মৌলালি মোড়ে অবাধেই চলছে হেলমেটহীন সফর। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
ভোরে বেপরোয়া গতির জন্য ঘটে গিয়েছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। মারা গিয়েছেন মডেল-অভিনেত্রী সোনিকা সিংহ চৌহান। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। একই দিনে দু’টি মোটরবাইক দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়েছে দুই শিশুর। তার পরেও শনিবার রাতে শহরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দেখা মিলল না পুলিশের। কয়েকটি জায়গায় ধরা পড়ল তালা বন্ধ কিয়স্কের ছবি। কোথাও আবার পুলিশ থাকলেও তাঁরা মশগুল আড্ডায়।
শ্যামবাজার মোড়
রাত সাড়ে ১১টা: বাড়ি ফেরার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কয়েক জন। নিয়মমাফিক ট্র্যাফিক সিগন্যাল কখনও সবুজ, কখনও লাল হচ্ছে। কিন্তু এখানে সিগন্যাল মানা বা না-মানা নির্ভর করছে গাড়িচালকদের মর্জির উপরে। সিগন্যাল লাল হলে কেউ দাঁড়িয়ে পড়ছেন। কেউ আবার, রাতে কেউ দেখবে না এই ভেবে তীব্র গতিতে ছুটিয়ে দিচ্ছেন গাড়ি। পাঁচ মাথার মোড় বলে সতর্ক হওয়ার কোনও বালাই নেই। কিয়স্কে পুলিশ নেই। আশপাশে দু’জন ট্র্যাফিক সার্জেন্টকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেল বটে। আড্ডায় মশগুল নিজেদের মধ্যে। কিছুক্ষণ পরে চলে গেলেন সেই দুই সার্জেন্টও। রাতের শ্যামবাজারে তখন গাড়িচালকদের যথেচ্ছাচার।
কিয়স্ক আছে, পুলিশ নেই। পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে।
মৌলালি মোড়
রাত সাড়ে ১২টা: লেনিন সরণি ও সিআইটি রোডের মোড়ে এক পাশে বসানো ট্র্যাফিক পুলিশের ডিজিটাল স্ক্রিনে ফুটে উঠছে ‘লেন মেনে গাড়ি চালান’। যদিও ত্রিসীমানায় নেই কোনও ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী। চোখে পড়েনি পুলিশ কিয়স্ক। ফলে রাত বাড়তেই লরি, গাড়ি, ট্যাক্সির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছে মোটরবাইক। অধিকাংশ বাইকেই সওয়ার তিন জন। হেলমেট নেই কারওরই। ওই অবস্থায় তীব্র গতিতে ট্রাম লাইনের উপর দিয়ে বাঁক নিতে গিয়ে কাত হয়ে পড়লেও ভ্রূক্ষেপ নেই কোনও তরুণ-তরুণীর।
শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সিগন্যালের তোয়াক্কা না করে চলছে গাড়ি। আড্ডায় মশগুল ট্র্যাফিক সার্জেন্ট।শনিবার রাতে।
রাত পৌনে ১টা: ময়দান লাগোয়া পুলিশ কিয়স্কে তালা ঝুলছে। কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ তো দূর অস্ত্, দেখা মিলল না পুলিশের টহলদার গাড়িরও। সিগন্যাল সবুজ না লাল— তোয়াক্কা না করে যে যেদিকে পারছেন গাড়ি ছোটাচ্ছেন। হেলমেটহীন মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য অন্য দিনের মতোই দেখা গিয়েছে এই মোড়ে। এজেসি বসু রোড উড়ালপুল থেকে মা উড়ালপুলের দিকে যাওয়া গাড়িগুলি জোর গতিতে উড়ালপুলের মুখে নেমে সজোরে ব্রেক কষছে। কারণ, বাইপাসগামী লেনটি গার্ডরেল দিয়ে আটকানো। ফলে গাড়িগুলি ব্রেক কষে ফের উড়ালপুলের নীচের লেনে ঢুকতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খেতেও দেখা গেল কয়েক বার।
গড়িয়াহাটে রাস্তার মাঝেই চলছে খুদেদের খেলাধুলো। নেই নজরদারি।
রাত ১টা: গড়িয়াহাট মোড়ে দু’টি বাচ্চা ছেলে সাইকেল নিয়ে এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তারই মাঝখান দিয়ে ছুটে আসছে কখনও গাড়ি, কখনও বিশাল লরি। তন্নতন্ন করে দেখেও কোনও ট্র্যাফিক পুলিশ চোখে পড়ল না। গড়িয়াহাট থেকে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ ধরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও দেখা মেলেনি পুলিশকর্মীর। দেশপ্রিয় পার্কের পুলিশ কিয়স্কও ফাঁকা। ছিল না কোনও টহলদার গাড়িও। অথচ সপ্তাহ শেষে ঘুরতে বেরিয়ে অনেকেই পরিবার নিয়ে সে সময়ে বাড়ি ফিরছিলেন। রাসবিহারী চার মাথার মোড়ে চেতলার দিকের ফুটপাথে চেয়ার নিয়ে কয়েক জন পুলিশ ও এক সার্জেন্টের দেখা পাওয়া গিয়েছে।
কী বলছে পুলিশ
পুলিশ কর্তাদের কোনও বক্তব্য মেলেনি। যুগ্ম-কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকার ফোন ধরেননি। হোয়াটসঅ্যাপ বা এসএমএস করলেও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy