যাদবপুর থানার সামনে প্রতিবাদ পড়ুয়াদের। রবিবার।
যাদবপুরে তাঁকে ঘিরে ফের ছাত্র আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা চলছে। তাঁর হেনস্থার প্রতিবাদেই শনিবার রাতভর ঘেরাও করে রাখা হয় যাদবপুর থানা।
অথচ সোমবার দেখা গেল, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে সেই ছাত্রই অনুপস্থিত। শুধু তা-ই নয়, পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগও দায়ের করেননি তিনি। অভিযোগ জমা দেননি বিশ্ববিদ্যলয়-কর্তৃপক্ষের কাছেও। এমনকী এ দিন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ তাঁদের দাবি নিয়ে উপাচার্যকে যে-স্মারকপত্র দিলেন, তাতে শনিবারের ঘটনার কোনও উল্লেখই করা হয়নি।
যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ এ দিন ফের আন্দোলন শুরু করার কথা জানিয়ে দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনও ঘটনা ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। যদিও উপাচার্যের কাছে জমা দেওয়া দাবিপত্রে এই বিষয়টির উল্লেখ করেননি তাঁরা। শনিবারের ঘটনা নিয়ে ফের আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা হলেও স্মারকলিপিতে সেই ঘটনার উল্লেখ করা হল না কেন? কেনই বা এ দিন ওই ছাত্রকে দেখা গেল না আন্দোলনে?
আন্দোলনকারী এক ছাত্রের জবাব, ‘‘ও (অভিজিৎ সালুই) খুব লাজুক। তাই প্রকাশ্যে সামনে আসতে চাইছে না। সংবাদমাধ্যমের সূত্রে বিষয়টি বাড়ির লোকেদের নজরে চলে আসবে। তাই ও আসেনি।’’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ব্যাখ্যা, মাস দশেক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুলিশ ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের উপরে যে-নির্যাতন চালিয়েছিল, তার প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনের ঝাঁঝ ক্রমশ কমে এসেছে। ফের আন্দোলন জোরদার করার জন্য একটা উপলক্ষ খুঁজছিলেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। শনিবার রাতের ঘটনাকে সেই উপলক্ষ বানিয়ে থানা ঘেরাও করে এবং উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীরা এ দিন উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে যে-স্মারকলিপি দিয়েছেন, তা কার্যত গত বছরের দাবিপত্রেরই অনুলিপি। এ বারের স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়েছে: বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজার বাইরে থেকে পুলিশ পিকেট তুলে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বর থেকে খুলে নিতে হবে সব সিসিটিভির ক্যামেরা। একই সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, এসবি (স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ)-র গোয়েন্দারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে তাঁদের উপরে নজর রাখছেন। তা বন্ধ করতে হবে।
পড়ুয়াদের সঙ্গে আলোচনা যথেষ্ট শান্তিপূর্ণ ও ইতিবাচক হয়েছে বলে উপাচার্য জানান। তিনি বলেন, ‘‘পিকেট সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ইতিমধ্যেই পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে-সব জায়গায় সিসিটিভির ক্যামেরা রয়েছে, খোঁজ নিয়ে সবই খুলে ফেলার ব্যবস্থা হবে। যাদবপুরের কোনও ছাত্রকে গ্রেফতার বা আটক করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে পুলিশকে।’’
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার রাত ৮টা নাগাদ। ওই দিন যাদবপুর থানার পিছন দিকের রাস্তায় চা খাচ্ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভিজিৎ সালুই। রাজকুমার মণ্ডল নামে যাদবপুর থানার এক অফিসার তখন থানায় ঢুকছিলেন। অভিজিৎকে রাস্তা থেকে সরে যেতে বলায় দু’জনের বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, বচসার মধ্যেই অভিজিৎ ওই পুলিশ অফিসারকে ধাক্কা দিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেন। ওই পুলিশ অফিসার তার পরে ছাত্রটিকে থানায় নিয়ে যান। পরে বিষয়টি মিটেও যায়।
কিন্তু কিছু পরেই এক দল ছাত্রছাত্রী থানার বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা দাবি তোলেন, পুলিশকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা নিয়ে শুরু হয় টালবাহানা। শনিবার রাতভর অবস্থানের পরে রবিবারেও দুপুর পর্যন্ত অবস্থান চলে। তখনও দেখা যায়নি অভিজিৎকে। পরে যাদবপুর থানার ওসি দুঃখ প্রকাশ করায় অবস্থান উঠে যায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ছাত্র আন্দোলন নিয়ে এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুরে বারবার এ-রকম হচ্ছে কেন, তা নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের দরকার আছে। ছাত্রদের অসন্তোষ নিয়ে আলোচনা দরকার। আলোচনার রাস্তা যেন বন্ধ না-হয়। কাউন্সেলিং ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy