E-Paper

অঙ্কে আনাড়ি মেয়ের হাতে মহাকাশে স্পর্ধার নিশান

আমেরিকান দূতাবাসের উদ্যোগে ভারত সফরে আসা উজ্জ্বল চোখমুখের মেধাবিনী স্টেমবোর্ড সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা-সিইও। আমেরিকার সুবিধাবঞ্চিত ঘরের ৪০ ছুঁই ছুঁই মেয়ে শূন্য থেকে শুরু করে দেশের অন্যতম গতিশীল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৫২
ভারত সফরে এসে কলকাতায় আইশা বো। সোমবার।

ভারত সফরে এসে কলকাতায় আইশা বো। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।

মর্নিং শোজ় দ্য ডে!

সকালটাই বলে দেয়, দিন কেমন কাটবে! চেনা ইংরেজি আপ্তবাক্যটি ডাহা ভুল প্রমাণ করে ছেড়েছেন তিনি। আমেরিকার শ্রমজীবী পরিবারের কালো মেয়ে আইশা বো হাসছিলেন, “আমায় তো ইস্কুলে সক্কলে বলত, তোর অঙ্কে মাথা নেই! তুই বরং বিউটিশিয়ান হ’! আমিও ভাবিনি নাসার রকেট বিজ্ঞানী থেকে এক দিন নভশ্চর হওয়ার পথে পা বাড়াব।”

আমেরিকান দূতাবাসের উদ্যোগে ভারত সফরে আসা উজ্জ্বল চোখমুখের মেধাবিনী স্টেমবোর্ড সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা-সিইও। আমেরিকার সুবিধাবঞ্চিত ঘরের ৪০ ছুঁই ছুঁই মেয়ে শূন্য থেকে শুরু করে দেশের অন্যতম গতিশীল বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। নিজে বিমানপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার। খুদে উপগ্রহ তৈরির কৃৎকৌশলেও দুরস্ত। ইংক পত্রিকার ‘ইয়োর নেক্সট মুভ’ শো-টির সৌজন্যে সারা বিশ্বে বক্তা হিসাবেও বিস্তর নামডাক মিশিগানের মেয়ের। আমেরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ কন্যা হিসাবে ব্লু অরিজিন সংস্থার নভশ্চর হয়ে উড়ানের আগেই আইশার চমকপ্রদ জীবন নানা ওটিটি মাধ্যমের কাহিনি হয়ে উঠেছে। দিল্লি, মুম্বই হয়ে কলকাতায় এসে শহরের স্কুলপড়ুয়াদের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। সোমবার বিকেলে কফিযোগে আলাপচারিতার আসরে বসে বার বার ছকে-বাঁধা ধ্যানধারণা ভাঙার কথা বলছিলেন।

তাঁর কথায়, “দেখো, বিউটিশিয়ানের কাজটাও আমার দারুণ লাগে! কিন্তু সম্ভব, অসম্ভবের ধারণাগুলো লক্ষ্মণরেখায় বেঁধে ফেলাটা পোষায় না!” ছোটবেলায় অঙ্ক, বিজ্ঞান ভাল লাগত না! তাই ধরে নেন, ও সব তাঁর জন্য নয়। ১৮ বছর বয়সে কমিউনিটি কলেজে প্রি-অ্যালজেব্রা শিক্ষাক্রমে হঠাৎ খেয়াল হল, অঙ্ক তো আমিও পারি! সেই মেয়েই এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন। নাসায় ছ’বছর কাটিয়েছেন। বিমান প্রযুক্তি নিয়ে জার্নালে বিস্তর লেখালিখি তাঁর।

নিজের দেশের ভাবনার দৈন্য নিয়েও বলতে কসুর করলেন না মিশিগানের কৃষ্ণকলি। “আমি যা হয়েছি, তা অর্জন করেও টের পেয়েছি, লোকে ভাবছে আমি এই জায়গাটার যোগ্য নই! ওরা তো আমার মতো কাউকে দেখেনি বা আমার মতো কারও সঙ্গে কাজ করেনি। তাই আকছার ধরে নিত, অমুক কাজটা আমি ভুল করছি। বাচ্চারাও অনেক সময়ে বিশ্বাস করত না, আমি ইঞ্জিনিয়ার।” সেটা ছিল প্রাক্‌ ফেসবুক বা প্রাক্‌ ইনস্টাগ্রাম যুগ! আইশা বলছিলেন, “আমি কী, বোঝাতে নিজের ডিগ্রির কাগজ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতাম।”

তবে এই পরিস্থিতির জন্য ব্যক্তি মননকেও দোষ দেন আইশা। “ছোটরা কেন বিশ্বাস করবে না, তাদের জীবনে সেরাটা ঘটতে পারে! আমি একটা সময়ে বুঝি সব থেকে আনন্দের জীবন এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হয়েই কাটাতে পারব। সেটাই হয়েছি! নিজের জীবন থেকে শিখেই আমি সবাইকে ছক-ভাঙা রাস্তায় হাঁটতে বা অন্য দিগন্ত ছুঁতে স্বপ্ন দেখাই!” আমেরিকার ৭০০ নভশ্চরের মধ্যে কালো আমেরিকান মেয়ে এখনও হাতে গোনা। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী কন্যাও দুনিয়ায় জনা চারেক। আইশার মায়ের এখনও ঘোর আপত্তি এই স্পর্ধায়। কিন্তু তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ‘‘মেয়েদের নিয়ে মানসিক গাঁটটা ভাঙতে এটা আমায় করতেই হবে। ছোটদের বলব, কোনও অবস্থায় আত্মবিশ্বাস হারিয়ো না!’’

কম খরচে ভারতের মঙ্গল অভিযানে মুগ্ধ আইশা। নিজেকে বিশ্ব নাগরিক হিসাবেই দেখেন তিনি। মহাকাশের প্রসঙ্গে যতটা উত্তেজিত, কলকাতায় চাখা জীবনের প্রথম নারকেল নাড়ু নিয়েও তার কাছাকাছিই। সব মানুষ এখন এক সূত্রে গাঁথা বোঝাতে আইশা বললেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াইটাও আজ কোনও দেশ একা লড়তে পারে না।” আইশার মতে, সারা বিশ্বই
আবার সদর্থক নেতৃত্বের সঙ্কটে জেরবার। আমেরিকার আসন্ন ভোটে যথার্থ গণতান্ত্রিক নেতৃত্বই জিতুক, এটুকু আশা নিয়ে আড্ডা শেষ
করলেন আইশা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy