Advertisement
০৭ মে ২০২৪

বেড়াতে গিয়েই শেষ ঘোরার স্বপ্ন

পেশায় টাঁকশালের কর্মী বটুকনাথ ভট্টাচার্য মেয়ে, স্ত্রী এবং সহকর্মীদের সঙ্গে গত ৩ অক্টোবর অরুণাচলপ্রদেশ বেড়াতে গিয়েছিলেন। ১২ অক্টোবর কলকাতা ফেরার কথা ছিল তাঁদের। শনিবার বিকেলে চিন সীমান্তে সফর সেরে, বুম-লা ঘুরে ফেরার সময়ে বটুকবাবুদের গাড়ি খাদে পড়ে যায়।

বটুকবাবুর বৃদ্ধা মা মালাদেবী।

বটুকবাবুর বৃদ্ধা মা মালাদেবী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:২৯
Share: Save:

নিয়ম করে বছরে দু’বার বেড়াতে যাওয়া ছিল তাঁর নেশা। জানুয়ারি মাসে সপরিবার কেরল বেড়াতে যাবেন বলে টিকিটও কাটা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁর আর যাওয়া হবে না।

পেশায় টাঁকশালের কর্মী বটুকনাথ ভট্টাচার্য মেয়ে, স্ত্রী এবং সহকর্মীদের সঙ্গে গত ৩ অক্টোবর অরুণাচলপ্রদেশ বেড়াতে গিয়েছিলেন। ১২ অক্টোবর কলকাতা ফেরার কথা ছিল তাঁদের। শনিবার বিকেলে চিন সীমান্তে সফর সেরে, বুম-লা ঘুরে ফেরার সময়ে বটুকবাবুদের গাড়ি খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বটুকবাবু ও তাঁর স্ত্রী লিপি ভট্টাচার্যের। বরাতজোরে বেঁচে গিয়েছেন মেয়ে সারণী। তিনি অরুণাচলপ্রদেশের তেজপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে বাড়ির লোকেরা জানতে পেরেছেন। রবিবার বিকেলে মেটিয়াবুরুজ থানার উমেশ নিয়োগী রোডে বটুকবাবুর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, পরিজনেরা উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছেন। শোকস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও। বটুকবাবুর দিদি সুকৃতীদেবীর বলেন, ‘‘ভাইয়ের বেড়ানোর নেশা ছিল খুব। এই সময়ে ওকে পাহাড়ে যেতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু ও কারও কথা শুনল না।’’ দোতলার বাড়িতে বটুকবাবুদের যৌথ পরিবারের বাস। দাদা সুব্রত ভট্টাচার্য একটি দোকান চালান। বটুকবাবুর এক মাত্র মেয়ে সারণী বিবেকানন্দ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। বৃদ্ধা মা মালা ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘ছেলের বেড়ানোর খুব নেশা ছিল। বছরে দু’বার বেড়াতে যেত। দুর্যোগের সময় পাহাড়ে যেতে নিষেধ করেছিলাম।’’

দিদি সুকৃতীদেবী কাছেই থাকেন। সহকর্মীরা শনিবার রাতে মেটিয়াবুরুজে বটুকবাবুর বাড়িতে এসে প্রথম দুঃসংবাদ দেন। রবিবার সকাল থেকেই বটুকবাবুদের বাড়িতে ভিড় বাড়তে থাকে। স্বামী-স্ত্রীর এ হেন অকালমৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পাড়ার লোকেরা। স্থানীয়েরা বটুকবাবুকে সমাজসেবী হিসেবেই চিনতেন। তিনি পাড়ার একটি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ক্লাবটির সভাপতি দেবদাস বিশ্বাসের কথায়, ‘‘পাড়ার ছেলেমেয়েদের নিয়ে নানা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকতেন বটুকদা। উনি চলে যাওয়ায় আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।’’ তাঁদের দেহ আনতে আজ, সোমবার পরিবারের লোকেরা অরুণাচল প্রদেশের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন বাড়ির লোকেরা। তবে তাঁদের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা বিধায়ক কেউই না আসায় ক্ষুব্ধ মৃতের দাদা সুব্রতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছুই জানতে পারছি না। আমার ভাইঝি বেঁচে থাকলেও ওর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানি না। মৃতদেহ কী ভাবে নিয়ে আসা হবে সে বিষয়েও উদ্বিগ্ন রয়েছি। এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার আমাদের পাশে দাঁড়ালে খুবই উপকৃত হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE