Advertisement
০৫ মে ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

‘গার্ডরেলের পরে কি ভোটার রুখতে পুলিশের লাঠি-বন্দুকও?’

ভোটারদের বুথে যেতে বাধা বা শাসানি-হুমকি এ রাজ্যের যে কোনও নির্বাচনে প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এ বার যে ভাবে নিউ টাউনে বুথের রাস্তা আটকাতে গার্ডরেল বসানো হয়েছিল, তা দেখে স্তম্ভিত স্থানীয়েরা।

An image of the guardrail

অবরুদ্ধ: গার্ডরেল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নিউ টাউনের এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা। ছবি: সুমন বল্লভ।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩ ০৮:১৫
Share: Save:

‘নিরাপত্তার স্বার্থে’ পুলিশের ব্যবহার করার গার্ডরেল দিয়ে নিউ টাউনে ভোটকেন্দ্রের রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছিল শনিবার। বিবি ব্লকে এ পি জে আব্দুল কালাম কলেজের ভোটকেন্দ্রটির চার দিকে কয়েক কিলোমিটার অংশ ঘিরে দেওয়া হয়েছিল গার্ডরেল দিয়ে। অভিযোগ, ভোটের দিন সকাল থেকে গার্ডরেল বসিয়ে ওই বুথে যাওয়ার রাস্তায় ভোটদাতা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন শাসকদল তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ সমর্থকেরা। সেখানে দেখা মেলেনি পুলিশকর্মীদের। এর পরেই বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গার্ডরেল দিয়ে আটকানো রাস্তা পুলিশ কেন খুলে দিল না, সেই প্রশ্ন তুলছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। ভোট লুটের অভিযোগ করে রবিবার বিকেলে নিউ টাউনের নাগরিকেরা একটি প্রতিবাদ মিছিলও বার করেন।

নিউ টাউন শহরে এ ভাবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনার পরে মুখে কার্যত কুলুপ এঁটেছে কমিশনারেট। বিধাননগর পুলিশের ডিসি (সদর) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা খবর পেয়ে পরে গার্ডরেল সরিয়ে দিয়েছিলাম।’’ যদিও শনিবার বিকেল পর্যন্ত ওই সব রাস্তায় দেখা গিয়েছিল, পুলিশের গার্ডরেল রাস্তা জুড়ে রয়েছে। তবে তখন সেখানে বহিরাগতদের জমায়েত ছিল না।

স্থানীয় নাগরিকদের একটি সংগঠন, ‘নিউ টাউন সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার ফ্রেটারনিটি’-র সম্পাদক সমীর গুপ্তের প্রশ্ন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকে শাসকদল ভোটারদের ভোটদানে বাধা দিল। এর পরে লোকসভা নির্বাচনের সময়ে কি নিউ টাউনে পুলিশের লাঠি, বন্দুকও ভোটারদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে?’’ নিউ টাউনের প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হওয়া বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শনিবার ভোট দিতে গিয়ে তাঁদের অধিকাংশকেই শাসানির মুখে পড়ে ফিরে আসতে হয়।

ভোটারদের বুথে যেতে বাধা বা শাসানি-হুমকি এ রাজ্যের যে কোনও নির্বাচনে প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এ বার যে ভাবে নিউ টাউনে বুথের রাস্তা আটকাতে গার্ডরেল বসানো হয়েছিল, তা দেখে স্তম্ভিত স্থানীয়েরা। সেই সব গার্ডরেলের কাছে ভোটার বা সংবাদমাধ্যম, কাউকেই ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি অনেক বেলা পর্যন্ত। ‘বহিরাগত’দের সেই দলে ছিলেন বাগুইআটির অশ্বিনীনগর এলাকার একটি বড় দুর্গাপুজোর আয়োজক এক তৃণমূল নেতাও। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, টুপি পরে ওই নেতাকে কার্যত ভোটারদের তাড়িয়ে দিতে দেখা যায়! নিউ টাউনের বাসিন্দাদের ফেসবুক পেজে তাঁর সেই ভিডিয়ো ইতিমধ্যে ছড়িয়েছে।

শহর নিউ টাউনে তৃণমূলের সিংহভাগ প্রার্থীই ছিলেন পার্শ্ববর্তী জ্যাংড়া-হাতিয়াড়া (২) পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। নিউ টাউনের অধিকাংশ বাসিন্দা নিরাপত্তারক্ষী বেষ্টিত বহুতল আবাসনে থাকেন। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থীরা সে ভাবে প্রচার করতে পারেননি বলেই বাসিন্দাদের দাবি। সূত্রের খবর, এর ফলে অপরিচিত জায়গায় ভোটারদের রাজনৈতিক মনোভাব আঁচ করতে পারেনি শাসকদল। কোন ভোটার কাকে ভোট দেবেন, তা আন্দাজ করতে না পারায় কাউকেই ভোটকেন্দ্রের আশপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না বলে শুক্রবার রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে খবর। সেই কারণে পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে বুথের রাস্তা আটকানোর ছক কষা হয়।

সূত্রের আরও খবর, ইকো পার্ক এলাকার একটি বহুতলে ওই রাতে রাজারহাট-গোপালপুর এবং রাজারহাট-নিউ টাউনের নেতাদের কয়েক জন গোপন বৈঠক সারেন শহর নিউ টাউনের ভোট বয়কটের পক্ষে থাকা কয়েক জন বাসিন্দার সঙ্গে। সেখানে গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানোর ছক কষেন এক দাপুটে তরুণ নেতা। যাঁকে ওই দিন এ পি জে কলেজের চারপাশে লোকজন নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। তিনি অবশ্য পরে জানান যে, তিনি ভোট দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভোটের অন্য কোনও যোগ নেই।

ভোটের দিন সকাল থেকে নিউ টাউনের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসিয়ে দেওয়া গার্ডরেল সরিয়ে রাস্তা খুলে দিতে পুলিশের তরফে তেমন তৎপরতা দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ। এ পি জে কলেজের ভিতরে ১২টি বুথ ওই ভাবে দখল করে নেওয়া হয় বলে শনিবারই অভিযোগ করেছিল সিপিএম। তাদের নেতা সপ্তর্ষি দেবের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশের সায় না থাকলে ওই ভাবে গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা আটকানো যায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE