E-Paper

দেড় দশক পরে সন্ধান মিললেও ফের নিখোঁজ বিহারের যুবক

গণপিটুনি শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। জানাজানি হয় যুবকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও। বিহারের ওই পরিবার যখন কলকাতায় আসার তোড়জোড় শুরু করেছে, তখনই হাসপাতাল থেকে ফের উধাও হয়ে গেলেন সেই যুবক।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৪ ০৬:১৩
নিখোঁজ হওয়ার আগে বারাসত হাসপাতালে লালেবাবু।

নিখোঁজ হওয়ার আগে বারাসত হাসপাতালে লালেবাবু। —নিজস্ব চিত্র।

গণপিটুনির একের পর এক ঘটনা কার্যত ইতিবাচক রূপে ধরা দিয়েছিল বিহারের বাসিন্দা একটি পরিবারের কাছে।

পনেরো বছর আগে ওই পরিবারের এক ছেলে মানসিক সমস্যা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই ছেলেকে রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরতে দেখে ছেলেধরা সন্দেহে বেঁধে রাখা হয়েছিল। গণপিটুনি শুরুর ঠিক আগের মুহূর্তে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। জানাজানি হয় যুবকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও। বিহারের ওই পরিবার যখন কলকাতায় আসার তোড়জোড় শুরু করেছে, তখনই হাসপাতাল থেকে ফের উধাও হয়ে গেলেন সেই যুবক।

ঘটনার পরে বিমর্ষ বিহারের সাসারামের রোতাস এলাকার বাসিন্দা ওই পরিবার। যুবকের আত্মীয় মহম্মদ ওয়াসিম জানান, দেড় দশক আগে তাঁর কাকা মহম্মদ আনোয়ার আলি ওরফে লালেবাবু নিখোঁজ হয়ে যান। লালেবাবু মিষ্টির দোকানে বাক্স তৈরির কাজ করতেন। গ্রামের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম হলেও সম্পর্ক টেকেনি। মেয়েটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে তিনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরে এক দিন কাজে বেরিয়ে আর ফেরেননি।

সেই লালেবাবুকেই ছেলেধরা সন্দেহে বনগাঁর মেদিয়াপাড়ায় এক দিন স্থানীয় লোকজন রাস্তায় বেঁধে রাখেন। তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে বনগাঁ হাসপাতাল ও পরে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। গত পয়লা জুলাই লালেবাবুকে বারাসত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাঁকে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে খবর দেওয়া হয় হ্যাম রেডিয়োকে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগবিশ্বাস জানান, যুবকের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু সম্প্রতি তাঁরা জানতে পারেন, লালেবাবু হাসপাতাল থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন। অম্বরীশ বলেন, ‘‘আমরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করছি ওই যুবকের সন্ধান পেতে। পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। ছেলেটির হাতে চ্যানেলও করা রয়েছে।’’ একই ভাবে বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তরফেও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে ঘটনাটি জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’

এ দিকে, ছেলে আবার হারিয়ে গিয়েছে শুনে গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন লালেবাবুর মা নাজারিন বিবি। ওই গ্রামের ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি দীপু কুমার বলেন, ‘‘ছেলে বেঁচে নেই বলেই ধরে নিয়েছিল লালেবাবুর পরিবার। তাঁর খোঁজ মিলেছে জানতে পেরে সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন নাজারিন। কিন্তু ছেলে ফের নিরুদ্দেশ জানতে পারার পর থেকেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন।’’

রোতাসের ওই গ্রামের বাসিন্দারা হ্যাম রেডিয়োকে জানিয়েছেন, খাতায়কলমে লালেবাবু ১০ বছর আগে নিখোঁজ বলে লেখা হলেও, আদতে তিনি দেড় দশকের কাছাকাছি সময় নিরুদ্দেশ। শুরুর দিকে ঘটনাটি পুলিশে জানানো হয়নি। সম্পত্তির ভাগাভাগির সময়ে লালেবাবুর সইয়ের প্রয়োজন ছিল। তখন তিনি যে নিরুদ্দেশ, তা পুলিশকে জানায় পরিবার।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Missing Mob Lynching police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy