একটা সময়ে পুজোয় যাতে গণ্ডগোল না হয়, তার জন্য আগে থেকেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করত পুলিশ। চলত বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্তের জন্য তল্লাশি অভিযানও। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ছবিটা ঠিক উল্টো। পুজোর আগে আলাদা ভাবে দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার তো হচ্ছেই না, উল্টে পুজোর মরসুমেও চলছে দেদার গুলি। পুলিশ যতই বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করার কথা বলুক, তার আসল চিত্রটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে শহরে পরপর গুলি চালানোর ঘটনাতেই। এক পুলিশকর্তার মতে, শহরে কত পরিমাণ বেআইনি অস্ত্র রয়েছে, তার ঠিক হিসেব পুলিশের কাছেই নেই। বস্তুত পুলিশের আইনি অস্ত্রের থেকে শহরের ঘরে ঘরে অনেক বেশি বেআইনি অস্ত্র মজুত আছে বলে মনে করছে পুলিশকর্তাদের একাংশ।
তারই নমুনা ফের পাওয়া গেল বুধবার তিলজলা রো়ডে ফের গুলি চলার ঘটনায়। আগেও কড়েয়া থানার তিলজলা রোডে চলেছিল গুলি। ওই দুষ্কৃতী দলে ছিলেন এক জন তরুণীও। ঘটনাটির রেশ কাটতে না কাটতেই বুধবার রাতে ফের গুলি চলল তিলজলা থানার তিলজলা রোডে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বুধবার গুলি চালানোর ঘটনার সূত্রপাত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপুজোর ভাসানের সময়ে। ওই দিন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা পেশায় জমি-বাড়ির দালাল রাজেশ সিংহের সঙ্গে গণ্ডগোল হয় স্থানীয় আর এক যুবক রবি দাসের। দাদাকে বাঁচাতে গিয়ে সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন রাজেশ সিংহের ভাই অমিত সিংহও। রবি তখনই তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
বুধবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ পাঁচ-ছ’জন যুবককে নিয়ে এলাকায় রাজেশ ও অমিতের বাড়ির সামনে আসে রবি। অমিতকে ফোন করে এলাকায় ডাকে সে। অমিত সেখানে পৌঁছলে তাঁর সঙ্গে বচসা শুরু করে দেয় রবি ও তার দলবল। এর মধ্যেই পাশে নিজের ঘরে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে রবি সরাসরি অমিতকে লক্ষ্য করে পরপর চার রাউন্ড গুলি চালায়। তবে অমিত নীচে বসে পড়ায় সেই গুলি তাঁর গায়ে লাগেনি। এর পরেই রবি দলবল নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তবে এ দিন স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই কর্তব্যরত তিলজলা থানার পুলিশকর্মীরা তাড়া করেন দুষ্কৃতীদের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিলজলার লালমাঠের কাছে শ্রীধর রায় রোড থেকেই পাঁচ জনের মধ্যে তিন দুষ্কৃতীকে তাড়া করে ধরে ফেলেন। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রবি দাস, শেখ ইরফান আলি এবং শেখ আনসার আলি। উদ্ধার হয়েছে ম্যাগাজিন-সহ দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১০টি কার্তুজ। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে দু’টি ফাঁকা কার্তুজের খোল উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে
হাজির করানো হলে বিচারক ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
তবে এলাকায় পরপর গুলি চলতে থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছ়ড়িয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। বস্তুত দু’মাসের মধ্যে এই নিয়ে ছ’বার গুলি চলল শহরে। স্থানীয় এক বাসিন্দা চরণ সাউয়ের কথায়, ‘‘রোজই দেখছি এ দিকে-ও দিকে গ্যাং ওয়্যার হচ্ছে, গুলি চলছে। এ ভাবে চললে তো এলাকায় সন্ধ্যার পরে চলাফেরাই মুশকিল হয়ে যাবে।’’ তাঁর দাবি, পুলিশ কিছুই জানে না, এটা তো হতে পারে না। পুলিশের প্রশ্রয়েই এতটা সাহস পেয়েছে দুষ্কৃতীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy