বাতিল: রবিবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনার পরে বন্ধ হয়ে যায় ইকো পার্কের সমস্ত রাইড। মঙ্গলবার খুলে ফেলা হল তারই একটি। নিজস্ব চিত্র
নিউ টাউনের ইকো পার্কে জয়রাইড দুর্ঘটনায় জখম তিন বছরের রিয়ান নায়েকের সঙ্কট এখনও কাটেনি। তার দিদি মনীষার শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভাল হলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরে তাদের বাবা সুব্রত নায়েক বলেন, ‘‘প্রার্থনা করুন, যাতে আমার সন্তানেরা সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরে।’’
গত রবিবার সন্ধ্যায় আচমকা ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল ইকো পার্কের ‘জাম্পিং বেলুন’। অভিভাবকদের চোখের সামনেই হাওয়ায় ফোলানো বেলুন থেকে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ে শিশুরা। ওই ঘটনায় রিয়ান-সহ মোট ১৩টি শিশু জখম হয়েছিল। চিনার পার্ক সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে পাঁচটি শিশুকে দত্তাবাদের কাছে বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। রিয়ান-মনীষা ছাড়া অন্য তিনটি শিশুর নাম হল, ঊর্বী শর্মা, জাতিকা শর্মা এবং স্বর্ণিমা কৌশল।
রিয়ানের পরিবারের তরফে সৌরভ মুখোপাধ্যায় জানান, মঙ্গলবার সকালে রিয়ানকে ভেন্টিলেশন থেকে এক বারের জন্য বার করা হয়েছিল। কিন্তু শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়ায় আবার তাকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টা পার না হলে কিছু বলা সম্ভব নয়। সৌরভ আরও জানান, এরই মধ্যে রবিবার সন্ধ্যা থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে রিয়ান। তার মস্তিষ্কে যে তিন জায়গায় রক্ত জমাট বেঁধেছে, সেখানে অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না চিকিৎসকেরা। মনীষার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সৌরভ বলেন, ‘‘ওর অবস্থার উন্নতি হয়েছে। উপর থেকে পড়ে শরীরের ডান দিকের অংশে চোটের পাশাপাশি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
ঊর্বী শর্মার পায়ে এ দিন একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার বোন জাতিকার মাথায় চোট। স্বর্ণিমা কৌশলের বাবা সন্তোষ কৌশল জানান, মেয়ের তলপেটে চোট ছিল। চিকিৎসকেরা তরল খাবার দিতে বলেছেন। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই তিন জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। দ্রুত তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এ দিন রিয়ান-সহ বাকিদের দেখতে হাসপাতালে যান পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
দুর্ঘটনার পরে এ দিনই প্রথম খুলেছিল ইকো পার্ক। সোমবার অনির্দিষ্টকালের জন্য ইকো পার্কের সমস্ত জয়রাইড বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন পুরমন্ত্রী। সেগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পরেই পুনরায় রাইড চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। সেই মতো এ দিন বোটিং, বুল রাইড, টয় ট্রেন, সাইক্লিং, গাড়ি করে ইকো পার্ক ঘোরার যে ব্যবস্থা, তা বন্ধ রাখা হয়। খুলে নেওয়া হয় বুল রাইড। উদ্যান আদৌ খোলা থাকবে কি না, তা জানতে চেয়ে একাধিক ফোন আসে ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের দফতরে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত রাইড যে বন্ধ থাকবে, সে কথা জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। ইকো পার্কের এক কর্মী জানান, এমনিতে গড়ে সাড়ে সাত হাজার দর্শক হয়। সেই তুলনায় এ দিন ভিড় বেশ কম ছিল।
রাইড বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে হিডকো চেয়ারম্যানকে একটি রিপোর্ট জমা করার কথা বলেছিলেন পুরমন্ত্রী। হিডকো সূত্রের খবর, ঝড়ে রাইড কেন উল্টে গেল, তা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। ওই রাইডের বরাত প্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাকে সরানো হতে পারে। গাফিলতি প্রমাণ হলে আইনি পদক্ষেপ করার কথাও ভাবা হচ্ছে। দর্শকেরা যাতে নিশ্চিন্তে বাচ্চাদের নিয়ে ইকো পার্কে আসেন তা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন পুরমন্ত্রী।
পটনা থেকে আগত সঞ্জীব মাধোগেরিয়া বলেন, ‘‘টয় ট্রেন, সাইক্লিং পর্যন্ত বন্ধ। ইকো পার্ক দেখাব বলেই ছেলেকে কলকাতায় নিয়ে এলাম। এসে খুব হতাশ হয়েছি।’’ তবে রিয়ানের শারীরিক অবস্থারও খোঁজ নিলেন কেউ কেউ। দমদমের বাসিন্দা কল্পনা চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বাচ্চাটা সুস্থ হয়ে উঠুক, সেই প্রার্থনাই করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy