E-Paper

‘মনে হচ্ছে, এই হস্টেলে আমরা সকলেই যেন খুনি বা অপরাধী’

সোমবার দুপুরে ফার্মাসি বিভাগের পঞ্চম বর্ষের এক ছাত্র ক্লাস করতে যাবেন বলে হস্টেল থেকে বেরোচ্ছিলেন। প্রশ্ন করায় ব‌ললেন, ‘‘সকলেই কেমন যেন সন্দেহের চোখে দেখছেন আমাদের।”

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৩ ০৭:১৩
An image of Jadavpur University Hostel

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ছাত্রাবাস। —ফাইল চিত্র।

তাঁদের কাছে এ এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। শুধু অদ্ভুত নয়, অভূতপূর্বও বটে। কেউ কেউ তাঁদের দেখে ফিসফাস করছেন। কেউ আবার সরাসরি বলেই ফেলছেন। কেউ হয়তো আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন যে, কাজটা তাঁরা মোটেই ভাল করেননি। যাদবপুর থানার পাশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের বেশ কয়েক জন আবাসিক জানাচ্ছেন, গত ৯ অগস্ট তেতলার বারান্দা থেকে পড়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই অদ্ভুত একটি পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। কারণ, বাইরের অনেকেরই ধারণা, ওই ঘটনার জন্য মেন হস্টেলের আবাসিকদের সকলেই দায়ী। সেই কারণে, তাঁরা সকলেই এখন সন্দেহের পাত্র।

সোমবার দুপুরে ফার্মাসি বিভাগের পঞ্চম বর্ষের এক ছাত্র ক্লাস করতে যাবেন বলে হস্টেল থেকে বেরোচ্ছিলেন। প্রশ্ন করায় ব‌ললেন, ‘‘সকলেই কেমন যেন সন্দেহের চোখে দেখছেন আমাদের। আমার বিভাগের এক জন তো বলেই ফেলল, ‘কী রে, ছেলেটাকে র‌্যাগিং করে মেরেই ফেললি?’ শুনে আমি রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। শুধু বন্ধুরা কেন, বাড়ি থেকেও ফোন করে বলেছে, ‘আমাদের খুব চিন্তা হচ্ছে, এ সবের মধ্যে তুই আবার ছিলি না তো?’ কী অবস্থা ভাবুন।’’ ওই ছাত্রের কথায়, ‘‘প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছি ৯ অগস্টের পর থেকে। মনে হচ্ছে, যেন আমরা সকলেই র‌্যাগিংয়ে যুক্ত।’’

ক্লাস করতে যাওয়ার আগে ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বললেন, ‘‘আমাদের হস্টেলের দুটো ব্লক। ৬০০ মতো আবাসিক রয়েছে। তাদের মধ্যে কিছু ছেলে হয়তো জড়িত ওই ঘটনার সঙ্গে। তাদের তো পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে আটক এবং গ্রেফতারও করছে। অথচ, মনে হচ্ছে, গোটা হস্টেলই যেন র‍্যাগ করেছে ওই ছেলেটিকে। অনেকে এমনও বলছেন, ‘তোদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে না তো? তোদের হস্টেলে এ রকম মেরে ফেলার মতো র‌্যাগিং হয়?’ কী আর উত্তর দেব।’’

তেতলা থেকে পড়ে নাবালক সেই ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই যাদবপুরের মেন হস্টেলের ভিতরে বাইরের কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিল না পুলিশ। এ দিন অবশ্য হস্টেলের যে বারান্দা থেকে ওই ছাত্র পড়ে যায়, সেখানে পৌঁছনো গিয়েছিল। হস্টেলের তেতলার লম্বা বারান্দায় কয়েক জন ছাত্র দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদেরই এক জন জানালেন, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে তাঁর বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছে করছে। প্রবল মানসিক চাপে পড়াশোনাতেও ঠিক মতো মনোনিবেশ করতে পারছেন না। অথচ, সামনেই পরীক্ষা। ওই ছাত্র বললেন, ‘‘মানসিক শান্তি পেতে কয়েক দিনের জন্য যে বাড়ি যাব, এখন যেন তারও উপায় নেই। কারণ, আমাকে হঠাৎ দেখলেই পাড়ার লোকজন ভাবতে পারেন, হয়তো ঘটনায় আমিও যুক্ত। তাই বাড়িতে গিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছি। এমনটা ঘটলে তা আমার পরিজনদের পক্ষেও মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে উঠবে।’’

ওই ছাত্রের পাশে দাঁড়ানো আর এক ছাত্র বললেন, ‘‘কাউকেই বোঝাতে পারছি না যে, ঘটনার কথা আমরা সে সময়ে জানতামই না। সবাই ভাবছেন, আমরা হয়তো কিছু লুকোচ্ছি। মনে হচ্ছে, এই হস্টেলে আমরা সকলেই যেন খুনি বা অপরাধী। এই মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে আর কত দিন কাটাতে হবে?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Student Death Jadavpur University Jadavpur University Hostel Students police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy