙ্কজ। পরিজনেরা বলছেন, ‘‘আর ভিন্‌ রাজ্যে যেতে দেব না। ঘরের ছেলে ঘরে থাকুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coromandel Express accident Death PG Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE