Advertisement
E-Paper

‘অ্যাসিড আক্রমণের জন্য জীবন থেমে যেতে পারে না’

অ্যাসিড হামলার শীর্ষে এই রাজ্য, তবু আক্রান্তদের জন্য না আছে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা, না আছে সরকারি চাকরির আশ্বাস। অন্য দিকে, অপরাধীরাও ঘুরে বেড়ায় অবাধে।কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চেষ্টা করে চললেও চাকরি ক্ষেত্রে এখনও কার্যত ব্রাত্য অ্যাসিড আক্রান্তেরা।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:২৮
চন্দ্রহাস মিশ্র এবং সঞ্চয়িতা দে যাদব।

চন্দ্রহাস মিশ্র এবং সঞ্চয়িতা দে যাদব।

ক্ষত তো হয়ই। শারীরিক ও মানসিক, দু’দিকেই বড় তীব্র সেই ক্ষত। কিন্তু তা নিয়ে বসে থাকলে পেট ভরে না। ঘরে ও বাইরে রোজকার লড়াই চালাতে প্রয়োজন হয় কাজের, দৈনন্দিন রোজগারের। আর সেই কাজই করে চলেছেন দিল্লির চন্দ্রহাস মিশ্র।

কয়েক জন তরুণীকে যৌন হেনস্থার প্রতিবাদ করেছিলেন ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে চন্দ্রহাস। সেই অপরাধে তাঁকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় অ্যাসিড। দেড় বছর কেটে গিয়েছে একের পর এক অস্ত্রোপচার আর আইনি লড়াই করতে করতেই। ইতিমধ্যে হয়ে গিয়েছে অন্তত ১৮-২০টি অস্ত্রোপচার! এখনও বাকি চিকিৎসা। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল ছাড়েননি চন্দ্রহাস। আরও কারা অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছেন, ইন্টারনেট ঘেঁটে খুঁজতে শুরু করেন। পাশাপাশি, আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল থাকায় চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারছেন। কিন্তু যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য নেই?

চন্দ্রহাসের কথায়, “খুঁজতে খুঁজতে একটি সর্বভারতীয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নাম জানতে পারি। সেখানে যোগ দিই। উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং দিল্লিতে যাঁরা অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করি। কারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, কারা চিকিৎসা করাতে পারছেন, সেই খোঁজ নিতে শুরু করি।”

এই খোঁজ নিয়ে থেমে যাওয়া নয়। এর পরে অ্যাসিড আক্রান্ত ওই যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভাবতে শুরু করেন চন্দ্রহাস। যাঁদের যোগ্যতা রয়েছে, তাঁদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি যাঁদের প্রথাগত ডিগ্রি নেই, তাঁদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করান। আর এ ভাবেই লকডাউনে অন্তত সাত জনের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করিয়েছেন তিনি। অ্যাসিড আক্রান্ত একটি গোটা পরিবারকে ব্যবসা দাঁড় করাতে সাহায্য করেছেন। চন্দ্রহাস বলেন, “অ্যাসিড আক্রমণের জন্য জীবন থেমে যেতে পারে না। আর আমি চাই না কাউকে দিয়ে জোর করে তাঁর অপছন্দের কাজ করাতে। তাই প্রত্যেকের যোগ্যতা অনুযায়ী চেষ্টা করে চলেছি তাঁদের পছন্দের জীবন যাপন করার ব্যবস্থা করে দিতে।’’

দিল্লি, উত্তরাখণ্ড বা উত্তরপ্রদেশের অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে চন্দ্রহাস রয়েছেন। কিন্তু এই রাজ্যের অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে? কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চেষ্টা করে চললেও চাকরি ক্ষেত্রে এখনও কার্যত ব্রাত্য অ্যাসিড আক্রান্তেরা। আর তাই কেউ কেউ নিজেদের মতো করে পথ বেছে নিয়েছেন।

এমনই এক জন সঞ্চয়িতা দে যাদব। যাঁরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের, শুধুমাত্র টাকার অভাবে আইনি লড়াই চালাতে পারেন না, সেই রকম একটি মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ওই অসহায় পরিবারগুলিকে লড়াই করার সাহস জুগিয়ে চলেছেন।

দমদমের বাসিন্দা সঞ্চয়িতার উপরে অ্যাসিড হামলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। স্নাতক স্তরে পড়াশোনার পাশাপাশি এনসিসি করতেন ওই যুবতী। আর সেই সুবাদে বরাবরের ইচ্ছে ছিল পুলিশে চাকরি করার। কিন্তু অ্যাসিড আক্রমণের ওই ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। হামলায় নষ্ট হয়ে যায় একটি চোখ, ঝলসে যায় মুখের একাংশ।

বছর ছয়েক পরে সেই সঞ্চয়িতাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে বিয়েও করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় জ্বলজ্বল করছে তাঁর পোস্ট, “অ্যাসিড মেরে আমার মুখ পুড়িয়েছে, কিন্তু আমার স্বপ্নগুলো নষ্ট করতে পারেনি।” সত্যিই তাঁর মনের জোর দমাতে পারেনি অ্যাসিড। ওই যুবতীর কথায়, “মুখের ক্ষতের কারণে অনেক অফিস প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু মানসিক জোর হারাইনি।’’

অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েও মনের জোরে লড়ে চলেছেন এমন অনেক সঞ্চয়িতা বা চন্দ্রহাসেরা। কিন্তু কাজ কোথায়? কাজ পেলে ওঁরাও জানেন, পাশের লোকটির থেকে তাঁরা কোনও অংশে কম নন। অ্যাসিড তো ক্ষত সৃষ্টি করেছে শরীরে আর মনে। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ওঁরা যে অনন্য।

Acid Attack Acid Attack Victims Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy