Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক দিন পার, দায়ের হল না অভিযোগ

বাঁশদ্রোণী থানার দক্ষিণ ব্রহ্মপুরের স্টিম লন্ড্রি মোড়ে একটি বাড়িতে শনিবার দুপুরে বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটিতে প্রচুর পরিমাণ বাজির মশলা মজুত ছিল।

পরিদর্শন: বিস্ফোরণস্থলে ফরেন্সিক দল। রবিবার, বাঁশদ্রোণীতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পরিদর্শন: বিস্ফোরণস্থলে ফরেন্সিক দল। রবিবার, বাঁশদ্রোণীতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০১:৪২
Share: Save:

বাড়িতে মজুত বাজির মশলা থেকে বিস্ফোরণের পরে কেটে গিয়েছে গোটা একটা দিন। কিন্তু এখনও বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগই দায়ের করতে পারল না দমকল। এমনকী লোকালয়ের মধ্যে দীর্ঘ দিন বাজি তৈরির কারবার চললেও পুলিশ কী করছিল, সেই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।

প্রসঙ্গত, বাঁশদ্রোণী থানার দক্ষিণ ব্রহ্মপুরের স্টিম লন্ড্রি মোড়ে একটি বাড়িতে শনিবার দুপুরে বিস্ফোরণ ঘটে। বাড়িটিতে প্রচুর পরিমাণ বাজির মশলা মজুত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, বাজি তৈরি করা হলেও দমকলের লাইসেন্স ছিল না। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও বাড়ির মালিক সঞ্জীব গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

রবিবার ফরেন্সিক বিশেজ্ঞেরা বাড়িটিতে গিয়ে একাধিক নমুনা সংগ্রহ করেন। ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী মীর ওয়াসিম রাজা বলেন, ‘‘ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর রাসায়নিক মিলেছে। সেগুলি পরীক্ষাগারে পাঠানো হচ্ছে।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া বাড়িটির এক পাশে পড়ে আছে প্রচুর তুব়ড়ির খোল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, পাঁচ বছর ধরে তুবড়ি, রংমশাল, ফুলঝুরি তৈরি হত ওই বাড়িতে। নিযুক্ত ছিলেন পাঁচ-ছ’জন কর্মী। তাঁদের মধ্যে দু’জন চম্পাহাটির।

ওই বাড়ি লাগোয়া দুই প্রতিবেশীর বাড়িও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জন, হিমাংশুদে-র বাড়ির জানলা দিয়ে আগুনের ফুলকি ঢুকে পুড়ে গিয়েছে বিছানার চাদর। বিকল হয়ে গিয়েছে দুই প্রতিবেশীর বাড়ির টিভি, ফ্যান। হিমাংশুবাবু বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে সঞ্জীব আমাদের বলেছিল, দমকলের থেকে যাবতীয় অনুমতি নিয়েই কাজ করছে!’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাজি তৈরি হচ্ছে অথচ পুলিশ জানল না, এটা তাদের বড় ব্যর্থতা।’’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘পুলিশ কেন এত দিন সঞ্জীবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? দীর্ঘ দিন ধরে বেআইনি কাজ চলছে, অথচ তা পুলিশেরই নজর এড়িয়ে গেল?’’

ঘটনার পর পরই দমকলকর্মীরা প্রায় দশ ড্রাম ভর্তি বাজির সামগ্রী পাশের পুকুরে ফেলেন। কিন্তুরবিবার রাত পর্যন্ত দমকলের তরফে স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের হল না কেন? দমকলের ডিজি জগমোহন বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দমকল সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা ছুটিতে থাকায় অভিযোগ দায়ের হয়নি। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পুলিশই বা কেন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করল না? ডিসি (এসএসডি) সন্তোষ নিম্বলকর রবিবার রাতে বলেন, ‘‘পুড়ে যাওয়া বাড়িটিতে দাহ্য পদার্থ মজুত থাকায় দমকলের তরফেই প্রথম অভিযোগ করার নিয়ম। তাদের তরফে এখনও পর্যন্ত অভিযোগ হয়নি। তা না হলে সোমবার পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করবে।’’

আইন অনুযায়ী, অবৈধ ভাবে বাড়িতে বিস্ফোরক সামগ্রী মজুত রাখলে অভিযুক্তের ১০ বছর পর্যন্ত জেল হওয়ার কথা। আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাজি তৈরি কখনও অনুমোদন পেতে পারে না। বাঁশদ্রোণীতে অনুমতি ছা়ড়া বাজি তৈরি হলে পুলিশ কী করছিল?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE