Advertisement
E-Paper

মেট্রোর নীচে আগুন, অসুস্থ তিন যাত্রী

বৃহস্পতিবার সকালে সদ্য কারশেড থেকে বেরোনোর পরেই দমদম স্টেশনে যে ভাবে একটি নন-এসি রেকের নীচে আগুন জ্বলে উঠেছে, তাতে মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই আবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, তা হলে কি দিনের পর দিন তাঁদের অনিশ্চিত যাত্রার দিকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৩
আতঙ্কিত: যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়া এক তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার, দমদম স্টেশনে। ছবি: সৌরভ দত্ত

আতঙ্কিত: যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়া এক তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার, দমদম স্টেশনে। ছবি: সৌরভ দত্ত

কোন রেক যে কখন বিগড়ে যাবে, সেটাই এখন চিন্তা মেট্রোকর্তাদের।

বৃহস্পতিবার সকালে সদ্য কারশেড থেকে বেরোনোর পরেই দমদম স্টেশনে যে ভাবে একটি নন-এসি রেকের নীচে আগুন জ্বলে উঠেছে, তাতে মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই আবার বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যাত্রীদের প্রশ্ন, তা হলে কি দিনের পর দিন তাঁদের অনিশ্চিত যাত্রার দিকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না? এ দিনের ঘটনার পরে ভুক্তভোগী এক যাত্রীকে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘দরকারে মেট্রো বন্ধ রেখে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করুন। কিন্তু রোজকার এই আতঙ্কের যাত্রা বন্ধ হোক।’’

মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভ্যেস মতোই রেকটিকে পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে দায় সেরেছেন। কেন এবং কী ভাবে ওই নন-এসি কামরার নীচে আগুন ছড়িয়ে পড়ল, তার কোনও সদুত্তর মেট্রোকর্তারা দিতে পারেননি। এ দিন মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনার মিনিট দশেকের মধ্যেই যাত্রীদের বার করে আনা সম্ভব হয়েছে। দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। রেকটিকে নোয়াপাড়া কারশেডে নিয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।’’

মেট্রো সূত্রের খবর, পরিস্থিতি এমনই যে, রক্ষণাবেক্ষণের সময়েও সব রেকের ত্রুটি ধরা পড়ছে না। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া তিন দশকের পুরনো রেকগুলিতে সতর্কতামূলক রক্ষণাবেক্ষণের কোনও প্রযুক্তিও নেই বলে অভিযোগ মেট্রোর আধিকারিকদের। ফলে রাতে কারশেডে ট্রেনগুলিকে নির্দিষ্ট লাইনে কয়েক বার আগুপিছু করানোর

পরে কোনও অস্বাভাবিকতা পাওয়া না গেলেই চলার উপযুক্ত বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। মাসখানেক আগে

ময়দান স্টেশনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাতেও এই বিষয়টিই সামনে এসেছে। ভিতরের কোনও যন্ত্রাংশ বিকল হতে চলেছে কি না, তা আগাম বোঝার মতো কোনও প্রযুক্তি মেট্রোর পুরনো রেকগুলিতে নেই। ময়দানের ঘটনায় থার্ড রেল কানেক্টর খুলে যাওয়া ট্রেনটি কী ভাবে চলার শংসাপত্র পেয়েছিল, তা নিয়ে স্বয়ং রেলওয়ে সেফটি কমিশনারও প্রশ্ন তুলেছেন বলে খবর। মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য সব কিছুই তদন্তাধীন জানিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

কী ঘটেছিল এ দিন?

মেট্রো সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ১০টা ৫৪ মিনিটে দমদম স্টেশনের ডাউন প্ল্যাটফর্মে কবি সুভাষমুখী একটি নন-এসি রেক এসে থামে। ট্রেনটি দমদম থেকে যাত্রী তুলে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে আচমকা একেবারে পিছনের গার্ডের কামরার সামনের দিকে একটি দরজার নীচে আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখেন প্ল্যাটফর্মে থাকা লোকজন। ট্রেনটি তখন সবে গতি বাড়াতে শুরু করেছে। তিনটি কামরা প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে বেলগাছিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই পিছনের দু’টি লাগোয়া কামরায় ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ।

যাত্রীদের হট্টগোলের মধ্যে বিষয়টি কর্তব্যরত গার্ড ও চালকের নজরে আসায় সঙ্গে সঙ্গে আপৎকালীন ব্রেক কষে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে পিছনের কামরা থেকে গার্ড বেরিয়ে এসে দ্রুত প্ল্যাটফর্মের দিকে থাকা কামরার দরজাগুলি একে একে খুলে দেন। কিন্তু সামনের দিকের কয়েকটি কামরা প্ল্যাটফর্মের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে দরজা খোলার উপায় ছিল না। তাতে যাত্রীদের উদ্ধারে কিছুটা সময় লাগে। দমকলেও খবর দেওয়া হয়। দু’টি ইঞ্জিন আসে। তবে তারা কাজ শুরু করার আগেই রেকের নীচের আগুন আয়ত্তে চলে আসে। ওই ঘটনার জেরে প্রায় ২০ মিনিট মেট্রো চলাচল ব্যাহত হয়।

যাত্রীদের হুড়োহুড়িতে ওই ট্রেনের সামনের দিকের কামরার তিন জন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে বছর একুশের এক তরুণীর শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় তাঁকে মেট্রো স্টেশনেই অক্সিজেন দিতে হয়। পরে কলকাতা পুলিশের ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয়। হাসনাবাদের বাসিন্দা মোনালিসা আখতার নামে ওই তরুণীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তবে তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। কাঁকিনাড়া ও রানাঘাটের বাসিন্দা অন্য দুই মহিলা যাত্রীকে দমদম স্টেশনে প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মেট্রো সূত্রের খবর, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই রেকটির মেয়াদ বহুদিন আগেই ফুরিয়েছে। সম্প্রতি মেট্রোয় দিন-পিছু ট্রেনের সংখ্যা ৩০০ থেকে কমিয়ে ২৮৪ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই।

Fire Kolkata Metro Sick Dumdum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy