Advertisement
E-Paper

যাদবপুরে ধৃত ন’জনই নিজেকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণের চেষ্টায়, কেউ কেউ আঙুলও তুলেছেন অন্যদের দিকে

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল থেকে দু’টি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই জোড়া ডায়েরি এবং একটি চিঠি ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এই নিয়েও ধৃতদের বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ১৪:০০
photo of Ju student death

—ফাইল চিত্র।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে গত ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী ঘটেছিল? কী ভাবে মৃত্যু হল ছাত্রের? এই প্রশ্নগুলির উত্তর পেতে মরিয়া তদন্তকারীরা। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই ন’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন প্রাক্তনী এবং কয়েক জন পড়ুয়া। তাঁদের জেরা করে মৃত্যুর কিনারা করতে চাইছেন তদন্তকারীরা। কিন্তু জেরায় ধৃতরা একেক জন একেক রকম বয়ান দিচ্ছেন বলে দাবি পুলিশের। তাঁদের বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতরা সকলেই নিজেদের ‘বাঁচানোর চেষ্টা’ করছেন। অর্থাৎ, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চাইছেন। কেউ কেউ আবার একে অন্যের বিরুদ্ধেও আঙুল তুলছেন। কিন্তু কে সঠিক কথা বলছেন? তা যাচাই করতেই এখন উঠেপড়ে লেগেছেন তদন্তকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেল থেকে দু’টি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই জোড়া ডায়েরি এবং একটি চিঠি ঘিরে রহস্য তৈরি হয়েছে। এই নিয়েও ধৃতদের বয়ানে নানা অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত ১০ অগস্ট হস্টেলে তল্লাশি চালিয়ে ৬৮ নং ঘর থেকে একটি ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছিল। ওই ঘরেই থাকতেন নির্যাতিত ছাত্র। তবে সেই ডায়েরিতে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। সৌরভকে গ্রেফতারের পর তাঁকে জেরাপর্বে একটি চিঠির বিষয় উঠে আসে। সেই চিঠির সূত্র ধরেই গত ১২ অগস্ট রাতে ওই ১০৪ নম্বর ঘরে তল্লাশি চালিয়েছিল পুলিশ। তার পরই উদ্ধার করা হয় দ্বিতীয় ডায়েরি। ডায়েরির ১৫১ নম্বর পৃষ্ঠায় ওই চিঠির উল্লেখ রয়েছে। চিঠিটি কে লিখেছিলেন? এই নিয়েও নানা বয়ান উঠে এসেছে। নিহত ছাত্রকে দিয়ে চিঠিটি লেখানো হয়েছিল বলে দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু ধৃত ছাত্র দীপশেখর দত্ত জেরায় দাবি করেন যে, নির্যাতিত ছাত্রের হয়ে তিনিই চিঠিটি লিখেছিলেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, হস্টেলের ১০৪ নম্বর ঘরে থাকতেন ধৃত পড়ুয়া মনোতোষ ঘোষ। ওই ঘরেই গত ৯ অগস্ট রাত ৯টার পর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নির্যাতিত ছাত্রকে। সেখানে চিঠি লেখানোর পরিকল্পনা করেছিলেন ধৃত সৌরভ চৌধুরী এবং সপ্তক কামিল্যা। কিন্তু সৌরভ দাবি করেছেন, চিঠি লেখার সময় তিনি ছিলেন না। তদন্তকারীদের দাবি, চিঠির ছবি তুলে এক জনকে তা পাঠিয়েছিলেন সৌরভ। এই চিঠি এবং ডায়েরি নিয়ে ধৃতদের দাবির কতটা সত্যতা রয়েছে, তা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, ৯ অগস্ট রাতে মেন হস্টেলে ঠিক কী ঘটেছিল— এই নিয়ে ধৃতদের মধ্যে বয়ানে নানা অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের আলাদা আলাদা ভাবে জেরা করা হচ্ছে। তবে কে সঠিক কথা বলছেন, তা যাচাই করতে তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হতে পারে। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হয়নি।

গত ৯ অগস্ট, বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর বাড়ি নদিয়ায়। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। র‌্যাগিংয়ের কারণে মৃত্যু বলে অভিযোগ করে ছাত্রের পরিবার। ছেলের মৃত্যুতে হস্টেলের আবাসিকদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ছাত্রের বাবা। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছে কলকাতা পুলিশ। এই ঘটনায় গত শুক্রবার প্রথম গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং হস্টেলের আবাসিক সৌরভ চৌধুরীকে। রবিবার সকালে আরও দু’জনে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁরা হলেন দুই পড়ুয়া দীপশেখর দত্ত এবং মনোতোষ ঘোষ। তাঁদের জেরা করে বুধবার আরও ছ’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানা এলাকার বাসিন্দা অসিত সর্দার, মন্দিরবাজারের সুমন নস্কর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার বাসিন্দা সপ্তক কামিল্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। বাকিরা, জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং)। শুক্রবার সপ্তককে যাদবপুর হস্টেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণও করা হয়।

JU Student Death Jadavpur University Student Death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy