E-Paper

‘ভূতের’ হাতেই পাচার লাইসেন্স প্রাপ্ত কার্তুজ, শঙ্কা এসটিএফের

গোয়েন্দাদের অনুমান, রাজ্য জুড়ে যে গুলিবৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ব্যবহার হচ্ছে এই কার্তুজই। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কার্তুজ কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেই হিসাব রাখা এবং নজরদারি চালানোর কথা পুলিশের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪১
নজরে: জীবনতলায় কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনায় বি বা দী বাগে একটি বন্দুকের দোকানে তদন্তে এসটিএফের আধিকারিকেরা। শনিবার।

নজরে: জীবনতলায় কার্তুজ উদ্ধারের ঘটনায় বি বা দী বাগে একটি বন্দুকের দোকানে তদন্তে এসটিএফের আধিকারিকেরা। শনিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

লালবাজারের কাছেই অস্ত্র-কার্তুজ বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান। বি বা দী বাগের সেই দোকান থেকেই বেআইনি ভাবে কার্তুজ বা গুলি পাচার হয়ে পৌঁছে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীদের হাতে। শুক্রবার ওই কার্তুজ পাচার বা বিক্রি করার সময়ে হানা দিয়ে সেই দোকানের কর্মচারী-সহ মোট চার জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। গোয়েন্দাদের অনুমান, রাজ্য জুড়ে যে গুলিবৃষ্টি হচ্ছে, তাতে ব্যবহার হচ্ছে এই কার্তুজই। লাইসেন্সপ্রাপ্ত কার্তুজ কী ভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেই হিসাব রাখা এবং নজরদারি চালানোর কথা পুলিশের। সেখানে এই ঘটনা প্রশ্ন তুলেছে, ওই নজরদারিতে বড় ফাঁক থাকা নিয়েই।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলার ঈশ্বরীপুরে হানা দিয়ে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম জয়ন্ত দত্ত, আব্দুল সেলিম গাজি, আশিক ইকবাল ও হাজি রশিদ মোল্লা। সেই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে ৭.৬৫ এমএম পিস্তলের ১৯০ রাউন্ড কার্তুজ। সেই সঙ্গে একটি দোনলা বন্দুক এবং সেটির নয় রাউন্ড গুলিও উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। ধৃতদের মধ্যে জয়ন্ত মধ্য কলকাতার অস্ত্র-কার্তুজ বিক্রির দোকানের কর্মী। তার বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে। সেলিম এবং আশিকের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদে। রশিদের বাড়ি জীবনতলাতেই।

রাজ্য পুলিশের এসটিএফের একটি বিশেষ দল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ওই দিন জীবনতলার ঈশ্বরীপুরে আব্দুল রশিদ গাজির বাড়িতে হানা দেয়। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ওই পরিমাণ বন্দুকের গুলি। এসটিএফ জানিয়েছে, জয়ন্ত কার্তুজ নিয়ে শুক্রবার জীবনতলায় পৌঁছে গিয়েছিল। উদ্দেশ্য, তা বাকিদের হাতে তুলে দেওয়া। ওই হাত বদলের সময়ে হানা দেয় এসটিএফের একটি দল। ধৃতদের ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কার্তুজ উদ্ধার হয়। মেলে দোনলা বন্দুকও।

গোয়েন্দারা জেনেছেন, সরকারি অস্ত্র কারখানা থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অস্ত্র-কার্তুজ বিক্রির জন্য দোকানে আনা হত। যা কেনা হত ৩০০-৩৫০ টাকায়। দুষ্কৃতীদের কাছে তা বিক্রি করা হত কমপক্ষে ৫০০ টাকায়। কত দিন ধরে ওই কার্তুজ দোকান থেকে বাইরে পাচার করা চলছিল, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। এসটিএফের এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, যে দোকান থেকে ওই কার্তুজ এনেছিল জয়ন্ত, সেটি চিহ্নিত করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর নেতৃত্বে গোয়েন্দাদের একটি দল দোকানটিতে হানা দেয়। রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে তল্লাশি চলে। গোয়েন্দারা বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে সিল করে দেওয়া হয় দোকানটি। দোকানে থাকা গুলির স্টক এবং রেজিস্টার বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, যে পরিমাণ জিনিস মজুত থাকার কথা, তা-ই রয়েছে কিনা। কী ভাবে ওই কার্তুজ বেরিয়ে যাচ্ছিল, তা-ও জানার জন্য এই হানা বলে গোয়েন্দা-কর্তা জানিয়েছেন।

এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, ধৃতেরা জেরার মুখে স্বীকার করেছে যে, তারাই কলকাতা থেকে জীবনতলায় ওই কার্তুজ নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছিল। অনুমান, অস্ত্র-কার্তুজ বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে অভিযুক্ত কর্মচারী জয়ন্ত সে সব সরিয়ে বিক্রি করতে গিয়েছিল। তবে, ওই দোকানের আরও কেউ এই ঘটনায় জড়িত কিনা, তা দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। দোকানটির কার্তুজ বা গুলির হিসাব মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ দিন এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, কলকাতার অস্ত্র-কার্তুজ বিক্রির লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে ‘ফ্যাক্টরি মেড’ পিস্তলের গুলি দুষ্কৃতীদের হাতে গিয়ে পড়ছে।

শহরের বুক থেকে আগেও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে পুলিশের দাবি, এ বারের মতো বিপুল পরিমাণ কার্তুজ একসঙ্গে উদ্ধার করা হয়নি। এর জন্য সর্ষের মধ্যেই ভূত থাকার দাবি করছেন গোয়েন্দারা। যে ‘ভূতের’ হাত ধরেই লাইসেন্সপ্রাপ্ত কার্তুজ পাচার হয়ে যাচ্ছে।

ধৃতদের এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। কী কারণে ধৃতেরা ওই পরিমাণ কার্তুজ মজুত করেছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। ধৃতদের সঙ্গে বাইরের অস্ত্র কারবারিদের যোগাযোগ আছে কিনা, তা-ও দেখা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

STF Lalbazar

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy