E-Paper

প্রৌঢ়াকে গাড়িতে তুলে অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ, গ্রেফতারি শূন্য

মহিলার দাবি, ঘটনার পরে কাছেই কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মী ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল মানিকতলা থানার অন্তর্গত হওয়ায় সেখানে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রৌঢ়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:১৬
মহিলাকে মারধর, যৌন নিগ্রহ, হুমকি, ছিনতাইয়ের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় পুলিশ একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।

মহিলাকে মারধর, যৌন নিগ্রহ, হুমকি, ছিনতাইয়ের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় পুলিশ একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। —প্রতীকী চিত্র।

মাঝরাস্তায় গাড়ির পথ আটকেছিল একটি মোটরবাইক। গাড়ি ঘিরে ধরে অন্তত ১০-১২ জন। তাদের মধ্যে এক জন গাড়িচালককে মারতে মারতে নামিয়ে নিজে স্টিয়ারিংয়ে বসে। এর পরে চালকের আসনের পাশে বসা মহিলার সঙ্গে শুরু হয় অভিযুক্তদের ধস্তাধস্তি। চলে গালিগালাজ। সেই সঙ্গে হুমকি, ‘আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে।’ বাধা দিতে গেলে মার খান মহিলার সত্তরোর্ধ্ব দাদাও। দিনের ব্যস্ত সময়ে খাস কলকাতার উল্টোডাঙা মেন রোডে তাঁর সঙ্গে এমনই ঘটেছে বলে পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেছেন নিরুপমা সাহা নামে ষাটোর্ধ্ব ওই মহিলা।

মহিলার দাবি, ঘটনার পরে কাছেই কর্তব্যরত ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মী ছুটে এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল মানিকতলা থানার অন্তর্গত হওয়ায় সেখানে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন প্রৌঢ়া। মহিলাকে মারধর, যৌন নিগ্রহ, হুমকি, ছিনতাইয়ের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় পুলিশ একটি মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। যদিও অপহরণের চেষ্টার কোনও ধারা এ ক্ষেত্রে কেন দেওয়া হল না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে অভিযোগকারিণীর তরফে। রবিবার রাত পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি।

সূত্রের খবর, বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে গাড়িতে করে মুদিখানার সামগ্রী রফতানির ব্যবসা করছেন নিরুপমা। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সূত্রপাত গত ২ এপ্রিল। ওই দিন কাজ সারতে সারতে দুপুর তিনটে নাগাদ নিরুপমা উল্টোডাঙা মেন রোড ধরে যাচ্ছিলেন। সেখানেই এক জায়গায় একটি মোটরবাইক তাঁর ছোট মালবাহী লরির পথ আটকায়। সেই সময়ে গাড়িতে ছিলেন নিরুপমা এবং তাঁর দাদা সুনীল। অন্য একটি গাড়িতে আরও কয়েক জন এসে নিরুপমার গাড়ি ঘিরে ধরেন বলে অভিযোগ।

এর পরে অভিযুক্তদের মধ্যে এক জন নিরুপমার গাড়িচালককে মারতে মারতে নামিয়ে দেন। স্টিয়ারিংয়ে বসে ওই ব্যক্তি নিরুপমাকে পোস্তার দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন। নিরুপমার কথায়, ‘‘আমি চিৎকার করতে শুরু করলে ধাক্কা মারা হয়। অন্য গাড়ির কয়েক জন জোর করে আমাদের গাড়িতে উঠে পড়ে। আমাদের গাড়িটা ওই গাড়ির কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বহু বছর ধরে নুন আর চিনি রফতানির কাজ করছি। আমাদের গাড়ি থেকে ওই সব সামগ্রী নামিয়ে অন্য গাড়িতে তুলতে শুরু করে ওই যুবকেরা। আমি রাস্তায় নেমে চিৎকার শুরু করলে কাছেই থাকা এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী এসে আমাদের বাঁচান।’’

নিরুপমার দাবি, গোটা ঘটনা ঘটিয়েছেন গোপাল সাহা নামে এক ব্যক্তি। ২০২২-’২৩ সালে ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নুন, চিনি নিয়ে রফতানির ব্যবসা করেন নিরুপমা। কিন্তু হিসাবে গরমিল করায় গোপালের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে দেন তিনি। অভিযুক্ত যুবকেরা গোপালেরই পাঠানো, অভিযোগ নিরুপমার। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গোপাল তাঁকে ফোন করে পোস্তায় তাঁর কারখানায় চলে আসার জন্য বলেন। প্রৌঢ়ার বক্তব্য, ‘‘আসলে গোপালের থেকে জিনিস না কিনলে আমায় ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে আগে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।’’

নিরুপমার আরও অভিযোগ, ‘‘ওই ঘটনার পরে আমি আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ি। ৪ এপ্রিল মানিকতলা থানায় যাই অভিযোগ দায়ের করতে। ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশ এফআইআর রুজু করেনি। অনেক অনুরোধ করার পরে তবে এফআইআর নেওয়া হয়েছে। যদিও সাধারণ কয়েকটি ধারা দিয়ে মামলা করা হয়েছে। কাউকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা হয়নি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ওই লোকের সঙ্গে পুলিশের ভাল রকম যোগাযোগ রয়েছে। সম্ভবত সেই কারণে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।’’

এ দিন অভিযুক্ত ব্যবসায়ী গোপালের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে উত্তর কলকাতার বড় অংশের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পেয়েছি। আমার থেকে সামগ্রী না নিয়ে ব্যবসা করলে যাঁরা আমার অধীনে কাজ করছেন, তাঁদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটাই ওঁকে বোঝানো হয়েছিল। তা ছাড়া, ব্যবসা করে ওই মহিলা ৩ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকার দেনা করেছিলেন আমার কাছে। দু’লক্ষ টাকা মেটালেও আর দিতে পারছিলেন না। সেই ব্যাপারেই কথা বলতে ওঁকে লোক পাঠিয়ে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু উনি না এসে থানায় গিয়ে মামলা করেছেন বলে শুনেছি।’’

অভিযোগকারী প্রৌঢ়ার যদিও দাবি, সমস্ত টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নথি রয়েছে তাঁর কাছে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক। মানিকতলা থানার তরফে দাবি করা হয়েছে, নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

torture Maniktala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy