Advertisement
E-Paper

অভিমন্যুর অপমৃত্যু: দোষীর দ্রুত শাস্তি চায় সেনাবাহিনী

সলমন খানের উদাহরণ টানছে সেনাবাহিনী। ২০০২ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে চার ফুটপাথবাসীকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সে মামলা এখনও চলছে। মাঝে মারা গিয়েছেন ঘটনার এক সাক্ষী। আদালত সলমনকে মুক্তি দিলেও মহারাষ্ট্র সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৬ ২০:৫৪
রেড রোডে নিহত বায়ুসেনা অফিসার অভিমন্যু গৌড়।

রেড রোডে নিহত বায়ুসেনা অফিসার অভিমন্যু গৌড়।

সলমন খানের উদাহরণ টানছে সেনাবাহিনী।

২০০২ সালে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে চার ফুটপাথবাসীকে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সে মামলা এখনও চলছে। মাঝে মারা গিয়েছেন ঘটনার এক সাক্ষী। আদালত সলমনকে মুক্তি দিলেও মহারাষ্ট্র সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে।

বুধবার ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে রেড রোড লাগোয়া ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউয়ে বেপরোয়া গাড়ির চাকার তলায় পিষে মারা গিয়েছেন বায়ুসেনার অফিসার অভিমন্যু গৌড়। শুক্রবার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র উইং কম্যান্ডার এস এস বিরদি বলেন, ‘‘অভিমন্যুর পরিবারকে আমরা কথা দিয়েছি, প্রকৃত দোষীকে শাস্তি দেওয়া হবে। এবং খুব তাড়াতাড়ি যাতে সে সাজা পায় তাও দেখা হবে।’’ আর এ প্রসঙ্গেই সলমন-মামলার প্রসঙ্গ টানছেন সেনা অফিসারদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, সে বার মুম্বইয়ে সলমনের গাড়ির তলায় মারা গিয়েছিলেন চার জন ফুটপাথবাসী। দীর্ঘ দিন ধরে সে মামলা চলেছে। সলমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ওই মামলা থেকে বাঁচতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছেন তিনি। সেই গরীব মানুষগুলোর পাশে সে ভাবে কেউ দাঁড়ায়নি। বায়ুসেনার অফিসারেরা জানাচ্ছেন, অভিমন্যুর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী।

অভিযোগ, প্রভাবশালী বলে এখনও সাজা খাটতে হয়নি সলমনকে। এ দিকে বুধবারের ঘটনার তদন্তের কাজ যত এগোচ্ছে, ততই অভিযুক্ত হিসেবে আরও পরিষ্কার ভাবে উঠে আসছে তৃণমূল নেতা, ব্যবসায়ী মহম্মদ সোহরাবের ছোট ছেলে সাম্বিয়ার নাম। এই পরিবারও প্রভাবশালী বলে পরিচিত। শুধু রাজনৈতিক প্রভাব নয়, প্রচুর বিত্তশালী সোহরাবের অর্থের প্রভাবও রয়েছে। পুলিশের বেশ কিছু অফিসারের সঙ্গে তাঁর বহুদিনের ‘সম্পর্ক’। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, নিজের ছেলেকে বাঁচাতে সেই প্রভাব খাটানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবেন সোহরাব। এত দিনের ‘সম্পর্কের’ মূল্য চাইবেন পুলিশের কাছ থেকে। অভিযুক্ত সাম্বিয়ার বিয়ে হয়েছে মাত্র দিন কয়েক আগে। এই অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি চালানোর অভিযোগে তাঁর জেল-যাত্রা আটকানোর চেষ্টা করবেন সোহরাব।

বৃহস্পতিবার রাতে শানুর পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, সে দিন গাড়ি সাম্বিয়াই চালাচ্ছিলেন বলে শানু ফোনে তাঁদের জানিয়েছেন। ফলে, সে অর্থে এই ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে উঠে আসছে শানুর নাম। ফলে অভিযোগের ফাঁস আরও চেপে বসছে সাম্বিয়ার উপরে। যদিও শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ নিশ্চিত করে সাম্বিয়ার নাম বলেনি। শুধু বলেছে, গাড়িতে একাধিক ব্যক্তি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ঘটনায় তদন্তে নেমে এ দিন রিপন স্ট্রিটে সাম্বিয়ার বাড়িতে পুলিশ যায়। সেখানে শুধু নিরাপত্তারক্ষীরাই ছিলেন। আর রাখা ছিল তিনটি বিদেশি গাড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, সাম্বিয়ার বাড়ির যে ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তাতেও দেখা গিয়েছে সে দিন ভোরে বাড়িতে সোহরাব ও তাঁর বড় ছেলে আম্বিয়া থাকলেও সাম্বিয়া ছিলেন না। মঙ্গলবার রাত থেকে সাম্বিয়া বন্ধুদের নিয়ে কলকাতার এক পানশালায় অনেকক্ষণ সময় কাটান বলেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। সাম্বিয়ার সঙ্গে সে সময়ে তাঁর দুই বন্ধু জনি ও শানু ছিলেন। এমনকী, বুধবার দুর্ঘটনার পরে বিকেলে তাঁরা একসঙ্গে কোলাঘাটে ছিলেন বলেও পুলিশ মোবাইল ঘেঁটে জানতে পারে। সে রাতে পুলিশের একটি দল কোলাঘাটে গেলেও তাঁদের হদিশ পাননি বলে সূত্রের খবর। সেনাবাহিনীর তরফে বলা হয়েছে, পুলিশি এই তদন্তের উপরে তাঁরা প্রতিনিয়ত নজর রাখছে।

ওই পথ দুর্ঘটনার পরে একটি তদন্ত শুরু করেছে সেনাবাহিনীও। সেখানে সেনা ও বায়ুসেনার অফিসারেরা রয়েছেন। বিরদি বলেন, ‘‘সে দিন ঘটনাস্থলে সবার আগে সেনাবাহিনীর কুচকাওয়াজ চলছিল। তার পরে গোলন্দাজ বাহিনী, বায়ুসেনা, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা ছিল। সে দিনের দুর্ঘটনায় ছাত্র-ছাত্রীরাও আহত হতে পারত। আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য যোগাড় করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও আমাদের নিজস্ব সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। এ সব তথ্য আমরা পুলিশের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি।’’ এ দিনও বিরদি জানান, তাঁরা কথা বলে জানতে পেরেছেন সে দিন ঘাতক গাড়িতে একজনই ছিলেন।

জানা গিয়েছে, যে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন সেনা অফিসারেরা, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন দাবি করেছেন, তাঁরা এতটাই স্পষ্ট করে সে দিন ঘাতক গাড়ির চালককে দেখেছেন যে সামনে সেই ব্যক্তিকে দেখে শণাক্তও করতে পারবেন। সেনা অফিসারদের মতে, সে দিন গাড়িতে যে ব্যক্তি ছিলেন, তিনি ছাড়া অন্য কাউকে অভিযুক্ত বলে দাঁড় করালে আপত্তি জানাবে প্রত্যক্ষদর্শীরাই। মহম্মদ সোহরাব বা তাঁর পরিবারের লোকেদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে এ দিন তৃণমূলের নেতা, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কড়া বার্তা দিয়েছেন, সেখানে নরম কোনও মনোভাব নেওয়া হবে না।’’

ঘাতককে ধরতে না পারলেও পুলিশ ইতিমধ্যে রেড রোড চত্বরের নিরাপত্তা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার দেশের ৬৮ তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে বিজয় স্মারকে শ্রদ্ধা জানান সেনা, বায়ুসেনা ও বিমানবাহিনীর কর্তারা। প্রতি বছর এই দিনে দেশের জন্য প্রাণ দেওয়া সেনা অফিসার ও জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। সেই সময়ে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন ছিল সেখানে।

শনিবার ভোরে ওই রেড রোড এলাকায় আবার কুচকাওয়াজের মহড়া হবে বলে সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে।

red road incident car army
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy