Advertisement
E-Paper

জেলে চার বিক্রেতা: মদ বিক্রিতে বয়স যাচাই হবে না কেন

আইনের নিষেধ আছে। তা সত্ত্বেও কিশোরদের হাতে অনায়াসে মদ পৌঁছে যাচ্ছে কী ভাবে, সানি পার্ক অ্যাপার্টমেন্টে আবেশ দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যুর পরে সেই প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরদের মদ বিক্রির অভিযোগে ধৃত চার জনকে বৃহস্পতিবার এক দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আলিপুর আদালত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৬ ০৪:০৯

আইনের নিষেধ আছে। তা সত্ত্বেও কিশোরদের হাতে অনায়াসে মদ পৌঁছে যাচ্ছে কী ভাবে, সানি পার্ক অ্যাপার্টমেন্টে আবেশ দাশগুপ্তের রহস্যমৃত্যুর পরে সেই প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিশোরদের মদ বিক্রির অভিযোগে ধৃত চার জনকে বৃহস্পতিবার এক দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠিয়েছে আলিপুর আদালত। আজ, শুক্রবার ফের এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা।

মদ-মাদক-তামাকের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, আইন যা আছে, খাতায়-কলমেই। কার্যক্ষেত্রে তা বলবৎ করার তাগিদ তেমন দেখা যায় না। সেই জন্য মোড়ে মোড়ে দোকানে দোকানে বিড়ি-সিগারেট দেদার বিক্রি করা হচ্ছে ছোটদেরও। আর কিশোরদের যে নির্বিচারে মদও বিক্রি করা হচ্ছে, আবেশ-কাণ্ডে সেটা প্রমাণিত।

এই সব ক্ষেত্রে, বিশেষত কিশোরদের মদ-মাদক-তামাক বিক্রি না-করার আইন কেন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন জোরদার হচ্ছে। ক্রেতা কিশোর না তরুণ, অর্থাৎ মদ বা মাদক কেনার আইনি বয়স তার হয়েছে কি না— সেই বিষয়ে প্রমাণপত্র দেখে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে বিক্রেতাদের একাংশের অভিমত। তাই প্রশ্ন উঠছে, মদ বিক্রির ক্ষেত্রে বয়স যাচাইয়ের ব্যবস্থাই বা হবে না কেন? আইনকে বাস্তবে প্রয়োগের তাগিদ থেকেই তো সেই বন্দোবস্ত করা দরকার!

গত ২৩ জুলাই আবেশ এবং তার বন্ধুদের মদ বিক্রি করার অভিযোগে ধৃত চার জনকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাঁদের মধ্যে তিন জন সুধাংশু দত্ত, সৌম্যজ্যোতি সাহা ও রাজেশ সাহাকে বুধবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করে পুলিশ। বালিগঞ্জের একটি মদের দোকানের মালিক হিসেবেই গ্রেফতার করা হয় সৌম্যজ্যোতি-রাজেশকে। সুধাংশুকে গ্রেফতার করা হয় মদ প্রস্তুতকারক সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। দোকানের সিসিটিভি-তে দেখা গিয়েছে, আবেশদের মদ বেচছেন সুধাংশু। পুলিশ তাঁকে দিন দুয়েক দোকান বন্ধ রাখতে বলেছে বলে জানান সৌম্যজ্যোতির বাবা অসীমকুমার সাহা। বুধবার রাতেই মহাদেব পুরকাইত নামে আরও এক জনকে ধরা হয়। তিনি শরৎ বসু রোডের একটি মদের দোকানের মালিক।

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আবেশরা গত শনিবার দুপুরে প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি ক্লাবে খেতে গিয়েছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে তারা প্রথমে শরৎ বসু রোড এবং পরে বালিগঞ্জের একটি দোকান থেকে মদ কেনে। মৃত আবেশের বন্ধুদের জেরা করে ওই দু’টি দোকানের হদিস পায় পুলিশ। তার পরে দুই দোকানের সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখে আবেশের বন্ধুদের বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করে চার জনকে গ্রেফতার করে।

রাজ্যের আবগারি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯০৯ সালের বেঙ্গল এক্সাইজ অ্যাক্ট বা আবগারি আইন অনুযায়ী কিশোর-কিশোরীদের মদ বিক্রি করার কথাই নয়। ওই আইনের ৫১সি ধারায় বলা হয়েছে, ২১ বছরের কম বয়সিদের মদ বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আইন ভেঙে কেউ কিশোর-কিশোরীদের মদ বেচলে তাঁর তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। এমনকী বাতিল হতে পারে তাঁর দোকানের লাইসেন্সও। কিন্তু আবগারি আইনে গ্রেফতারের কোনও সংস্থান নেই। তাই আবেশ-মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে জুভেনাইল জাস্টিস আইনের ৭৭ ধারার সাহায্য নিয়েছে পুলিশ। ওই ধারায় নাবালকদের মদ বা তামাক জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করলে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা সাত বছরের জেল হতে পারে।

বিক্রেতাদের তরফে যুক্তি দেখানো হচ্ছে, কেনাবেচার সময় সব ক্ষেত্রে চটজলদি ক্রেতার বয়স অনুমান করে ওঠা যায় না। অনেক সময় সন্দেহ হলেও ক্রেতারা জোর দিয়ে দাবি করেন, তাঁদের বয়স একুশ-বাইশের বেশি। নথিপত্র দেখে সেই দাবির সত্যতা যাচাই করে নেওয়ার উপায় থাকে না। আবেশ-মামলায় ধৃত মদ বিক্রেতাদের দুই আইনজীবী সুব্রত গোস্বামী ও সঞ্জয় বসু এ দিন আলিপুরের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সৌগত রায়চৌধুরীর এজলাসে জানান, কোনও ক্রেতাকে দেখে যদি ২১ বছরের কম বয়সি মনে হয়, তা হলে তাকে মদ বিক্রি করা হয় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাকে দেখে বয়স আঁচ করা কঠিন হয়। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধির পর্বে স্রেফ স্বাস্থ্য দেখে কিশোর আর তরুণের মধ্যে পার্থক্য বোঝা সম্ভব নয়। আবার সন্দেহভাজন কোনও ক্রেতাকে বয়স জিজ্ঞাসা করলে সে সত্যি বলছে কি না, তৎক্ষণাৎ সেটা পরীক্ষা করে নেওয়ারও কোনও উপায় নেই।

তবে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষালের অভিযোগ, আবেশরা কিশোর বুঝেও অভিযুক্ত দোকানদারেরা তাদের মদ বিক্রি করেছিলেন। তাই ওই বিক্রেতাদের জুভেনাইল জাস্টিস আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মদ বিক্রেতারা দায় এড়াতে পারেন না।

Abesh Dasgupta Murder Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy