ফ্রেমবন্দি: ছবি তোলা চলছে উত্তর কলকাতায়। ক্যামেরা না আসায় দক্ষিণ কলকাতা কিছু এলাকায় তা ব্যাহত হয়। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
কলকাতা পুরসভার ডাকে পোলিও শিবিরে আধার কার্ড করাতে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হল শিশু-সহ কয়েক হাজার মা-কে। কারণ, কার্ড করানোর লোকেরাই ছিলেন না সেখানে! ঢাকঢোল পিটিয়ে পুরসভা পোলিও শিবিরে আধার কার্ডের ছবি তোলার কথা ঘোষণা করা সত্ত্বেও। রবিবার সকাল ৯টার পরে পোলিও খাওয়ানো শুরু হলেও দক্ষিণ কলকাতার বহু কেন্দ্রে কার্ড করানোর লোকজনই ছিলেন না। প্রচণ্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ওই মা ও শিশুদের নাজেহাল অবস্থা হয়। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও এই দুর্ভোগ মেনে নিয়ে ভুল স্বীকার করেছেন।
পুরসভার যুক্তি, যে সংস্থাকে ছবি তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা ঠিক মতো কাজ না করাতেই সমস্যা। প্রশ্ন উঠেছে, যে সংস্থার হাতে পুরসভা দায়িত্ব দিয়েছিল, তারা কতটা নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করা হয়েছিল কি? হয়ে থাকলে এখন দায় কে নেবে?
মেয়র জানান, যে সংস্থা ওই দায়িত্বহীন কাজ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ওই সংস্থাকে নিয়ে কাজ না করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এক পুরকর্তা।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভার সোশ্যাল সেক্টর আধার কার্ড করার দায়িত্ব পেয়েছে। ওই দফতরের যে আধিকারিক কাজটি দেখেন, তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছেন শাসক দলের মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান-সহ কাউন্সিলরেরাও। পুরসভা সূত্রে খবর, এক দিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের আধার কার্ড করাতে হবে, নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই মতো কলকাতায় ওই বয়সের বাচ্চাদের আধার কার্ড করানোর দিন ঠিক হয়েছিল রবিবার, ২ এপ্রিল। সোশ্যাল সেক্টর দফতর থেকে ১৪৪টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের জানানো হয়, এ দিন পোলিও খাওয়ানোর কেন্দ্রে শিশুদের আধার কার্ডের ছবি তোলা হবে। মাইক সহযোগে তা প্রচারের জন্যও বলা হয়েছিল কাউন্সিলরদের। সেই মতো সকাল ৯টা থেকে পোলিও কেন্দ্রে শিশু-সহ মায়েদের ভিড় বাড়ে।
আরও পড়ুন: বন্দিদের জন্য নিরন্তর লড়াই চালাচ্ছেন জেল খাটা মুনমুন
স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর এলাকা কালীঘাটের কাছে পুরসভার এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ২ বছরের ছেলের আধার কার্ড করাতে এসেছিলেন নমিতা সাউ। ঘণ্টা তিনেক গরমে ছেলে কোলে নিয়ে হাসফাঁস করেছেন। বললেন, ‘‘শুনলাম ছবি তোলার লোক আসেনি। তা হলে ডাকা হয়েছিল কেন? ছেলে কাহিল হয়ে পড়েছে। এখন কাউন্সিলর বলছেন, আজ হবে না।’’ এই কেন্দ্রে ৮৬০ জন ছবি তুলতে এসেছিলেন। মাত্র ৫৭ জনের ছবি উঠেছে।
৮ নম্বর বরোর আর এক কেন্দ্রে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্লান্ত হয়ে পড়েন ছোট্ট স্বস্তিকের মা টিঙ্কু দে। বলেন, ‘‘ছেলে কোলে এতক্ষণ থাকা যায় না। ক্যামেরা আসবে না তো আসতে বলেছিল কেন?’’ দক্ষিণ কলকাতার ৮৩, ৮৪, ৮৫, ৮৯, ৯১, ৯৪, ৯৮, ৯৯, ১০০-সহ বেহালার ১১৩, ১১৭, ১১৮, ১১৯, ১২০, ১২২ নম্বর ওয়ার্ডে ছেলে কোলে মায়েরা অপেক্ষা করলেও পৌঁছয়নি ক্যামেরা। এ ছাড়া, ৮৭, ৮৮, ৯২, ৯৩, ৯৫-সহ আরও অনেক ওয়ার্ডে ক্যামেরা ঢুকেছে অন্য ওয়ার্ডের কাজ শেষ করে। কোথাও আবার এই সব ওয়ার্ডের ক্যামেরা নিয়ে অন্য ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
যেমন, দক্ষিণ কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনের পোলিও কেন্দ্রের কাজ শেষ করে ওই ক্যামেরা যায় ঢাকুরিয়ার আমরি-র পাশে বস্তির কাছে একটি কেন্দ্রে। সেখানে বিকেল ৪টের পরেও ছবি তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সকাল ৯টায় আসা শিশু ও তাদের মায়েরা। পুরসভার চেয়ারপার্সন-সহ মেয়র পারিষদ, বরো চেয়ারম্যান এবং শাসক ও বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডেও ক্ষোভ উপচে পড়েছে পুরসভার বিরুদ্ধে।
অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ শাসক দলের একাধিক কাউন্সিলরও। তাঁদের কথায়, এত তাড়াহুড়োর কী ছিল? আগে ডিজিটাল রেশন কার্ড তৈরির সময়েও সোশ্যাল সেক্টরের অপদার্থতা সামনে এসেছিল। এ বারও একই হাল। ছোট্ট শিশুদের কথা ভেবে আগেভাগে সব ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।
যারা এখন আধার কার্ডের ছবি তোলাতে পারল না, তাদের কী হবে?
মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, মোট ৫টি সংস্থাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দু’টি সংস্থার কাজে গাফিলতি হয়েছে। কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনা করে ওই সব কেন্দ্রে (যেখানে ছবি তোলা হয়নি) ফের আধার কার্ডের ছবি তোলানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy