অবসর গ্রহণের দিন দ্রুত মামলার মীমাংসার নজির বজায় রাখলেন আলিপুর আদালতের ১৭তম অতিরিক্ত দায়রা বিচারক বিদ্যুৎকুমার রায়। আদালত সূত্রের খবর, শনিবার ছিল তাঁর অবসর গ্রহণের দিন। সেই দিনই আত্মহত্যার প্ররোচনার একটি মামলায় অভিযুক্ত চার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করেন তিনি। এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া মাত্র এক মাসের মধ্যে শেষ করে এ দিন রায় ঘোষণা করেন তিনি, যাতে তাঁর অবসরের পরে ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত না হয়।
প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারক আলিপুরে বদলি হয়ে আসেন। এর পরে একাধিক মামলার দ্রুত শুনানি প্রক্রিয়া করে সাজা ঘোষণা করেন তিনি। আদালত সূত্রের খবর, ২০২২ সালের অক্টোবরে গল্ফ গ্রিন থানার বিজয়গড়ে দেবাংশু বসু নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করেন, তাঁর স্বামীর থেকে ৩০ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া হলেও তা পরিশোধ না করায় দেবাংশু নিজেও ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর জেরে মানসিক অবসাদ থেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, দেবাংশুর ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোটেও দীপশিখা নাগ, তাঁর বাবা মানিকলাল নাগ, মা মীনাক্ষ্মী নাগ এবং মাসি শুভলক্ষ্মী ঘোষ তাঁর আত্মহত্যার জন্য দায়ী বলে লেখা ছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, দেবাংশুর থেকে ওই চারজন কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিলেও তা পরিশোধ করেননি। তাই মানসিক অবসাদে আত্মহত্যা করেন দেবাংশু। যদিও অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার আদালতে দাবি করেন, ‘‘দেবাংশু ঋণগ্রস্ত ছিলেন, অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন। ওই চার জনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কারণে কোনও অবসাদ হয়নি।’’ এর পরে বিচারক এক মাসের মধ্যে ওই মামলার চার্জ গঠন করেন। ৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করার পরে এ দিন ৪০ পাতার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।
বিচারকের পর্যবেক্ষণ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও সুস্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ তদন্তকারী ও সরকারি আইনজীবী পেশ করতে না পারায় তাঁদের মামলা থেকে খারিজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিচারকের পর্যবেক্ষণ, নিম্ন মানের তদন্ত প্রক্রিয়া হয়েছে। কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীকে আদালতে পেশ করাই হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘মামলার গভীরে গিয়ে তদন্তের উল্লেখযোগ্য তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করতে ব্যর্থ তদন্তকারীরা।’’
অভিযুক্তদের আইনজীবী প্রশান্ত বলেন, ‘‘ওই মামলায় চার জনকে গ্রেফতার করে প্রায় ২৭ দিন জেল হেফাজতে রাখা হয়েছিল। পরে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)